মনসা কেতকা পদ্মাবতী এই নামেই মনসা দেবী সমধিক প্রসিদ্ধ। বাঁকুড়া জেলা এবং পুরুলিয়া জেলার প্রতিটি গ্রামের পরিবার ধুমধাম এর সাথে পালিত হয় মা মনসার পুজো। এই মনসা পুজো ছাগলের পাশপাশি বলি দেওয়া হয় হাঁস এবং পায়রার। অনেকের ছাগল কেনার সামর্থ্য না থাকলেও একটি হাঁস কিনে মা মনসার কাছে বলি দেবেনই, এটাই চিরায়ত নিয়ম।আসলে, জেলার জঙ্গলমহলের জনজীবন পাহাড়-পর্বত পরিবেষ্টিত হওয়ার এবং বর্ষার প্রচুর বৃষ্টিতে ঝোপঝাড় সৃষ্টি হওয়ায়, জেলাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কীটপতঙ্গের উপদ্রব দেখা যায়। বিশেষ করে সাপের উপদ্রব একটু বেশি হয়। এই সর্প ভয় থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে সর্প দেবী মনসা পুজো উৎসব হয়।
advertisement
এই পুজোর সূত্রপাত হয় ১৩ই জ্যৈষ্ঠ 'রোহিনের' দিন থেকে আর সমাপ্তি হয় ভাদ্র সংক্রান্তিতে। তবে জেলার শ্রাবণ সংক্রান্তি হল মনসা পুজো ও উৎসবের প্রধান সময়। এই পুজো প্রধান উপকরণ হাঁস হওয়াই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন হাটে- বাজারে হাঁসের চাহিদা বেশি থাকে। আর গ্রামে গঞ্জে শোনা যায় মনসামঙ্গলের কাহিনী নিয়ে রচিত জাঁতমঙ্গলের বিভিন্ন গান, যা জেলায় 'জাঁত' নামে পরিচিত। মনসা মঙ্গলের প্রধান কাহিনী নিয়ে 'জাঁতমঙ্গল' পালা ও গান রচিত হয়েছে। যা জেলার লোকসংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য সম্পদ।এই পালা-গান জেলার বিভিন্ন স্থানে এক মাস ধরে অনুষ্ঠিত হয়। পুজো প্রধান উপাদান বা অর্ঘ্য হল হাঁস। পুজো হয় দুদিনের, প্রথম দিন "বারি ওঠা" র দিন অর্থাৎ মূর্তি স্থাপনের দিন, দ্বিতীয় দিন হল 'বলি'র দিন। দেবী পূজা হয় তিনি রূপে- প্রতিমা রূপে, বারিঘট রূপে এবং সিজ মনসার ডাল রূপে।
আরও পড়ুন: ডেভিডের জন্মদিনে তারাদের মেলা! অন্যদিকে সুপার হট অনন্যা-বিজয়! ভাইরাল ছবি
প্রথম দিন দোকান থেকে মূর্তি এনে , নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিমা স্থাপন করা হয়। রাত্রে পুজো হয় ও সারাদিন ব্রতী মহিলা ও পুরুষ উপবাসে থাকে। বাড়ির বাইরে মাইক বা বক্সে জাঁতমঙ্গলের বিভিন্ন পালা গান বাজানো হয়।রাত হলে ঢাক বাজা শুরু হয় এবং ঢাকের বাজনার সাথে সবাই স্নানে যায়। এই স্নান কে সবাই "বারি ওঠা" বলে। সকলে স্নান করে, পুজো দেয় আর প্রণাম করে মাথার উপরে ঘটিতে জল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে আসে ও দেবীর চরণে সমার্পন করে। এর পর পুজো হয়। মনসা পুজোয় মেতে উঠে দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার বহু গ্রাম। এছাড়া বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, ছাতনা, ইন্দাস, পাত্রসায়রে মনসা পুজোর আধিক্য চোখে পড়ার মতো। ইন্দপুর, খাতড়া, রাইপুর, সারেঙ্গা, রানীবাঁধ,হীড়বাধ, সিমলাপাল ব্লকের প্রতিটি গ্রামে মনসা পুজো উৎসবের মেজাজ লাভ করে।
জয়জীবন গোস্বামী