তবে বেশিরভাগ উদ্যোগ নিয়েছিল গৃহবধূ অর্পিতা মাঝি। দেখতে দেখতে প্রায় ৫০ টা বছরের দাম্পত্য জীবন কখন যে সুখ দুঃখের মাঝে একসাথে কেটে গেছে তা বুঝতেই পারেননি বছর ৭৮ এর নির্মেলেন্দু মাঝি এবং বছর ৬৬ এর কাননবালা মাঝি। একসাথে মান অভিমানের পালার মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত করেছেন বিবাহ জীবনের ৫০ টা বছর। আর এই অর্ধশতক বছরের প্রেমে যাতে মরচে না পড়ে যায় তারই ব্যবস্থা করল তাদের ছেলে, বৌমা, নাতি, নাতনি এবং নাত বউরা।
advertisement
পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নির্মেলেন্দু বাবু এবং কানন বালা দেবীর ৫০ বছর আগে যেভাবে বিয়ে হয়েছিল তার থেকে আরো ভালোভাবে একেবারে অনুষ্ঠান করে নিমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে নিয়ে বিয়ে দেওয়া হবে তাদের। তবে এই ঘটনা মোটেও জানতে দেওয়া হয়নি বিবাহিত দম্পতিকে। এক বিয়েতেই রক্ষে নেই তার উপর আবার বিয়ে কথাটা শোনার পরই রীতিমতো রেগে উঠেছিলেন বিবাহিত দম্পতি। তবে ছেলে-বৌমার উপর রাগ দেখালেও সেই রাগ গলে গেল নাতি নাতনী এবং নাত বউদের অনুরোধে। অবশেষে রাত্রি নাগাদ দাদু হাজির হলেন একেবারে বিয়ের সাজে গলায় রজনীগন্ধার মালা পরে।
অপরদিকে দিদিমাকে নব বধুর সাজে সাজানো হল। ততক্ষণে একেবারে আমন্ত্রিত আত্মীয়-স্বজনরা এসে হাজির হয়েছেন। নবদম্পতিকে নিয়ে একটি স্টেজ তৈরি করে সেখানে বসানো হল। আলোর সাজে সাজানো হয়েছিল গোটা বাড়ি। মাইকে বেজেছে সানাইয়ের সুর।তৈরি করা হয়েছিল বিবাহের উপযুক্ত আসনও। বর এবং বধুকে বরণ করে নেওয়া হল পরিবারের পক্ষ থেকে। তারপর চলল মালাবদল থেকে সিঁদুরদান পর্ব।
বিবাহের দাম্পত্য জীবনের 50 বছর পূর্তি উপলক্ষে কাটা হল বিশাল আকারের কেক।অতিথিরা একে একে এসে বর কনের হাতে তুলে দিলেন নানান উপহার। বিয়ে বাড়িতে আমন্ত্রিত আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের অপর স্থানে তৈরি করা খাবার স্থানে পরিবেশিত করা হল মাংস ভাত সহ বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন রকমের পদ। ওই দম্পত্তির নাতি সন্দীপ মাঝি বলেন সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আমরা দাদু ঠাকুমার বিয়ে দিয়েছি। আমরা দাদু ঠাকুমাকে মালাবদল করালাম ,কেক কাটানো হল।
আরও পড়ুনঃ কাঠের সেতু থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দামোদরের জলে পড়ল মারুতি ভ্যান!
আমরা খুব মজা করেছি । খাওয়া দাওয়া,নাচ-গান একদম জমিয়ে করেছি। তাদের বাড়ির পুত্রবধূ অর্পিতা মাজি বলেন, এই অনুষ্ঠানটা আমরা খুবই ভালো করে করতে চেয়েছি। আমরা মা-বাবাকে আনন্দ দিতে চেয়েছি। বাবা মা যেমন আমাদের কাছে ঠিক তেমনই শ্বশুর শাশুড়ি। আজকে সমাজে দেখা যায় অনেকে বাবা,মা ও শ্বশুর-শাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় কিন্তু আমি বলি বাবা মা আর শ্বশুর-শাশুড়ির মধ্যে কোন তফাৎ নেই ভালোবাসা সবার কাছে সমান।
আরও পড়ুনঃ জেলার মাধ্যমিকের কৃতীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পাত্র নির্মলেন্দু মাজি বলেন, এটা আমাদের 50 বছর বিবাহ বার্ষিকী। আমাদের বিয়ে 50 বছর হয়ে গেল। আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার ছেলেরা,মেয়ে, নাতি ,নাতবৌ সকলে মিলে এই উদ্যোগটা নিয়েছে। প্রথমে কিছু জানতে পারিনি । অনেক পরে জানতে পেরেছি যে এটা ওরা বড় করে একটা অনুষ্ঠান করছে। শুধু আনন্দ নয় বরং গর্ববোধ করছি। আজকে বাবা মার প্রতি ছেলেরা যে ভালোবাসা দেখিয়েছে সত্যিই আমার খুবই ভালো লাগছে। পাত্রী কানন বালা মাজি বলেন, দেখতে দেখতে আমাদের 50 বছর কেটে গেল। আজকে খুবই ভালো লাগছে আমাদের ছেলে মেয়ে নাতি-নাতনি বউমা সকলেই যে এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব দেখে সেই পুরনো দিনের স্মৃতিকেই উৎসর্গ করলেন তিনি।
JOYJIBAN GOSWAMI