খেজুরিতে ২৫০ বছরের বছরের প্রাচীন দেশের প্রথম ডাকঘরকে অবশেষে হেরিটেজ স্বীকৃতি
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
Last Updated:
Khejuri Post Office: অবশেষে দীর্ঘ বছরের প্রতিক্ষার হোল অবসান! ঐতিহ্যবাহী খেজুরী জনপদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশের প্রথম ডাকঘরকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন।
অবশেষে দীর্ঘ বছরের প্রতীক্ষার অবসান! ঐতিহ্যবাহী খেজুরি জনপদে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশের প্রথম ডাকঘরকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। রাজ্যের অন্যান্য প্রাচীন নিদর্শনের মতো এবার থেকে আড়াইশো বছরের প্রাচীন এই স্থাপত্যের সামনেও বসবে নীল ফলক। সম্প্রতি এ ব্যাপারে জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। চলতি বছরের ২১ জুন খেজুরি জুড়ে ছড়িয়ে - থাকা একাধিক প্রাচীন স্থাপত্যের ওপর সমীক্ষা চালান হয়েছিল। সেই সমীক্ষা শেষে প্রাচীন ডাকঘরকে তালিকাভুক্ত করে সেটিকে হেরিটেজ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। (প্রতিবেদন: সৈকত শী)
advertisement
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী অঞ্চল খেজুরি। এই উপকূলবর্তী অঞ্চল অনেক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে বহুকাল থেকে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির প্রান্তরে বাংলা তথা ভারতের স্বাধীন সূর্য অস্তমিত হয়। ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আসা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাতারাতি বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হয়।
advertisement
খেজুরির ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরনো। খেজুরিতে ডাচ ওলন্দাজ ও পর্তুগিজ বণিকেরা বহু সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে এসেছে। খেজুরি সংলগ্ন হিজলিতে ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিকদের জাহাজ এসে পৌঁছায়। ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন জেমস মেরিনার নেতৃত্বে রেবেকা নামক একটি পালতোলা জাহাজ খেজুরি বন্দরে আসে।
advertisement
তৎকালীন খেজুরির নাম ছিল কেডিগিরি। সেই থেকে শুরু হয় খেজুরি বন্দর। এরও প্রায় একশো বছর পর ইংরেজরা ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে খেজুরি বন্দর গড়ে তোলে। মূলত লবণ, নীল ও দাসপ্রথার জন্য মানুষ কেনাবেচার ক্ষেত্র হিসেবে দ্রুতই খেজুরি বন্দরের নাম ছড়িয়ে পড়ে। খেজুরিতে ডাকঘর আরও কয়েক বছর পরে চালু হয়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিকদের ইন্ডিয়া কোম্পানির খবর আদান প্রদানের জন্য খেজুরিতে প্রথম ডাকঘর স্থাপন হয়। যা ভারতের প্রথম ডাকঘর।
advertisement
খেজুরির বাসিন্দা ও ইতিহাস গবেষক অরবিন্দ বেরা জানান, এশিয়াটিক সোসাইটি ও ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে প্রচুর বইপত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় এই ডাকঘরের। তিনিবলেন, "ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তথ্য আদান প্রদান করার জন্য ১৭৭২ সালে ভারতের প্রথম ডাকঘর তৈরি করেছিলেন ইংরেজ বণিকরা বা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। খেজুরি বন্দরের পাশেই গড়ে উঠেছিল চারতলা ডাকঘর। ১৮৩০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজা রামমোহন রায় এই ডাকঘরে রাত্রি যাপন করেছিলেন।'
advertisement
খেজুরিতে প্রথম শুধু ডাকঘর নয়, প্রথম টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল এই খেজুরি ডাকঘর থেকেই। ভারতের প্রথম তার যোগাযোগ ব্যবস্থাও শুরু হয়েছিল এই ডাকঘর থেকে। ১৮৫১ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ডব্লু বি ওসাগনেসে খেজুরি ও কলকাতার মধ্যে তার যোগাযোগ চালু করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পান।
advertisement
১৮৫২ সালে চালু হয় দেশের সর্বপ্রথম তার যোগাযোগ ব্যবস্থা-খেজুরি থেকে কলকাতা ভায়া ডায়মন্ডহারবার, বিষ্ণু্পুর, মায়াপুর, কুঁকরাহাটি। ৮২ মাইল লম্বা এই তার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রথমে অবশ্য চালু হয় খেজুরি থেকে কুঁকরাহাটি (হলদিয়া) পর্যন্ত। রাজা রামমোহন রায় তাঁর বিলেত যাত্রাকালে কলকাতা থেকে ফোবর্স স্টিমারে সকালে যাত্রা করে সন্ধ্যায় খেজুরি বন্দর অফিসে পৌঁছান ১৯ নভেম্বর, ১৮৩০। রাত্রে খেজুরি বন্দর অফিস তথা খেজুরির প্রাচীন ডাক ও তার ভবনের অতিথিনিবাসে রাত্রি যাপন করেন।
advertisement
রাত্রি যাপনকালে খেজুরি থেকে কলকাতার সংবাদপত্রে দুটি চিঠি লেখেন ও পরদিন ২০ নভেম্বর, ১৮৩০ খেজুরি বন্দর থেকে বিলেতের বিলেতের উদ্দেশে যাত্রা করে বিলেতের লিভারপুল বন্দরে পৌঁছন। গত ২১ জুন মঙ্গলবার রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের স্পেশাল অফিসার অন ডিউটি বাসুদেব মালিক ও তার সহকর্মী অরিন্দম রায় আসেন রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি বিজড়িত ভারতের প্রথম ডাকঘর খেজুরিতে এবং প্রাচীন ডাকঘরটি পরিদর্শন করেন।
advertisement