স্কুলের দেওয়ালে জ্ঞানের ভাণ্ডার! স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে নোবেলজয়ীদের নাম, পড়ুয়াদের জন্য পাল্টে গেল মেদিনীপুরের 'এই' বিদ্যালয়ের চেহারা
- Published by:Sneha Paul
- hyperlocal
- Reported by:Madan Maity
Last Updated:
East Medinipur News: বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়াই বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রতিটি দেওয়াল এখন শিক্ষার নতুন মাধ্যম। পড়ুয়ারা শুধু বই নয়, চোখে দেখেও অনেক কিছু শিখবে"।
চেয়ার, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড- সবই আছে, নেই শুধু পাঠশালার কোলাহল। শুনশান স্কুল চত্বর জুড়ে চলছে এক অন্য রকম কর্মযজ্ঞ। কাঁথির নয়াপুট সুধীর কুমার হাইস্কুলের চারটি ভবনের দেওয়ালে রঙ তুলি হাতে ছবি আঁকছেন দুই প্রাক্তন ছাত্র। প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে এই কর্মযজ্ঞে তৈরি হয়েছে শিক্ষণীয় ক্যানভাস। দু’জোড়া নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় নতুন রূপ পাচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রতিটি দেওয়াল। বদলে যাচ্ছে স্কুলের চেনা রূপ, ছড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার নতুন মাত্রা। যেখানে প্রতিটি দেওয়ালই কথা বলবে শেখার ভাষায়। (ছবি ও তথ্যঃ মদন মাইতি)
advertisement
দেওয়াল জুড়ে ফুটে উঠছে নানা শিক্ষণীয় বার্তা। কোথাও দেখা যাচ্ছে শিশু পথচারীকে জল দান করছে, কোথাও আবার গাছ লাগানোর দৃশ্য। বিদ্যালয়ের পিলারগুলিতে লেখা হয়েছে ১২ জানুয়ারি থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি বিশেষ দিবসের তাৎপর্য। পড়ুয়ারা প্রতিদিন পড়াশোনার পাশাপাশি এসব দেখে জানতে পারবে প্রতিটি দিনের গুরুত্ব। পাঠক্রমের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে জীবনের শিক্ষা। পাঠ্যবইয়ের বাইরে বাস্তব জীবনের শিক্ষা তুলে ধরতে এই উদ্যোগ।
advertisement
অন্য এক ভবনের দেওয়ালে স্থান পেয়েছে মনীষীদের স্মৃতিচারণ। আঁকা হয়েছে নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রতিটি নোবেলজয়ীর নাম। তুলে ধরা হয়েছে মনীষীদের ছবি, তাঁদের নাম, জন্ম, মৃত্যু ও অবদান। পিলারে লেখা হয়েছে ভারতের প্রথম এমএ পাশ মহিলা চন্দ্রমুখী বসু, প্রথম মহিলা মহাকাশচারী থেকে শুরু করে ভারতের প্রথম বিখ্যাত মহিলাদের নাম। পড়ুয়ারা এসব চোখের সামনে দেখে অনুপ্রাণিত হবে, বুঝবে নারীর শক্তি ও শিক্ষার গুরুত্ব। প্রতিটি লেখা যেন হয়ে উঠেছে এক নীরব পাঠশালা।
advertisement
অন্য ভবনের দেওয়ালে আবার ইতিহাসের রঙ। সেখানে আঁকা হয়েছে ভারতের কৃষক বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের চিত্র। রয়েছে ভারতের বিভিন্ন উৎসবের প্রতীক চিত্র। ফুটে উঠেছে দুর্গাপুজো, ঈদ, দীপাবলি, পোঙ্গল সহ নানা উৎসব। স্কুলের দেওয়াল যেন রঙিন বিশ্বকোষ, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটেছে। এই অভিনব উদ্যোগে পড়ুয়ারা পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের ইতিহাসও সহজেই জানতে পারবে।
advertisement
বর্তমান প্রজন্ম পাঠ্যবইয়ের জগতে সীমাবদ্ধ। সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার ক্রমশ শূন্য হচ্ছে। তাই পড়ুয়াদের চিন্তাভাবনার পরিসর বাড়াতেই এই উদ্যোগ। স্কুলের মধ্যে ঘুরলেই দেওয়ালের প্রতিটি ছবি তাঁদের মনে প্রশ্ন তুলবে, কৌতূহল জাগাবে। এইভাবে তাঁরা বইয়ের বাইরে থেকেও সমাজ, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুনভাবে শিখবে। এই শিক্ষা হবে আরও মানবিক ও আনন্দময়। রঙ-তুলির মাধ্যমে এই উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করেছেন বিদ্যালয়ের দুই প্রাক্তন ছাত্র লক্ষণ মাইতি ও বিশ্বদেব প্রধান।
advertisement
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়াই বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রতিটি দেওয়াল এখন শিক্ষার নতুন মাধ্যম। পড়ুয়ারা শুধু বই নয়, চোখে দেখেও অনেক কিছু শিখবে। পুজোর ছুটির পর তাঁরা যখন স্কুলে ফিরবে, তখন নতুন রঙে সাজানো বিদ্যালয় দেখে মন ভরে উঠবে। এই উদ্যোগে দুই প্রাক্তন ছাত্রের অংশগ্রহণ আমাদের গর্বিত করেছে।” (ছবি ও তথ্যঃ মদন মাইতি)