এই চারটে শব্দ সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে:
সম্পর্কে যে সব সময় ভাল মুহূর্ত থাকবে, তেমনটা একেবারেই নয়। কিছু কিছু সময়ে রাগ-মেজাজের কারণে সঙ্গীর সঙ্গে বিবাদেও জড়িয়ে পড়তে হয়। আর সেই সময় আমরা রাগের মাথায় মনের মানুষটাকে এমন কিছু কথা বলে ফেলি, যার জেরে তিনি আঘাত তো পেতেই পারেন। সেই সঙ্গে সম্পর্কের তাল কেটে যায়। আলোচনা করে নেওয়া যাক, সেই বাক্যগুলির বিষয়ে।
advertisement
‘শাট-আপ’ বা ‘চুপ করো’:
‘শাট-আপ’ বা ‘চুপ করো’ - এই ধরনের কথা খুবই তুচ্ছ মনে হতে পারে। এমনকী হামেশাই রাগ বা বিরক্তির জেরে আমরা এই কথাটা বলে থাকি। কিন্তু সম্পর্কে ঝগড়াঝাটির মধ্যে নিজের সঙ্গীকে কখনওই এই কথাটা বলা একেবারেই উচিত নয়। আসলে এই কথাটা ভীষণই রূঢ় এবং এটা আবার উল্টো দিকে থাকা মানুষটির মধ্যে একটা গভীর ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে।
আসলে এ-ভাবে অনেকেই হয়তো সঙ্গীটিকে থামানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যায়। কারণ ‘শাট-আপ’ বা ‘চুপ করো’ কথাটাকে খুবই রূঢ়, অবিনীত এমনকী কদর্য বলেও মনে করেন অনেকে। ফলে কখনও কখনও সঙ্গীকে এই কথাটা বললে তিনি হয়তো ভুল বুঝতে পারেন। এমনকী তিনি হয়তো আঘাত পেয়ে সম্পর্কের সুন্দর দিনগুলির কথা পর্যন্ত ভুলে যেতে পারেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, নিজের সঙ্গীকে এটা কখনওই বলা উচিত নয়।
‘ঠান্ডা হও’ (Calm down):
কোনও ঝগড়াঝাটি কিংবা তর্কাতর্কির মাঝে আচমকা ‘ঠান্ডা হও’ - এই কথাটা বললে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এই কথাটাও খুবই তুচ্ছ মনে হতে পারে। তবে এই কথাটা কিন্তু সঙ্গীর কাছে অসম্মানজনক হতে পারে। আসলে সেই সঙ্গীর মনে হতে পারে যে, তাঁর মনের অনুভূতিগুলিকে সে-ভাবে আর প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন-চার দিনের পাহাড় সফরে মুখ্যমন্ত্রী, জিটিএ-র জন্য কি নতুন কিছু ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর?
‘কিছুই না’ (Nothing):
হয় তো সঙ্গী তাঁর মনের কথা কিংবা অনুভূতির কথা বলতে চাইছেন, কিন্তু সেটা এড়িয়ে যাওয়াটা একেবারেই উচিত নয়। অর্থাৎ সঙ্গীর প্রতি শীতল আচরণ একেবারেই ঠিক নয়। আসলে এতে সঙ্গী আঘাত পেতে পারেন। এমনকী কেউ যদি শারীরিক, মানসিক এবং আবেগ সংক্রান্ত লক্ষণ সব সময় সঙ্গীর সামনে প্রকাশ করতে থাকেন, তা-হলে ভবিষ্যতে সেই সঙ্গী আর তাঁর অনুভূতিতে সাড়া দেবেন না। আসলে সম্পর্ক শীতল হয়ে গেলে সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট হয়ে যায়। রাগ, বিরক্তি, হতাশা ঘিরে ধরে। তাই সম্পর্কে কখনও একা নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে কিংবা নিজের জন্য সময় চাইলে তা সঙ্গীকে স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে।
‘বিচ্ছেদ চাই’ বা ‘ডিভোর্স দিয়ে দাও’ (Divorce):
এই কথাটা যে-কোনও সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে দিতে পারে। হয়তো সঙ্গী হতাশার বশে এই কথাটি বলে ফেলেছেন, হয়তো বা তিনি একেবারেই মন থেকে বলতে চাননি। তবুও উল্টো দিকে থাকা মানুষটাকে যখন উদ্দেশ্য করে এই ধরনের কথা বলা হয়, তখন তাঁর কাছে সেটা বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। কারণ তাঁর মনে ধারণা তৈরি হতে পারে যে, এই সম্পর্কে তাঁর সঙ্গীর দমবন্ধ হয়ে আসছে। আর এতে সম্পর্কে বিশ্বাস ও ভরসার ভিতটাও টলে যায়।
এগুলো ছাড়াও এমন কিছু কিছু কথা রয়েছে, যেগুলো ঝগড়াঝাটির মধ্যে প্রায় সকলেই ব্যবহার করে থাকেন। অথচ সেই কথাগুলি আমাদের কখনওই বলা উচিত নয়। এতে উল্টো দিকে থাকা মানুষটার মনে আঘাত লাগে। তাই এই বিষয়েই আরও ভাল করে বুঝিয়ে বলা যাক।
এই কথাগুলো সঙ্গীকে কখনওই বলতে নেই:
‘তোমার সঙ্গে দেখা না-হলেই বোধহয় ভাল হত!’
এই কথাটা সঙ্গীর মনে গভীর ছাপ ফেলতে পারে। আর তাঁর মনে হতে পারে, সম্পর্কটায় বোধহয় আর কিছুই বাকি নেই। তিনি ধীরে ধীরে দূরে সরে যাবেন। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দূরত্ব বেড়ে এক সময় ভেঙে যাবে সম্পর্কটা।
‘তুমি কিন্তু মোটা হয়ে গিয়েছো!’
অনেক সময় মজা করে অনেকেই বন্ধু কিংবা সঙ্গীকে এই ধরনের কথা বলে থাকেন। অথচ এই ধরনের বাক্য কিন্তু বডি শেমিংয়ের প্রকৃত উদাহরণ। যার ফল কিন্তু একেবারেই ভালো হয় না। আসলে নিজের মনের মানুষটাকে এই কথা বললে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর গভীর প্রভাব পড়ে। এমনকী কোনও মানুষকে তাঁর শরীরের আকার-আকৃতি নিয়ে বললে কিংবা সেটা নিয়ে ঠাট্টা করলে তাঁর আত্মবিশ্বাসেও সেটা আঘাত হানতে পারে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, কেউ যদি নিজের সঙ্গীকে বলেন যে, ‘তুমি কিন্তু মোটা হয়ে যাচ্ছ’, এই কথাটা তাঁর মানসিক অবস্থাকে ঘেঁটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কারণ সেই সঙ্গী তো ওই কথাকেই ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেবেন।
‘তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো!’
এই কথাটা ভীষণই কদর্য। তাই এটা কাউকে বিশেষ করে নিজের সঙ্গীকে তো একেবারেই বলা উচিত নয়। এই কথাটা বলার অর্থ হচ্ছে, কেউ তাঁর সঙ্গীর বোধ-বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এটাও সঙ্গীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত নয়। এই ধরনের কথা বার পরিবর্তে বরং সঙ্গীকে অন্য ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে।
‘তোমার তো রাগ করা উচিত নয়!’
কখনও ঝগড়া বা তর্কাতর্কির মাঝে কি এই ধরনের কথা সঙ্গীকে বলে ফেলা হয়েছে? আসলে সঙ্গীর উদ্দেশে এমন কথা বলার অর্থ হল, তাঁর অনুভূতি বা আবেগকে তুচ্ছ করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এই কথাটা বললে মনে হবে, সঙ্গীর অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই বাদানুবাদের সময় যদি মনে হয় যে, সঙ্গীর আবেগ বা অনুভূতির প্রকাশ ঠিক ভাবে হচ্ছে না, তা-হলে তাঁর রাগ পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
‘তোমায় দেখে এখন আর অনুভূতি জাগে না!’
যাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে, তাঁদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের কথা ভীষণই ক্ষতিকর। আসলে এই কথাটা সঙ্গীকে বললে তিনি যারপরনাই আঘাত পাবেন। এমনকী সম্পর্ক টিকে থাকলে তিনি নিজেকে হীন মনে করতে থাকেন। এমনকী ভালবাসায় বিশ্বাসের ভিতটাও নড়বড়ে হয়ে যায়।
‘আমার কিছুই যায়-আসে না!’
আসলে যে-কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরকে সময় দেওয়া এবং যত্নশীল হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। তাই সম্পর্কে থাকাকালীন সঙ্গীর কাছ থেকে কেউ যদি শোনেন যে, আমার কিছুই যায় আসে না, তা -হলে সেই মানুষটার নিজেকে অবহেলিত মনে হতে পারে। তাই মন থেকে কেউ না-বলুন অথবা রাগের বশেই বলুন - এই কথাটা একেবারেই বলা উচিত নয়। এতে সম্পর্কের মিষ্টত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
‘তোমার মা-বাবার জন্যই তো…’
হয়তো এমন কারওর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন, যাঁর মা-বাবা এই সম্পর্কটাকে মানেন না। তাই সেক্ষেত্রে প্রতি বার ঝগড়া হলেই তার দোষটা সহজেই সঙ্গীর মা-বাবার উপর চাপিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এটা করা উচিত নয়। কারণ এতে সেই সঙ্গীটি আঘাত পাবেন। আসলে সেই মানুষটি হয়তো মা-বাবার কড়া শাসনেই বেড়ে উঠেছেন। ফলে তাঁর মা-বাবাকে দোষারোপ করলে তাঁর বেড়ে ওঠার সময়কার তিক্ত স্মৃতি ফের তাঁর সামনে চলে আসবে।
‘আমি তোমায় ঘৃণা করি!’
রাগের বশে অনেক ক্ষেত্রেই এই কথাটা আমরা অনেকেই নিজেদের সঙ্গীকে বলে ফেলি। মন থেকে না-বললেও এই বিষয়টা কিন্তু সঙ্গীকে যারপরনাই আঘাত করে। ঝগড়া থেমে যাওয়ার পরেও কিন্তু এটা সঙ্গীর মনে গেঁথে যায়।
‘তুমি আমার জন্য কী করেছো? তুমি আমার সবথেকে বড় ভুল!’
সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত ঝামেলা চললে অনেকেই নিজের সঙ্গীকে এই ধরনের কথা বলে ফেলেন। রাগ হয়তো এক সময় পড়ে যায়, কিন্তু এই কথাগুলো মনে থেকে যায়। তাই রাগের বশেও নিজের সঙ্গীকে কিছু বলার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া উচিত। কারণ সম্পর্ক খুবই সুন্দর এবং কোমল একটা বিষয়। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় আমরা সঙ্গীর সঙ্গে অন্যের তুলনা টেনে থাকি, এই অভ্যেসটাও কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর।
সঙ্গীকে আঘাত করার পর কীভাবে সব কিছু ঠিক করা যায়?
‘কথা’ হচ্ছে হাতে থাকা ঢিলের মতো। এক বার ছুড়ে দিলে আর ফেরানো যায় না! তবুও একটা সুন্দর সম্পর্ককে বাঁচাতে তো হবে! তাই দেখে নেওয়া যাক, সেই উপায়টাই।
নিজের ভুল স্বীকার:
রাগের মাথায় সঙ্গীকে গুরুতর কিছু বলে থাকলে নিজের ভুলটা বুঝতে হবে এবং তা সঙ্গীর কাছে স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। আর এটাই সঙ্গীর মনে অনেকটাই জায়গা করে দেবে।
অতীতের ভুল আর নয়:
পূর্বে করা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, সে-দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একই ভুল বার বার হতে থাকলে সম্পর্কের সুতোও আলগা হতে থাকে!