#কলকাতা: বাংলা ক্রিকেট দলের নতুন কোচের নাম কি লক্ষ্মীরতন শুক্লা? সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী দিন দশেকের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে চলেছে লক্ষ্মীরতন শুক্লার নাম বাংলার সিনিয়র দলের কোচ হিসেবে। রনজি ট্রফির সেমিফাইনালে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে ১৭৪ রানে হারার পর কোচ অরুণ লালের চাকরি যাওয়া একপ্রকার নিশ্চিত বলেই খবর সিএবি সূত্রে। লালজীর হাত ধরে একবার রনজি ফাইনাল আর এবার সেমি ফাইনালে উঠলেও তার কোচিং পদ্ধতি নিয়ে খুব একটা খুশি নয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
অরুণ লালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি মাঠে আর কোচিং করান না। দলের অনুশীলনের সময় মোবাইল নিয়ে নিজের মত বসে থাকেন। ক্রিকেটারদের ভুলত্রুটি সেভাবে আলাদা করে বোঝানোর চেষ্টাও করেন না। যাবতীয় যা কাজ করার দায়িত্ব সামলান সহকারি সৌরাশিস এবং অপারেশন ম্যানেজার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। ড্রেসিংরুমে মাঝেমধ্যে মোটিভেশনাল টক হিসেবে বিস্তর ভাষণ দেন অরুণ লাল। যদিও সে সব নাকি সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই সংগ্রহ করা। মরশুমে বিভিন্ন সময়ে দলের স্কোয়াডে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু ,একজন ক্রিকেটার তো বলেই দিচ্ছেন, অরুণ স্যার কখন কি বলছেন ঠিক বোঝা মুশকিল। এক সময় একজন ক্রিকেটারের প্রশংসা করেন আবার কখনো সেই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শুধু দৌড়াতে বলেন। দল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নাকি সহকারীদের মতামতকেই মেনে নেন।
এমনকি মাঠের বাইরে জুনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলাদা করে সময় কাটানো তো দূরের কথা কোচিং স্টাফের কয়েকজন আর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে সময় দিতেই ব্যস্ত থাকেন। বেঙ্গালুরুতে সেই দৃশ্য চোখে পড়েছে। এমনকি সিএবি কর্তারাও রনজি ট্রফির নকআউটের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অরুণ লাল স্ত্রীকে নিয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছেন সেটা ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি। ম্যাচ হারার পর কোচ অরুণ লাল জানিয়েছিলেন, ক্রিকেটাররা নকআউট পর্বে ৩৪০ রানের চাপ নিতে পারেনি। আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এখানেই প্রশ্ন তুলছেন প্রাক্তনরা। বাংলার একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতে, কোচের কাজ ভয় কাটানোর। অরুণ লাল যেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সেটা ঠিক নয়, ক্রিকেটারদের দোষারোপ না করে লালজীর উচিত ছিল তাদের পাশে দাঁড়ানোর। একজন কোচের সেটাইতো কাজ হওয়া উচিত। সব মিলিয়ে সিএবি কর্তারাও লালজীর কোচিংয়ে খুব একটা খুশি নন বলেই খবর। ৩২ বছর পেরিয়ে গেলেও রনজি জয়ের স্বপ্ন আজও অধরা। এমনিতেই সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন সিএবি কর্তারাও। প্রাক্তনী থেকে সোশ্যাল মিডিয়া। সিএবি কর্তাদের বারবার সমালোচনা হচ্ছে কেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতদের মত কোচকে বাংলা ক্রিকেট দলের দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। সমস্যাটা ঠিক কোথায় সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
সিএবি কর্তারাও এবার নড়েচড়ে বসতে চান। সব দেখেশুনে একজন খারুস বা হার না মানা যোদ্ধাকেই বাংলার কোচিং দায়িত্ব দিতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে ভিন রাজ্যের কোচের দিকে না তাকিয়ে, ঘরের ছেলে প্রাক্তন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লার হাতেই দায়িত্ব তুলে দিতে পারেন কর্তারা। খেলোয়াড় জীবনে নিজের লড়াকু মানসিকতার জন্য সব সময় প্রশংসিত হতেন লক্ষ্মী। ইতিমধ্যেই অনূর্ধ্ব ২৫ বাংলা দল নিয়ে কাজ করছেন লক্ষ্মী। এখনই প্রকাশ্যে এই নিয়ে কিছু না বললেও সূত্রের খবর, লক্ষ্মীরতন শুক্লাও ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন তিনি দায়িত্ব নিতে তৈরি। তবে তার বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। দলের সাপোর্ট স্টাফ নিজে নির্বাচন করতে চান লক্ষ্মী। আর দল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তার সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতে হবে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে রেখেছেন প্রাক্তন অধিনায়ক।
নিজের ভবিষ্যৎ বুঝতে পেরে অরুণ লালও কিছুটা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সেমিফাইনাল শেষে বলেছিলেন, আগামী বছর নিয়ে তিনি ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছেন। তবে কলকাতায় ফিরে লালজীর বক্তব্য, সিএবি সঙ্গে কথা না বলে কোন মন্তব্য নয় নিজের কোচিং ভবিষ্যৎ নিয়ে। সব মিলিয়ে আগামী কয়েকদিন বাংলার ক্রিকেটে ক্রিকেট নিয়ে ময়দান সরগরম থাকবে তা এককথায় বলাই যায়। Input- ERON ROY BURMAN