কখনও অন্য অঞ্চলের ফল নিজের মাটিতে ফলিয়ে সাফল্য পেয়েছেন, আবার কখনও নিজের অঞ্চলের ফলকে আরও উন্নত করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এবার সেই প্রচেষ্টার ফসল মুসাম্বি লেবু চাষ, যা এখন বহু কৃষকের কাছে নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে।
advertisement
পূর্ব মেদিনীপুরের মাদল বাবুর কথায়, মুসাম্বি লেবু চাষ খুবই সহজ এবং লাভজনক। পতিত বা পরিত্যক্ত জমিতেও এই চাষ করা যায় সামান্য পরিশ্রমে। খরচ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। একবার গাছ লাগানোর পর বহু বছর ফলন পাওয়া যায়, শুধু নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন। গাছ লাগানোর জন্য দোঁয়াশ বা বেলে দোঁয়াশ মাটিই সবচেয়ে উপযুক্ত, তবে এঁটেল মাটিতেও চাষ করা যায়, যদিও তাতে সামান্য বালি মেশানো হয়। জমিতে পর্যাপ্ত রোদ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে গাছ দ্রুত বাড়ে এবং রোগবালাইও কম হয়। এই গাছ সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লাগান শ্রেয়, তবে বর্ষাকাল বাদে বছরের যে কোনও সময়ই লাগান যায়। আর একবার গাছ ফল দিতে শুরু করলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফলন অব্যাহত থাকে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০০টি চারা লাগান যায়। গাছ লাগানোর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফলন শুরু হয়। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত মুসাম্বি পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি মুসাম্বির গড় ওজন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম হয়। প্রথম ফলনের বছরেই কৃষক প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার ফলন বিক্রি করতে পারেন, আর গাছ পূর্ণবয়স্ক হলে সেই আয় বেড়ে দাঁড়ায় ছয় থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত। মুসাম্বির চাহিদা বাজারে সারাবছরই থাকে, কারণ এটি রসাল, স্বাদে মিষ্টি এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
মাদল কুমার পাল বলেন, “আমি চাই গ্রামের প্রতিটি কৃষক নিজের বাড়ির পতিত জমিতেও এমন আয়ের উৎস তৈরি করুক। এতে যেমন পরিবার স্বনির্ভর হবে, তেমনই গ্রামও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে।” বর্তমানে তিনি স্থানীয় যুবকদের মৌসুম্বি চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং তাদের জন্য চারা সরবরাহের ব্যবস্থাও করেছেন। অনেকেই তাঁর পরামর্শে এই চাষ শুরু করে সফলও হয়েছেন। ফলে এখন মুসাম্বি লেবু চাষ কেবল লাভজনক ব্যবসা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে এক নতুন গ্রামীণ অর্থনীতির দিশা। কৃষকদের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছেন এগরার এই অক্লান্ত পরিশ্রমী সফল কৃষি বিশেষজ্ঞ।





