সন্ত রবিদাস
নাম
রবিদাস বা রাইদাস
পরিচিতি
ভক্তি আন্দোলনের কবি ও সন্ত
সময়কাল
পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতক
জন্ম
আনুমানিক ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ
প্রভাব
উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র
পিতা
সন্তোখ দাস
মাতা
মাতা কলসি
প্রামাণ্য তথ্য
অনন্তদাস রচিত ‘পরচাই’ গ্রন্থটিতে ভক্তি আন্দোলনের বিভিন্ন কবির সঙ্গে রবিদাসের জন্মকথাও উল্লেখ করা রয়েছে।
শৈশব
মধ্যযুগের অন্য সব সন্ত কবির মতোই রবিদাসের জীবনও অনেকটাই কুয়াশাচ্ছন্ন। তাঁর সঠিক জন্ম সাল জানা যায় না। তবে মনে করা হয় ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তাঁর জন্ম। ১৫২০ পর্যন্ত তিনি শরীর ধারণ করে ছিলেন বলে বিশ্বাস করেন তাঁর অনুগামীরা।
উত্তরপ্রদেশের বারাণসী জেলার শির গোবর্ধন গ্রামে তাঁর জন্মস্থান এখন শ্রী গুরু রবিদাস ‘জনম আস্থান’ নামে পরিচিত। মাতা কলসি ছিলেন এবং পিতা সন্তোখ দাসছিলেন চর্ম-শ্রমিক। পেশাগত এই অবস্থানের কারণে তাঁরা সমাজে অস্পৃশ্য ছিলেন। রবিদাস অবশ্য তাঁর জীবেনর বেশিরভাগ সময়টাই গঙ্গার তীরে আধ্যাত্মিক সাধনায় কাটাতে শুরু করেন একেবারে ছোটবেলা থেকে। পরবর্তী জীবনেও অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন সুফি সাধক, সাধু সন্ন্যাসীদের সাহচর্যে।
অনন্তদাস পরচাই গ্রন্থে রবিদাসের জন্মকথার উল্লেখ পাওয়া যায়। মধ্যযুগের গ্রন্থ, ভক্তমাল থেকেও জানা যায় যায় যে গুরু রবিদাস ছিলেন সমসাময়িক ভক্তি আন্দোলনের কবি রামানন্দের শিষ্য। রবিদাস রামানন্দের কাছ থেকেই তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং রামানন্দী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অনুসারী ছিলেন।
রাবিদাস তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান এবং হিমালয়ের বিভিন্ন ধর্মস্থান পরিভ্রমণ করেন। তাঁর দর্শন অনুযায়ী রবিদাস সগুণ (গুণ, মূর্তি-সহ) পরম সত্তার রূপ পরিত্যাগ করে নির্গুণ (গুণবিহীন , বিমূর্ত) রূপের সাধনায় মনোনিবেশ করেছিলেন।
গুরু নানকের সঙ্গে সাক্ষাৎ
অনেকেই মনে করেন গুরু রবিদাস শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। শিখ ধর্মগ্রন্থে তিনি শ্রদ্ধেয়। গুরু রবিদাসের ৪১টি কবিতা শিখদের আদি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই কবিতাগুলি তাঁর দর্শন ও সাহিত্যকর্মের প্রাচীনতম নিদর্শনগুলি অন্যতম।
মীরা বাই ও রবিদাস
মনে করা হয় ভক্তি যুগের আর এক কবি মীরা বাইয়ের গুরু ছিলেন সন্ত রবিদাস। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী রাজস্থানের চিতোরগড় জেলায় মীরার মন্দিরের সামনে একটি জায়গায় রবিদাসের পদ চিহ্ন আঁকা রয়েছে।
দর্শন
গুরু রবিদাসের গানে নির্গুণ-সগুণ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। হিন্দুধর্মের নাথ পন্থার সঙ্গে যোগ দর্শনের ভিত্তিতে এই দর্শন স্থাপিত। সন্ত রবিদাসের কথায় বেশির ভাগ সময়ই ‘সহজ’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং ভক্তিই তাঁর মূল উপজীব্য। ঈশ্বর অবশ্যই নির্গুণ।
রবিদাসিয়া সম্প্রদায়
রবিদাসিয়া এবং শিখ ধর্মের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মনে করা হয় রবিদাসিয়া সম্প্রদায়ের মানুষও দশম গুরু এবং গুরু গ্রন্থ সাহেবকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু তাঁদের সর্বোচ্চ গুরু সন্ত রবিদাস। শিখ ধর্ম থেকে রবিদাসিয়া পৃথক হওয়া অবশ্য বেশ অর্বাচীন কালে। ২০০৯ সালের পর ভিয়েনার এক অপ্রীতিকর ঘটনার পর সেখানে সন্ত রবিদাসের অনুগামীরা রবিদাসিয়া সম্প্রদায়ের নতুন পবিত্র গ্রন্থ অমৃতবাণী সংকলন করেন। এতে শুধুই সন্ত রবিদাসের লেখা এবং তাঁর প্রদর্শিত পথের উল্লেখ করে ২৪০ টি স্তোত্র রয়েছে।
প্রতিবাদের প্রতীক
সন্ত রবিদাস ভক্তি যুগের সাধক। ইতিহাসের পাতায় এবং তাঁর ভক্তরা তাঁকে ধর্মীয় প্রতিবাদের জীবন্ত প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। আধ্যাত্মিকতার ঊর্ধ্বে ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক নীতির বাহক হিসেবে।
রাজনীতি
২০১২ সালে ভারতে রবিদাসের অনুসারী সম্প্রদায়ের দ্বারা ‘বেগমপুরা’ (বে-গাম-পুরাবা ‘দুঃখহীন জমি’) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত করা হয়। রবিদাসের একটি কবিতায় এই শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। যার অর্থ হল এমন এক প্রদেশ যেখানে কোন দুঃখ বা ভয় নেই এবং সবাই সমান।
No stories found matching this criteria