বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে ভারতের একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ থেকে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পেতে গেলে খুব কম করেও ৬ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। কলেজটি বেসরকারি হলে ১৫ লক্ষ টাকার বেশিই খরচ৷ মেডিক্যালের ক্ষেত্রে এমবিবিএস বা অন্য উচ্চতর ডিগ্রির জন্য, খরচ সর্বনিম্ন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এমবিএ ডিগ্রির জন্য একটি টায়ার-২ কলেজেও প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়৷
advertisement
আরও পড়ুন: একাধিক এসআইপি করে আদৌ কোনও লাভ হয়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, টাকা ঢালার আগে জেনে নিন
অধুনা পৃথিবীর এমনই অবস্থা যে, সন্তান জন্মের আগেই সন্তানের শিক্ষা খাতে খরচের কথা ভেবে রাখা দরকার। মনে রাখতে হবে, আজ যে সন্তান ভূমিষ্ট হল, তার যখন উচ্চ শিক্ষার বয়স হবে তখন মুদ্রাস্ফীতি শিক্ষার খরচ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।
ভারতে, সাধারণ মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে প্রায় ৭ শতাংশ এবং এর ফলে শিক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মাত্র কয়েক বছর আগে, উপরোল্লিখিত ডিগ্রিগুলির জন্য শিক্ষার খরচ বর্তমানের তুলনায় প্রায় অর্ধেক ছিল। ফলে বোঝাই যায় আগামী কয়েক বছরে তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরও পড়ুন: গোল্ড লোন নাকি সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ? হঠাৎ টাকার দরকার হলে কোনটা নেওয়া ঠিক হবে
আরও পড়ুন: পাখি শিকার করতে এসে বিপাকে পাইথন ! বিষয়টি দেখলেই চক্ষু চড়ক গাছ
আর এই পরিস্থিতিতে যদি সঠিক পরিকল্পনা দিয়ে জীবন শুরু করা যায় তা হলে আর্থিক বিষয়টি অনেকখানি সুরাহা দিতে পারে। অন্তত যখন সন্তানের উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন হবে।
কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে—
সন্তানের আগামী শিক্ষার পরিকল্পনা হিসেবে করা বিনিয়োগগুলিকে সন্তানের বর্তমান বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
ধরা যাক কোনও ব্যক্তির সন্তান সদ্য ভূমিষ্ট হয়েছে। ওই ব্যক্তি এখন বিনিয়োগ শুরু করতে চান। তা হলে তাঁর হাতে প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে ১৬ থেকে ১৮ বছর সময় রয়েছে। কারও হাতে এত দীর্ঘ সময় থাকলে তিনি ইক্যুইটি ফান্ড, স্টক বা ইউনিট-লিঙ্কড ইনস্যুরেন্স প্ল্যানে (ইউলিপ) বিনিয়োগ করতে পারেন। এই সমস্ত বিনিয়োগ ইক্যুইটি-ভিত্তিক এবং যখন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা হয় তখন তা উচ্চতর রিটার্ন দিতে পারে।
সুতরাং, ওই ব্যক্তি যদি আজ ৫,০০০ টাকার মাসিক বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করতে চান এবং আপনি একটি ইক্যুইটি ফান্ড বেছে নেন যেটি গড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ রিটার্ন দেয়, তা হলে আগামী ১৫ বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা জমা করতে পারেন। এই টাকা পাওয়া যাবে মাত্র ৯ লাখ বিনিয়োগ করলেই।
আরও পড়ুন: নাবালিকাকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ, গ্রেফতার ১
সন্তানের বয়স আর একটু বেশি হলেও ঝুঁকি নেওয়া যেতে পারে এবং ইক্যুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সন্তানের বয়স যদি ৯ বা ১০ পেরিয়ে যায়, তা হলে তহবিল জমা করার জন্য অভিভাবকের হাতে থাকে মাত্র ৭ থেকে ৮ বছর। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় একই পরিমাণ টাকা জমাতে হবে। অথচ, বেশি ঝুঁকি নিতে পারবেন না।
সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেই হবে। প্রতি মাসে প্রায় ১০,০০০ টাকা বা আরও বেশি বিনিয়োগ করা যেতে পারে ইক্যুইটি এবং ঋণ ক্ষেত্রে। বেছে নেওয়া যেতে পারে সুষম তহবিল যাতে ঋণ এবং ইক্যুইটি উভয়ই থাকবে।
সন্তান যদি আরও বড় হয়, যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য বাকি আর মাত্র ২-৩ বছর তখন, প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হতে পারে। ডেট ফান্ড বা ফিক্সড ডিপোজিট, রেকারিং ডিপোজিট, ট্রেজারি বন্ড এবং অন্য ঋণ উপকরণে বিনিয়োগ করতে হবে। যাতে, পরবর্তী দু’তিন বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় টাকা জমা হয়ে যেতে পারে।
তাড়াতাড়ি শুরু করতে হবে—
উপরের উদাহরণগুলি থেকে, এটা স্পষ্ট যে যত তাড়াতাড়ি টাকা বিনিয়োগ করা শুরু করা যায় ততই কম বিনিয়োগে আরও বেশি আয় করা সম্ভব। দেরি হয়ে গেলে অনেক বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আয়ও কম হবে।
তবে, সন্তানের শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ শুরু করার কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। কতটা বিনিয়োগ করা উচিত তা নির্ভর করবে ওই ব্যক্তি কোন মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করতে পারছেন তার উপর। তা ছাড়া ঠিক কতটা কর্পাস প্রয়োজন তার উপর।
কী ভাবে পরিকল্পনা?
কয়েকটি ধাপে ধাপে মেনে চলতে হবে নির্দেশিকা—
১. হাতে কতটা সময় আছে এবং প্রতি মাসে কত টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব।
২. মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে সংস্থার গত দশ বছরের এবং দীর্ঘমেয়াদের রিটার্ন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ডেট ফান্ডে বিনিয়োগ করলে তাদের রেটিং এবং রিটার্ন চেক করতে হবে। শিক্ষা বিমা পলিসিতে বিনিয়োগ করলে সাম অ্যাশিওয়র্ড, এবং শর্তাবলী দেখে নিতে হবে। স্টকে বিনিয়োগ করতে চাইলে মৌলিক বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করতে হবে।
৩. বেছে নিতে হবে একবারে বিনিয়োগ করতে চান নাকি পর্যায়ক্রমে। সে ক্ষেত্রে একটি এসআইপি হতে পারে।
৪. বিনিয়োগের পর বা এসআইপি সেট করার পর নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে সে গুলি প্রত্যাশা অনুযায়ী রিটার্ন দিতে পারছে কিনা। না হলে পোর্টফোলিওতে ভারসাম্য আনতে হবে।