কেন্দ্রীয় বাজেট বা ইউনিয়ন বাজেট: সংবিধানের ধারা ১১২-র অধীনে আনুমানিক প্রাপ্তি এবং খরচের একটি স্টেটমেন্ট, যাকে বলা হয় অ্যানুয়াল ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট। প্রতি আর্থিক বছরের এই স্টেটমেন্ট পেশ করা হয় সংসদে। এই স্টেটমেন্টই আসলে মূল বাজেট নথি। এটা আসলে আর্থিক বর্ষের শেষ অর্থাৎ ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের সরকারের রাজস্ব এবং ব্যয়ের হিসেব।
advertisement
কেন্দ্রীয় বাজেট হল সরকারের আর্থিক বিষয়ের সবথেকে নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট। যেখানে সমস্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব এবং সমস্ত কার্যকলাপের জন্য ব্যয় একত্রিত করা হয়। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তী অর্থবর্ষের জন্য সরকারের আর্থিক হিসেবও থাকে এতে। যাকে বাজেটেড এস্টিমেটস বলা হয়।
ক্যাপিটাল বাজেট: ক্যাপিটাল বাজেটের মধ্যে থাকে ক্যাপিটাল রিসিট এবং পেমেন্ট। ক্যাপিটাল রিসিট-এর অর্থ হল জনগণের কাছ থেকে তোলা সরকারি ঋণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সরকারি ঋণ, ট্রেজারি বিল, পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজে ইক্যুইটি হোল্ডিং অপসারণ, বিদেশের সরকারের থেকে গৃহীত ঋণ, স্মল সেভিংসের বিপরীতে সিকিউরিটিজ, স্টেট প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং স্পেশাল ডিপোজিট।
আর ক্যাপিটাল পেমেন্ট হল ক্যাপিটাল প্রোজেক্টের নির্মাণ এবং জমি, বাড়ি, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির মতো সম্পত্তির অধিগ্রহণ সংক্রান্ত খরচ। এর মধ্যে শেয়ারে বিনিয়োগ এবং কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, সরকারি কোম্পানি, কর্পোরেশন এবং অন্যান্য পক্ষকে প্রদত্ত ঋণ এবং অগ্রিম থাকে।
রেভেনিউ বাজেট বা রাজস্ব বাজেট: রেভেনিউ বাজেটের মধ্যে পড়ছে সরকার দ্বারা গৃহীত রেভেনিউ রিসিট বা রাজস্ব রসিদ এবং সেই রাজস্ব থেকে মেটানো ব্যয়। সরকার যে ট্যাক্স বা কর এবং অন্যান্য যা কিছু সংগ্রহ করে, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে রাজস্ব রেভেনিউ বা ট্যাক্স রেভেনিউ।
ফিসক্যাল ডেফিসিট বা রাজকোষ ঘাটতি: সরকারের রাজস্ব এবং ব্যয়ের মধ্যে যে শূন্য স্থান রয়েছে, তাকেই সাধারণত রাজকোষ ঘাটতি বা ফিসক্যাল ডেফিসিট হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমান আর্থিক বর্ষের সরকারের জন্য এপ্রিল-নভেম্বরের ভারতের রাজকোষ ঘাটতি বা ফিসক্যাল ডেফিসিট অর্থবর্ষ২৩-এর লক্ষ্যমাত্রার ৫৮.৯ শতাংশ বিস্তৃত হয়েছে।
প্রাথমিক ঘাটতি বা প্রাইমারি ডেফিসিট: ফিসক্যাল ডেফিসিট থেকে ইন্টারেস্ট পেমেন্ট বাদ দিলে যে পরিমাণ হয়, সেটাকেই মূলত প্রাইমারি ডেফিসিট বা প্রাথমিক ঘাটতি হিসেবে গণ্য করা হয়। ইন্টারেস্ট পেমেন্টের মতো খরচ ছাড়াও অন্যান্য খরচ পরিশোধ করার জন্য সরকার কত পরিমাণ ধার নেবে, সেটাই ইঙ্গিত করে প্রাইমারি ডেফিসিট।
ফিনান্স বিল বা আর্থিক বিল:নতুন ট্যাক্স বা কর আরোপ, বর্তমান কর কাঠামোর পরিবর্তন বা বর্তমান কর কাঠামো অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের প্রস্তাবগুলি এই বিলের মাধ্যমে সংসদে পেশ করা হয়েছে। এ-ছাড়াও ফিনান্স বিলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করের প্রস্তাবিত সংশোধনী রয়েছে।
প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর: ব্যক্তি এবং কর্পোরেশনের আয়ের উপর প্রত্যক্ষ কর আরোপ করা হয়। আবার উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স, কর্পোরেট কর ইত্যাদির মতো পরোক্ষ কর সাধারণত পরিশোধ করেন গ্রাহকরা। আসলে যখন গ্রাহকরা কোনও জিনিস কেনেন কিংবা পরিষেবা গ্রহণ করেন, তখন তাঁরা এর টাকা মেটান, সেটাই আসলে পরোক্ষ কর। এর মধ্যে পড়ে আবগারি শুল্ক বা এক্সাইজ ডিউটি, শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি ইত্যাদি।
সেন্ট্রাল প্ল্যান আউটলে: অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টর এবং সরকারের মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আর্থিক উৎসের বরাদ্দকে বোঝায়।
পাবলিক অ্যাকাউন্ট: প্রভিডেন্ট ফান্ড, স্মল সেভিংস কালেকশন সংক্রান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে সরকার ব্যাঙ্কার হিসেবে কাজ করে। ব্যাঙ্কিং জাতীয় কাজ থেকে সরকার যে ফান্ড পায়, তা সাধারণ ভাবে পাবলিক অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। যেখান থেকে সম্পর্কিত বন্টন করা হয়। এই তহবিল কিন্তু সরকারের নয়। এটা সাধারণত যাদের অর্থ, তাদেরকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অ্যাড-ভ্যালোরেম ডিউটি: এটি পণ্যের মূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হিসাবে নির্ধারিত শুল্ক।
পেমেন্টের ব্যালেন্স বা ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট: বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে দেশের মুদ্রার চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য হল ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট।
বাজেট এস্টিমেট: এটি রাজস্ব এবং রাজস্ব ঘাটতির একটি আনুমানিক হিসেব। এটি আসলে আর্থিক বছরে কেন্দ্রের আনুমানিক ব্যয় এবং করের মাধ্যমে প্রাপ্ত আয়ের সঙ্গে যুক্ত।
ক্যাপিটাল রিসিট: বাজার থেকে কেন্দ্রের তরফে তোলা ঋণ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্যদের থেকে নেওয়া সরকারি ঋণ, ট্রেজারি বিলের বিক্রয় এবং বিদেশের সরকার থেকে গৃহীত ঋণের মাধ্যমেই সাধারণত ক্যাপিটাল রিসিট তৈরি হয়। কনসোলিডেটেড ফান্ডের অধীনে সরকার সমস্ত ফান্ড একত্রিত করে রাখে। এর মধ্যে পড়ে সরকারি রাজস্ব, আদায় করা ঋণ এবং অনুমোদিত ঋণ পুনরুদ্ধার।
আরও পড়ুন, আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ এই ৭ জনের কাঁধে, জানেন কি কারা তৈরি করছেন দেশের বাজেট?
আরও পড়ুন, বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি কিনলে মিলবে সুবিধা? বাজেট ঘিরে বাড়ছে প্রত্যাশা
কন্টিনজেন্সি ফান্ড: যে কোনও জরুরিকালীন অবস্থা বা এমার্জেন্সির জন্য এই ফান্ড ব্যবহার করা হয়। আসলে এই ধরনের পরিস্থিতি উপস্থিত হলে সংবিধানের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করার সময় থাকে না সরকারের হাতে। তখনই এই ফান্ড ব্যবহার করতে হয়। এই ফান্ড থেকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, সেটা আবার পরে ওই তহবিলে জমা করা হয়।
মানিটারি পলিসি বা মুদ্রানীতি: অর্থনীতিতে তারল্যের অর্থের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অথবা সুদের হার পরিবর্তন করার জন্য সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলির দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে এটি অন্তর্ভুক্ত।