কয়েক মাস 'খাওয়া-ঘুম' ভুলে যান এই গ্রামের মহিলারা! নেপথ্যে বড় কারণ
- Published by:
- hyperlocal
- Reported by:Madan Maity
Last Updated:
দিঘা থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরের এই পুজো দেখে বিস্মিত হবেন যে কেউ। এখানে মহিলাদের আয়োজন না দেখলে আফশোস হবে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত নেগুয়া গ্রামে এবার আবারও সৃষ্টি হল এক নতুন দৃষ্টান্ত। শহরের আলো ঝলমলে প্যান্ডেল, মিডিয়া কভারেজ আর পুরুষতান্ত্রিক পুজো সংস্কৃতির ভিড়ে, নেগুয়ার ত্রিনয়নী মহিলা সংঘ যেন এক শুদ্ধ শ্বাস। এখানে পুরুষ নয়, মণ্ডপের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিমার নকশা, থিমের ভাবনা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার পুরোটাই সামলাচ্ছেন গ্রামের গৃহবধূ, চাকরিজীবী, ছাত্রী ও প্রবীণ নারীরা। তাঁরা প্রমাণ করছেন, পুজো মানেই শুধু শহর বা পুরুষশাসিত কর্মকাণ্ড নয় — পুজো মানে সৃষ্টিশীলতা, নেতৃত্ব ও সাহস, যেটা নারীর মধ্যেও পরিপূর্ণভাবে বর্তমান। (ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি)।
advertisement
ত্রিনয়নী মহিলা সংঘের দুর্গাপুজো এ বছর পা দিল অষ্টম বছরে। শুরুটা হয়েছিল খুব ছোট পরিসরে, কয়েকজন গ্রামের মহিলার আন্তরিকতা আর সাহস দিয়ে। তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, “মহিলারা কি পারবে পুজো করতে?” সময়ের সঙ্গে সেই প্রশ্নের উত্তর হয়েছে আরও জোরালো — “হ্যাঁ, মহিলারাও পারে, এবং কেবল পারে নয়, পুরুষদের থেকেও ভালভাবে পারে।” এখন এই মহিলা পরিচালিত পুজো শুধুমাত্র গ্রামের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, জেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। (ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি)
advertisement
শুধু সাবেকিয়ানা নয়, থিম পুজোর ক্ষেত্রেও ত্রিনয়নী মহিলা সংঘ পিছিয়ে নেই। বরং তারা প্রতি বছর এমন সব থিম নিয়ে আসছেন যা জেলার পুরুষ-পরিচালিত পুজোগুলিকেও চিন্তায় ফেলে দেয়। সমাজ সচেতন বার্তা, পরিবেশবান্ধব চিন্তা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা, প্যান্ডেল আর আলোকসজ্জা। এতটাই নিখুঁত পরিকল্পনা ও স্বতন্ত্রতা থাকে, যে জেলার বিভিন্ন থিমপুজো প্রতিযোগিতায় ত্রিনয়নী মহিলা সংঘ বারবার পুরস্কৃত হয়েছে। এখানেই স্পষ্ট হয়ে যায়—নারীর চোখেও থিমের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা গভীর হতে পারে। (ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি)
advertisement
সম্প্রতি পুজোর সূচনার পর্ব হিসেবে পালিত হল খুঁটি পুজো। নেগুয়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় ঢাকের বাদ্যি, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে জমজমাট হয়ে ওঠে পরিবেশ। অন্যান্য পুজোতেও খুঁটি পুজো হয়, কিন্তু এখানে যা অভিনব, তা হল — সকলের আগে এবং সামনে আছেন শুধু নারীরা। তাঁরা নিজের হাতে প্রতিমার কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করছেন, পুরোহিতের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ রীতিনীতির আয়োজন করছেন, আর উৎসবকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন গোটা গ্রামে। এমনকি গ্রামের পুরুষরাও আজ তাঁদের সহযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। (ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি)
advertisement
সমুদ্রতট দিঘা ভ্রমণ করতে আসা হাজার হাজার পর্যটকের জন্য এই পুজো হয়ে উঠতে পারে একটি অতিরিক্ত আকর্ষণ। মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরের এই পুজো দেখে বিস্মিত হবেন যে কেউ— শহরের ছাঁচে নয়, সম্পূর্ণভাবে গ্রামের নিজস্ব আবহে, কিন্তু গুণগত মানে শহরের সেরাদের টক্কর দিচ্ছে। একজন পর্যটক বলেছিলেন, “আমি ভাবতেও পারিনি, একটা গ্রামের মহিলা পরিচালিত পুজো এতটা থিম নির্ভর, পরিকল্পিত এবং আকর্ষণীয় হতে পারে!” (ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি)
advertisement
ত্রিনয়নী মহিলা সংঘের অন্যতম সংগঠক প্রতিমা প্রধান দাস জানালেন, “এই পুজো আমাদের আত্মসম্মানের প্রতীক। সমাজে এখনও অনেকেই ভাবেন, গ্রাম মানেই পিছিয়ে, মহিলা মানেই দুর্বল। কিন্তু আমরা দেখিয়েছি—নারীরাও পারে, যদি সুযোগ দেওয়া হয়। শুধু মণ্ডপ নয়, সমাজ গঠনের প্রতিটি স্তরেই আমরা ভূমিকা রাখতে চাই। আমরা গর্বিত এই সৃষ্টির জন্য।” (ছবি ও তথ্য: মদন মাইতি)