মাদুরকাঠি চাষে বদলে গেছে গোটা গ্রামের অর্থনীতি। একসময় যেখানে জলই ছিল কৃষকের শত্রু, আজ সেই জলই হয়েছে সহায়। কনকপুর গ্রামের মাঠে এখন বিঘার পর বিঘা সবুজ মাদুরকাঠি দুলছে বাতাসে। আগে যেখানে ধান চাষে ক্ষতির হিসেব মেলানো যেত না, এখন সেখানে মাদুরকাঠি চাষ করে চাষিরা লাখ টাকারও বেশি লাভ করছেন। এক কৃষক নিমাই চরণ পাত্র বলেন, “আগে বর্ষা নামলেই ভয় লাগত। ফসল ভেসে যেত, ঘরে খাওয়ার ছিল না। এখন এই জমিতেই মাদুরকাঠি চাষ করে বছরে লাখ টাকা আয় হচ্ছে।”
advertisement
আরও পড়ুন: এত প্রচারের পরেও এত বড় ভুল! সাপের ছোবলে প্রাণ গেল যুবকের, ঠিক কী ঘটেছিল মেদিনীপুরে
এই ফসল দেখতে ঘাসের মতো হলেও বাজারে এর বানিজ্যিক চাহিদা প্রচুর। মাদুরকাঠি থেকে তৈরি হচ্ছে নানারকম মাদুর, ব্যাগ ও গৃহসজ্জার সামগ্রী। স্থানীয় পূর্ব মেদিনীপুরের বাজার ছাড়িয়ে এখন এই পণ্যের চাহিদা পৌঁছে গেছে কলকাতা ও ওড়িশার পাইকারি বাজার পর্যন্ত। মাদুরকাঠি চাষের জন্য জলবদ্ধ, কাদামাটিযুক্ত জমিই সবচেয়ে উপযুক্ত। সাধারণত ফাল্গুন মাসে বীজ বপন করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে চারা রোপণ করা হয়। মাঠে চার থেকে ছয় ইঞ্চি জল থাকলে এই ঘাস দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার ও সঠিক জলব্যবস্থাপনা বজায় রাখলে ছয় মাসের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তবে বিক্রির পর লাভ হয় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসেই চাষির হাতে আসে প্রায় ৬০ হাজার টাকার নিট মুনাফা।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পরিবেশবিদদের মতে, এই মাদুরকাঠি চাষ শুধু গ্রামীণ অর্থনীতিকেই নতুন দিশা দিচ্ছে না, বরং প্লাস্টিক মাদুরের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যে নদীর জলে একসময় সর্বনাশ হত, সেই নদীর তীরেই আজ সোনার ফসল ফলছে। কেলেঘাই নদীর তীরবর্তী কনকপুর গ্রাম আজ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সফল উদাহরণ, যেখানে বন্যার বুক চিরে ফুটেছে সোনার ফুল।





