সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো মনে করে, ব্লকচেইন প্রযুক্তির ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি ব্যবসা এবং মানুষের জীবনযাপনে বিপ্লব আনতে পারে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত আর্থিক ব্যবস্থাগুলিকে সরিয়ে সেই জায়গা ক্রিপ্টোকারেন্সি দখল করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন: কানাড়া ও ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কে এবার গুণতে হবে আরও বেশি ইএমআই!
তবে বহু টালবাহানার পর নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা আনতে চলেছে ভারত। ডিজিটাল মুদ্রা বা কারেন্সি সরকারের পরিকল্পনা মতো ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করেই চালু হবে। যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এখনই কিছু করা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, এই ক্রিপ্টোর ট্রেডিং এবং এনএফটির মতো ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর ৩০ শতাংশ কর চাপানো হবে। আপাতভাবে সরকারের যা দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত সরকার চায় মানুষ এই ক্রিপ্টোকারেন্সির বদলে স্বদেশি ডিজিটাল রুপি ব্যবহার করুক।
advertisement
আরও পড়ুন: লিটার প্রতি পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত? ট্যাঙ্ক ভর্তি করার আগে চেক করুন লেটেস্ট রেট
ডিজিটাল মুদ্রার সুবিধা: ইতিমধ্যেই বহু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছেন। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই দৌড়ে অনেকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। চিনও হালে জোর দিয়েছে ডিজিটাল মুদ্রায়। আগামী দিনে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির মুদ্রা আন্তর্জাতিক বাজারের অনেকটা দখল করতে চলেছে বলে আন্দাজ। এই অবস্থায় আরবিআই যদি ডিজিটাল মুদ্রার কথা না ভাবে, তাহলে দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের। তা ছাড়া, ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা বলতে গেলে, ডিজিটাল রুপি ব্যবহার করে লেনদেনগুলি অনেক বেশি নির্বিঘ্ন এবং কার্যকর হবে। তার উপর, এটি এমন একটি লেনদেনের প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং পেমেন্ট গেটওয়েগুলির মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় সময় অনেকটা কমিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন: Tod’s SpA-র পণ্য ভারতে বিক্রি করবে Reliance, ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তিতে স্বাক্ষর
সমস্যা কোথায়? চরিত্রগত ভাবে এটি মুদ্রা এবং ওয়ালেটে সঞ্চিত থাকা আয়ের অংশ নয়। তাই চরিত্রগত ভাবেই এর গঠন এক অর্থে মালিকানাহীন। সহজ উদাহরণ নেওয়া যাক। পকেট থেকে যদি একটা ১০ টাকার নোট পড়ে যায় আর অন্য কেউ তা কুড়িয়ে পায়, তাহলে সেই টাকা কার কীভাবে প্রমাণ হবে? যদি ওয়ালেট থেকে কাউকে টাকা পাঠানো হয় তারও একটা ইতিহাস কিন্তু থাকবে। এবং কেউ যদি পাসওয়ার্ড চুরি করে সেখান থেকে টাকা সরান তা কিন্তু খুঁজে বার করা সম্ভব। কিন্তু পকেট থেকে টাকা নিয়ে গেলে তা প্রমাণ করার কোনও রাস্তাই নেই যদি না কেউ সেই চৌর্যকর্মটি কেউ দেখে ফেলে।
ই-টাকা বা ডিজিটাল টাকার ক্ষেত্রেও তার ব্যবহারিক চরিত্রও নিত্য ব্যবহৃত টাকার মতোই হওয়া উচিত। কিন্তু তা হবে কিনা তা জানার এখনও কোনও উপায় নেই। উপায় নেই কারণ, সরকার বা শীর্ষ ব্যাঙ্ক এনিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য এখনও করেনি। অর্থমন্ত্রক থেকে এই টাকার ব্যাপারে প্রযুক্তির সিদ্ধান্ত শীর্ষব্যাঙ্কের উপরই ছেড়ে দিয়েছে। তবে ই টাকা ই-টাকা প্রযুক্তিগত রূপ ছাড়া বাকি সব অর্থেই প্রথাগত টাকার প্রতিলিপি হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
কম্পিউটারে একটা লেজার থাকবে। সেই লেজার হিসাব রাখবে টাকার ভান্ডারের। যে ভাবে কাজ করে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কোষাগার। এবং বৈদ্যুতিন প্রযুক্তিতেই সেই টাকা মোবাইলে এমন ভাবে গুঁজে দেওয়া সম্ভব যাতে যে দিল সে জানল কাকে দিয়েছে, কিন্তু আর কেউ জানল না হাতে ঠিক কোন ই-মুদ্রা এল। আবার উল্টোটাও সম্ভব। প্রতিটি লেনদেনেই সরকারের নজরদারি সম্ভব।