চিতার মতো 'স্পিড'! দেশের এই শহরে ট্রেন চলে জলের তলায়! চড়তে হলে নামতে হবে ১১তলা গভীরে
- Published by:Tias Banerjee
Last Updated:
এটি ভারতের প্রথম জলতল টানেল, যার নির্মাণ ছিল এক বিরাট প্রকৌশল চ্যালেঞ্জ। জার্মানিতে তৈরি বিশেষ টানেল বোরিং মেশিন (TBM) এবং হাইড্রোফিলিক গ্যাসকেট প্রযুক্তির সাহায্যে টানেলটি এমনভাবে গড়া হয়েছে যাতে কোনও অবস্থাতেই জল ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।
এই শহরে ট্রেন ছুটে চলে চিতাবাঘের গতিতে জলের উপর নয়, বরং জলের নীচে। ট্রেনে চড়তে হলে নেমে যেতে হয় মাটির ১১ তলা গভীরে। ভাবছেন অবিশ্বাস্য?
advertisement
আপনি হয়তো নদীর উপর দিয়ে কিংবা সাগরের উপর (যেমন রামেশ্বরমে) ট্রেন চলতে দেখেছেন। কিন্তু জলের নীচে, নদীর তলার ভিতর দিয়ে ট্রেন চলতে দেখেছেন?
advertisement
বেশিরভাগ মানুষই এমন দৃশ্য দেখে অবাক হবেন। অথচ এই আশ্চর্য প্রযুক্তির নিদর্শন ঘটেছে আমাদের দেশেই! কোথায় জানেন? বললে হাসবেন!
advertisement
ভারতের প্রথম জলের নীচ দিয়ে চলা মেট্রো ট্রেন এখন চলছে কলকাতায়। এটিই কলকাতার আন্ডারওয়াটার মেট্রো—যেখানে জলের নীচ দিয়ে ছুটে চলে আধুনিক যুগের এক বিস্ময়! এখানেই মেট্রো ট্রেন চলে হুগলি নদীর তলায় নির্মিত টানেল দিয়ে। ঘরের কাছে হলেও এই মেট্রো রুট নিয়ে সব তথ্য অনেকেই জানেন না।
advertisement
এই আন্ডারওয়াটার টানেলটি হুগলি নদীর তলায় তৈরি হয়েছে, যা নদীর পূর্ব তীরের এসপ্ল্যানেড স্টেশন এবং পশ্চিম তীরের হাওড়া ময়দান স্টেশনকে যুক্ত করেছে। টানেলটি মাটির প্রায় ৩৩ মিটার নীচে, অর্থাৎ প্রায় ১১ তলা গভীরে অবস্থিত।
advertisement
হাওড়া থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত পুরো দূরত্ব প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পথ নদীর নীচে টানেল দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। সেই অংশটি ট্রেন মাত্র এক মিনিটেই পেরিয়ে যায়।
advertisement
এই টানেলটির আয়ু নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ বছর—অর্থাৎ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এটি টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
advertisement
হুগলি নদীর নীচে এই টানেল তৈরি করা ভারতের ইতিহাসে প্রথম। নির্মাণের সময় প্রকৌশলীদের সামনে ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ—জলের প্রচণ্ড চাপ সামলে কী ভাবে এমন একটি টানেল তৈরি করা যায়, যাতে কাজের সময়ও জল ভিতরে ঢুকতে না পারে। দেশের অন্য শহরগুলিতে যদিও টানেল তৈরি হয়েছে, কিন্তু জলের নিচে এমন প্রকল্পের জন্য সাধারণ টানেল বোরিং মেশিন (TBM) ব্যবহার করা সম্ভব ছিল না।
advertisement
এই প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত TBM বা টানেল-বোরিং মেশিনটি তৈরি হয়েছিল জার্মানিতে। এর বিশেষত্ব ছিল—এটি মাটি কেটে টানেল তৈরি করার সময়ই চারপাশের দেওয়াল সিল করে দিতে পারত, যাতে কোনো জল প্রবেশ করতে না পারে। এমনকি যদি খননের সময় জলের চাপ সৃষ্টি হত, তবুও নির্মিত টানেল ক্ষতিগ্রস্ত হত না।
advertisement
এই টানেলে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে কোনো অবস্থাতেই জল ভিতরে ঢুকতে না পারে। প্রথমবারের মতো এখানে ব্যবহার করা হয়েছে হাইড্রোফিলিক গ্যাসকেট (Hydrophilic Gaskets) — যা জলের সংস্পর্শে এলে নিজের আকারের ১০ গুণ পর্যন্ত ফুলে ওঠে, ফলে টানেল আরও বেশি জলরোধী হয়ে ওঠে।
advertisement
পুরো আন্ডারওয়াটার টানেলটির দৈর্ঘ্য ৫২০ মিটার এবং উচ্চতা ৬ মিটার। এই স্বপ্নের প্রকল্পের ভাবনা প্রথম উঠে আসে ১৯৭১ সালের মাস্টার প্ল্যান-এ। তবে তখন কোনও উন্নয়ন হয়নি। বহু বছর পর, দিল্লি মেট্রোর সাফল্যের পর ২০০৮ সালে প্রকল্পটি সবুজ সংকেত পায়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, ২০২৫ সালে সম্পূর্ণ হয় ভারতের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো টানেল।
advertisement