ব্যবসায়ী আনন্দ মাহিন্দ্রাও এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকী, এ-ও মন্তব্য করেছেন যে, স্টার্ট-আপগুলির প্রচার করার ক্ষেত্রে আইআইটি মাদ্রাজ তো রীতিমতো সিলিকন ভ্যালিকে টক্কর দিচ্ছে। নয়া এই আবিষ্কার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে পোস্ট করেছেন তিনি। যা নিমেষের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ আনন্দ মাহিন্দ্রা পোস্ট করে লিখেছেন, “প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্যোগ সংক্রান্ত খবর পাওয়া যায়। আমাদের বিশাল জলপথগুলিকে কাজে লাগানোর অঙ্গীকারই শুধু আমার পছন্দ হয়নি, সেই সঙ্গে যানের নকশাও দারুণ লেগেছে আমার।”
এর আগে এরো ইন্ডিয়া ২০২৫-এ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হর্ষ রাজেশ জানান যে, “ইলেকট্রিক সি-গ্লাইডার ব্যবহার করে এই সফরকে সস্তা এবং আরও দ্রুত করা হবে। এটাই তাঁদের পরিকল্পনা। এটা আসলে উইং-ইন-গ্রাউন্ড (ডব্লিউআইজি) ক্র্যাফ্টস। যা জল থেকে টেক-অফ করে চার মিটার উচ্চতায় উড়তে উড়তে গন্তব্যে পৌঁছবে।”
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হর্ষ রাজেশ আরও জানিয়েছেন যে, “কলকাতা থেকে চেন্নাইয়ের ১৬০০ কিলোমিটার যাত্রা সিট প্রতি মাত্র ৬০০ টাকায় সম্পন্ন হবে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, এটা এসি থ্রি-টায়ার ট্রেনের টিকিটের থেকেও সস্তা।”
এই স্টার্ট-আপের আরও এক সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেশব চৌধরি আবার ব্যাখ্যা করলেন অনন্য এই কনসেপ্টের পিছনে থাকা বৈজ্ঞানিক যুক্তি। তিনি জানান যে, “বিশেষ এই এয়ারক্র্যাফ্ট জলের পৃষ্ঠতলের খুব কাছ দিয়ে উড়বে। যার ফলে গ্রাউন্ড এফেক্টের উপযোগিতা গ্রহণ করা হবে। এটা আসলে পাখার ঘর্ষণ কমিয়ে দেবে। এয়ার কুশনিংয়ের জেরে লিফটও বাড়বে। যার ফলে কম গতিতেও তা উড়তে সক্ষম থাকবে।”
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী একটি সাধারণ এয়ারবাস এ৩২০ অথবা বোয়িং ৭৩৭-এ সাধারণত ২.৫ থেকে ৩ টন অ্যাভিয়েশন টারবাইন ফুয়েল বা এটিফ লাগে। যার বর্তমান মূল্য প্রতি কিলোলিটারে ৯৫ হাজার টাকা। যদিও ওয়াটারফ্লাইয়ের সি-গ্লাইডার এই মূল্য অনেকটাই সাশ্রয় করবে। যার ফলে টিকিটের দামও হবে সস্তা।
কেশব চৌধরি আরও জানিয়েছেন যে, “একটি বিমানের তুলনায় এই নকশার উৎপাদন মূল্য উল্লেখযোগ্য ভাবে তম হবে। তাঁর ব্যাখ্যা, কারণ আমরা যেহেতু বেশি উচ্চতায় উড়ব না, তাই আমাদের কম বায়ুচাপের সঙ্গে লড়াই করতে হবে না। যার অর্থ হল, আমাদের এয়ারক্র্যাফ্ট শক্তিশালী ভাবে বানানোর প্রয়োজন হবে না। যা নির্মাণের খরচ অনেকটাই কমিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে এই এয়ারক্র্যাফ্টের ইঞ্জিনকে আবার চিরাচরিত বিমানের ইঞ্জিনের মতো শক্তিশালী না হলেও চলে যাবে। রানওয়ে শেষ হওয়ার আগেই বিমানকে টেক-অফ বা আরোহণ করতে হয়। কিন্তু আমাদের কাছে তো গোটা সাগরটাই রয়েছে। আমাদের জন্য রানওয়ে সীমাহীন। যা ইঞ্জিনের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ ফেলবে না।”
বর্তমানে এই প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এরো ইন্ডিয়াতে সংস্থার তরফে নকশা পেশ করা হয়েছে। ১০০ কেজি ওজনের প্রথম প্রোটোটাইপ কয়েক মাসের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা। ২০২৫ সালের শেষের দিকে এক টনের প্রোটোটাইপ উড়ানের প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কথা। ২০২৬-এর মধ্যে একটি ২০ সিটার মডেল তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা সংস্থার। এটি চেন্নাই থেকে কলকাতা যাবে। এই কাজের জন্য টাকা দিচ্ছে আইআইটি মাদ্রাজ। বর্তমানে প্রতিরক্ষা সেক্টর থেকে টাকা তুলতে চাইছে সংস্থা। পরে কার্গো শিপিং ও সারভেইল্যান্স অপারেশনে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে।
