

অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে WhatsApp। নতুন পলিসির জেরে ক্রমেই জনপ্রিয়তা কমছে এই সোশাল চ্যাটিং অ্যাপের। পরিস্থিতির সামাল দিতে নানাভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোল করা শুরু হয়েছে। জানানো হচ্ছে, ফেব্রুয়ারি নয় মে মাসে লাগু হবে নতুন পলিসি। তবুও এক অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে। এক্ষেত্রে WhatsApp-এর এই প্রাইভেসি পলিসি দেশের সাধারণ মানুষের আইনি অধিকারেও প্রভাব ফেলতে পারে। কী ভাবে? আসুন জেনে নেওয়া যাক!


এক্ষেত্রে প্রথমেই WhatsApp-এর আপডেটেড পলিসি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারির বদলে পলিসি লাগু করার নতুন তারিখ হল ১৫ মে। কিন্তু কী আছে এই পলিসিতে? পলিসি অনুযায়ী, অ্যাপটির আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করতে গেলে প্রত্যেককে একটি 'agree and accept' অপশনে ক্লিক করতে হবে। না হলে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাবে এই অ্যাপ। আর WhatsApp-এর এই আপডেটেড পলিসি অনুযায়ী, সংস্থার অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে শেয়ার করা হতে পারে ব্যবহারকারীর তথ্য। এক্ষেত্রে মালিকানাধীন সংস্থা Facebook ও তার অধীনস্থ অন্য অ্যাপেও শেয়ার হতে পারে আপনার WhatsApp-এর ডেটা।


এর পাশাপাশি সব সময়ে ব্যবহারকারীর লোকেশন ডেটাও ট্র্যাক করতে পারবে অ্যাপটি। তবে এই চ্যাটিং প্ল্যাটফর্মের দাবি ছিল, নতুন পলিসির মাধ্যমে পরিষেবা এবং ইউজার এক্সপিরিয়েন্সকে আরও মজবুত করে তোলা হবে। কিন্তু তথ্য ফাঁস যাওয়ার ভয়ে ভুগতে শুরু করেছেন মানুষজন। তাঁদের আতঙ্ক- এবার হয় তো সমস্ত গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর এই বিষয়টির সমাধান করা WhatsApp-এর কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।


এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে দু'টি বিষয় দেখা দেবে। প্রাইমারি টেক্সট মেসেজগুলি বিজনেস অ্যাকাউন্টে শেয়ার হয়ে যাবে। আর একটি বিষয় হল মেটা ডেটা। এক্ষেত্রে অত্যন্ত গোপনীয় ও সংবেদনশীল তথ্যও ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সহজ কথায় বলতে গেলে এই মেটা ডেটা (Metadata) হল একটি মেসেজের সমস্ত কিছু। শুধু কনটেন্ট বাদ দিয়ে বাকি পুরোটাই মেটা ডেটা। এক্ষেত্রে কনট্যাক্ট নম্বর, লোকেশন, ফিনান্সিয়াল ডিটেইলস সহ সমস্ত কিছু ফাঁস হয়ে যাবে। ব্যবহারকারীর সমস্ত তথ্য জেনে নেওয়ার পর তা ব্যবহার করে নানা প্ল্যাটফর্মে একাধিক বিজ্ঞাপন দিতে পারবে Facebook। সহজ কথায় বলতে গেলে বেআইনিভাবে নিজের ব্যবসা বাড়াবে।


আইনি অধিকার নিয়ে চিন্তা - অনেক মানুষই এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন নয়। অনেকে চুটিয়ে WhatsApp ব্যবহার করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। কিন্ত অজান্তেই অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির এক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, দেশের প্রতিটি জনগণের মৌলিক অধিকার রাইট টু প্রাইভেসি। রাইট টু প্রাইভেসির মধ্যে রাইট টু কন্ট্রোলও পড়ে। এবং এই বিষয়টি সদা সুরক্ষিত থাকা উচিৎ।


এক্ষেত্রে একটি ডেটা প্রোটেকশন আইনের প্রসঙ্গ উঠে আসে। যদিও দেশে এখনও এই আইন লাগু হয়নি। ৫ নম্বর ধারার অধীনে একটি বিল প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে এখনও তা কাঙ্ক্ষিত রূপ পায়নি। আর এই ধারা ও প্রস্তাব অনুযায়ী WhatsApp-এর ডেটা কখনও ব্যবহার করতে পারে না Facebook বা অন্যান্য অ্যাপ। এই ধারা শুধু WhatsApp বা Facebook নয়, সমস্ত অ্যাপের ক্ষেত্রেই সমান ভাবে প্রযোজ্য। মজার বিষয়টি হল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশে WhatsApp-এর নতুন পলিসি লাগু করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ এখানে ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন রয়েছে।