এই সিনার্জি কমিটির চেয়ারম্যান রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছেন, ‘‘মাসে দু’বার করে কমিটির পর্যালোচনা বৈঠক হয়। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে যে যে শিল্প প্রস্তাব এসেছিল সেই শিল্প প্রস্তাবগুলির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা বা বিনিয়োগের বাধা কী কী রয়েছে, সেগুলিকে নির্ণয় করা এবং সেই অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ করাই এই কমিটির মূল কাজ।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ও রাজ্য অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র জানান, মূলত ইস্পাত, জেমস ও জুয়েলারি, তথ্যপ্রযুক্তি ও সেমিকন্ডাক্টর, খাদ্য সংক্রান্ত শিল্প, পর্যটন এবং ওষুধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত শিল্প ক্ষেত্রকে ফোকাস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই সাতটি শিল্প ক্ষেত্রে মূলত যে বিষয়গুলি বিচার্য, তা হল শিল্পগুলির বিকাশ, কর্মসংস্থান, রফতানি ক্ষেত্রে ক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে সুবিধা এবং আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা।
advertisement
এই যাবতীয় বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে যে সাতটি ক্ষেত্রকে রাজ্যের শিল্প বিকাশে ফোকাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই শিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং সেগুলির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাজের অগ্রগতি কতটা হয়েছে তা বিস্তারিত জানতে এবং জানাতে পুজোর পরে এই বিশেষ শিল্প সংক্রান্ত এনক্লেভ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অমিত মিত্র।
ইতিমধ্যেই রাজ্যে পাঁচটি সুসংগত স্টিল প্লান্ট তৈরি হতে চলেছে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যেখানে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে বলেও আগেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে জেমস ও জুয়েলারি ক্ষেত্রে রফতানি বাবদ আয় ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভবিষ্যতে এই টার্গেট আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে মূলত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টরের উপরে। এছাড়াও আর্থিক প্রযুক্তি পার্ক তৈরির ক্ষেত্র বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুধ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মাছ ও চিংড়ির রফতানির ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এই বৈঠকে।
পর্যটনের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব পেয়েছে রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ। মূলত বেশ কয়েক বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গের প্রাকৃতিক পর্যটন রাজ্যের কোষাগারকে যথেষ্ট বিত্তবান করেছে। সেদিকে নজর রাখার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় পর্যটনকেও বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন নবান্ন। পাশাপাশি রেডিমেড জামাকাপড় ও ফেব্রিক তৈরির ক্ষেত্রেও আসন্ন শিল্প কনক্লেভের কথা মাথায় রেখে গুরুত্ব দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে বর্তমানে ১৮১ মিলিয়ন কেজি ফেব্রিক তৈরি হচ্ছে যার মধ্যে ৫ কোটি মিটার ফেব্রিক তৈরি হয় স্কুল ইউনিফর্মের জন্য।
এর জন্য রাজ্যে ১৫০০ পাওয়ার লুম তৈরি করা হয়েছে। এই স্কুল ইউনিফর্ম তৈরি করার বরাত দেওয়া হয় রাজ্যের মহিলাদের পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। যেখানে ছয় কোটি শ্রম দিবস ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন অমিত মিত্র। একইসঙ্গে তিনি জানান রাজ্যে প্রতি বছর ৫০০ মিলিয়ন রেডিমেড জামাকাপড় তৈরি হয়। যেটাও যথেষ্ট সম্ভাবনার ক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে এই সাতটি ক্ষেত্রের সম্ভাবনাকে পুঁজি করে পুজোর পরে বিশেষ শিল্প সংক্রান্ত কমপ্লেনের ব্যবস্থা অনুষ্ঠিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। যেখানে পরবর্তী বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মানদণ্ড তৈরি করার কাজে আরও একধাপ এগিয়ে থাকতে চায় নবান্ন।