বই পোকাদের কাছে এমন পরিবেশ যেন স্বপ্নের মত। জায়গাটা আলিপুরদুয়ারের কালচিনির ডিমা চা বাগানের ব্রিটিশ আমলে তৈরি ইউরোপীয়ান গল্ফ ক্লাবের মাঠ। ক্লাব ঘরটি কালের গর্ভে বিলিন হয়ে গেলেও ওই ইতিহাস জড়ানো মাঠটি এখনও অবিকল রয়ে গেছে। অথচ কিছুদিন আগেও দিনেদুপুরে ওই মাঠেই আবাধে বসতো মদ ও জুয়ার রমরমা আসর। কার্যত পুরো মাঠটাই চলে গিয়েছিল সমাজবিরোধীদের দখলে। এই দৃশ্য বারে বারেই মর্মাহত করতো এলাকারই কলেজ পড়ুয়া নিমেষ লামাকে। এই ঠেক ভাঙ্গার জন্য বারবার সে পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ধারসী নদীর ওপর বাঁশের সেতু ভেঙে পড়ে বিপত্তি
তবে পুলিশি অভিযানও ওই ঠেক ভাঙতে প্রায় ব্যর্থ হয়। কিন্তু সহজে হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন কালচিনির এক যুবক নিমেষ লামা। সঙ্গেবন্ধুদের নিয়ে শিক্ষাকেই হাতিয়ার করে নেমে পড়েন ময়দানে। আর সেই ভাবনা থেকেই মূলত কালচিনিতে গড়ে উঠেছে ওই অভিনব গ্রন্থাগার। দিনের পর দিন পাঠকরা ওই গাছের নিচে ধীরে ধীরে ভিড় জমাতে শুরু করায় সবাার অলক্ষ্যেই এক সময় পিঠটান দিতে বাধ্য হয় এলাকায় সমাজ বিরোধীরা। ফলে মদ ও জুয়ার ঠেকও এখন অতিত। এমনকি মদ ও জুয়ার আসর বসতে দেখলে স্থানীয়রাই তাতে বাধা দেন। শুধু কী বইয়ের আসর? না, ওই গাছ গ্রন্থাগারকে ঘিরে বসে আবৃত্তি, নাটক,গান আর বিতর্কের আসর। যারও মধ্যমনি ও নিমেষ।
আরও পড়ুনঃ করম পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা জেলার বিভিন্ন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়
গায়ের জোর না খাটিয়ে শুধুই অভিনব চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোলে যে বাজিমাত করা যায়, নিমেষের ওই গাছ গ্রন্থাগার চাক্ষুষ না করলে বোঝা ভার। সবুজ ঘাসের গালিচাতে বসেই কেউ বা ডুব দেন রূপকথায়, আবার কেউ কবিতা-গল্প-উপন্যাসে। আর্থিক ভাবে সক্ষম না হয়েও প্রচুর বই সংগ্রহ করেছেন নিমেষ ও তাঁর কিছু সঙ্গী। বাংলা, হিন্দি, গোর্খালি ও ইংরেজি বই মেলে ওই গাছ গ্রন্থাগারে। আর যার ফল মিলেছে হাতের নাতে।।। এতে চা বাগান এলাকার শিশু-কিশোর পড়ুয়ারা যেমন উপকৃত হচ্ছে অন্যদিকে সমাজটাও নির্মল হয়েছে।
Annanya Dey