জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় একাধিক প্রস্তাব সামনে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল গ্রিন ডিপোজিট। এটা হল বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ঋণদাতা কর্তৃক দেওয়া ফিক্সড টার্ম ডিপোজিট, যার অর্থ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে খরচ করা হয়।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, দূষণ প্রতিরোধ এবং জল প্রকল্পের খাতে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। গ্রিনহাউস নির্গমনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
advertisement
আরও পড়ুন : করোনার পর এবার টম্যাটো ফ্লু; আক্রান্ত শিশুরা! জেনে নিন বিশদে, সতর্ক থাকুন!
গ্রিন ডিপোজিটে বিনিয়োগ এই ধরনের প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ণে, সাহায্য করবে পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পারবেন। স্বল্প কার্বন, প্রাণবন্ত জলবায়ু এবং স্থিতিশীল অর্থনীতির প্রচার করতে পারে এমন ব্যবসা এবং প্রকল্পগুলিকে আর্থিক মদত যোগানোই গ্রিন ডিপোজিটের মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমানে এইচডিএফসি এবং ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে গ্রিন ব্যাঙ্কিং পণ্যের অংশ হিসাবে বিনিয়োগকারীদের গ্রিন ডিপোজিট অফার করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রাপ্ত আমানত ইউনাইটেড নেশনের সাসটেইনবল ডেভলপমেন্ট গোলসের বিভিন্ন প্রকল্প এবং সংস্থাগুলির অর্থায়ণের জন্য ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন : আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স! সমকামিতার সঙ্গে এ রোগের যোগসূত্র কোথায়?
গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিট সম্পর্কে যা জানা দরকার তা এখানে দেওয়া হল। বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন Bankbazaar.com-এর CEO আদিল শেঠি (Adhil Shetty)।
যে খাতে আমানত বিনিয়োগ করা হবে
ডিপোজিটের টাকা যে খাতে বিনিয়োগ করা হবে তার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, নবায়ণযোগ্য শক্তি, সবুজ পরিবহন, খাদ্য, কৃষি, বনায়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস এবং গ্রিন বিল্ডিং।
গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিটের বৈশিষ্ট:
উচ্চ সুদের হার
গ্রিন ডিপোজিটে বিনিয়োগ করলে বার্ষিক ৬.৫৫ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাবে। প্রচলিত ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটে সাধারণভাবে যা পাওয়া যায় তার থেকে এর সুদের হার কিছুটা বেশি।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত রিটার্ন
২ কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রবীণ নাগরিকরা ডিপোজিটের উপর বার্ষিক ০.২৫ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশ বেশি সুদ পাবেন।
অনলাইন বিনিয়োগে অধিক রিটার্ন
গ্রিন ডিপোজিটে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারী যদি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বেছে নেন এবং ঋণদাতার পোর্টাল কিংবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন তাহলে ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটে অতিরিক্ত ০.১ শতাংশ অতিরিক্ত রিটার্ন পাবেন।
আরও পড়ুন : কেন অকালে চলে যাচ্ছেন পল্লবী, বিদিশারা? কী বলছেন মনোবিদরা?
বিমার সুবিধা
গ্রিন ডিপোজিটের অধীনে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে বিমার সুবিধা মিলবে।
মেয়াদ
গ্রিন ডিপোজিটে সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সর্বনিম্ন মেয়াদ ১৮ মাস।
কারা বিনিয়োগ করতে পারবেন
সমস্ত ভারতীয় নাগরিক, এনআরআই, কর্পোরেট এবং ট্রাস্ট ভারতে গ্রিন ডিপোজিটে বিনিয়োগ করতে পারবেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তাঁর পক্ষে মালিকানা সংস্থা, অংশীদারি সংস্থা, সমিতি, ক্লাব এবং তাঁর অভিভাবকরা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
মেয়াদ শেষের আগে ডিপোজিট প্রত্যাহারে জরিমানা
গ্রিন ডিপোজিটে বিনিয়োগের পর প্রথম তিন মাস কোনও টাকা তোলা যাবে না। খুচরো বিনিয়োগকারীরা যদি তিন মাস পর অথচ ছয় মাসের আগে টাকা তোলেন তাহলে অর্জিত সুদের হার ৩ শতাংশে নেমে আসবে। আর নন-ইনডিভিজুয়াল বিনিয়োগকারীরা যদি মেয়াদ শেষের আগে টাকা তোলেন সেক্ষেত্রে কোনও সুদ মিলবে না। এছাড়া, ছয় মাস পর টাকা তুললে ১ শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা প্রযোজ্য সুদের হারের চেয়ে ১ শতাংশ কম পাবেন। আর যদি আংশিক বা পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয় তাহলে গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিট সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিটে পরিণত হবে।
ওভারড্রাফট সুবিধা
বিনিয়োগকারী গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ওভারড্রাফটের সুবিধা নিতে পারেন কিন্তু সেক্ষেত্রে গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিট সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিটে পরিণত হবে।
কীভাবে বিনিয়োগ করতে হবে?
অনলাইনে প্যান কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়ে বিশদ বিবরণ পূরণ করে কত বছরের জন্য কত টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করা হবে, তা লিখে সাবমিট করতে হবে। তারপর সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তর করতে হবে গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিটে। অথবা গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিট করা যাবে এমন ব্যাঙ্কের শাখায় সশরীরে হাজির হয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে।
বিনিয়োগ করা উচিত?
যে সব বিনিয়োগকারী বেশি ঝুঁকি নিয়ে উচ্চ রিটার্ন চান তাঁদের কাছে গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিট আকর্ষনীয় নাও হতে পারে। তবে নিরাপদ বিনিয়োগে আগ্রহী এবং প্রবীণ নাগরিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিটের জুড়ি নেই।
এটা মাথায় রাখতে হবে, নিছক বিনিয়োগ কিংবা লাভের চেয়েও গ্রিন ডিপোজিটের অনেক বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। এটা পৃথিবী নামের এই গ্রহের স্থায়িত্বের জন্য মানবজাতির উপর দীর্ঘমেয়াদে অনেক বড় এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা প্রত্যেকের কাছে উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি করবে। তাই বিনিয়োগকারীরা তাঁর সামগ্রিক পোর্টফোলিওর ১ শতাংশ গ্রিন ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটাই হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পৃথিবী রেখে যাওয়ার অঙ্গীকার।