জানেন ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’-এর ম্যাপ কী? এই মানচিত্রে কোন কোন জায়গা ঢুকেছে? চরম ভারত বিরোধী নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুতে ফের আলোচনা
- Published by:Satabdi Adhikary
Last Updated:
২০১৮ সালে রাব্বির হোসেন ভুঁইয়া কর্তৃক তৈরি একটি ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ মানচিত্রে এই সম্প্রসারিত সীমান্তগুলো দেখানো হয়েছিল। আজকের দাবিগুলো অস্পষ্টভাবে এই ইতিহাসের কথা বললেও, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
নির্বাচনী প্রচার করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন৷ গুলি লেগেছিল মাথায়৷ ভাল চিকিৎসা করানোর জন্য ইউনূস সরকারের উদ্যোগে এয়ারবাসে করে সিঙ্গাপুরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে৷ কিন্তু, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সেই যুবনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু হওয়ায় রাতারাতি হিংসা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশে। কট্টর ভারত বিরোধী হিসাবে পরিচিত, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন এই হাদি৷ তথাকথিত ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’-এর মানচিত্র প্রচার করেছিলেন এই হাদিই৷ সেই ‘বৃহত্তর বাংলাদেশে’র মানচিত্রে যেখানে ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
advertisement
৩২ বছর বয়সি হাদি গত ১৮ ডিসেম্বর মারা যান। গত সপ্তাহে ঢাকার বিজয়নগরে নির্বাচনী প্রচার শুরুর সময় কোনও এক মুখোশধারী হামলাকারীরা তাঁকে মাথায় গুলি করে। ঢাকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন যে তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক, তাই মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠায়। ছয় দিন পর মারা যান তিনি।
advertisement
২০২৪ সালের বাংলাদেশের ছাত্র অভ্যুত্থানের সময় ওসমান হাদি পরিচিতি লাভ করেন, যা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতনের দিকে পরিচালিত করে। পরে তিনি ইনকিলাব মঞ্চ প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হন এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। হাদি তাঁর তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বাগ্মিতা এবং আক্রমণাত্মক জনশৈলীর জন্য পরিচিত ছিলেন।
advertisement
তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বিশাল জনসমাগম হয় এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। রীতিমতো আগুন জ্বলে বাংলাদেশে৷ নানা সরকারি ভবন থেকে শুরু করে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর মতো সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় থাকা ভবনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ কর্মীরা ভেতরে আটকে পড়েন। রাজশাহীতে বিক্ষোভকারীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের একটি স্থানীয় কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছায়ানটের ভবনেও৷ পড়ে ছিল বাদ্যযন্ত্রের ভাঙা অংশ৷
advertisement
বৃহত্তর বাংলাদেশের মানচিত্র: ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ বলতে একটি বিতর্কিত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারণাকে বোঝায়, যা প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের কিছু অংশসহ একটি সম্প্রসারিত বাংলাদেশের কল্পনা করে। এই ধারণার সাথে সম্পর্কিত মানচিত্রগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রদর্শনীতে দেখা গেছে। এই ধারণাটি বাংলাদেশের একাংশের জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা এবং পাল রাজবংশের মতো ঐতিহাসিক রাজ্যগুলো থেকে অনুপ্রাণিত। এই বিষয়টি ভারতের জন্য কূটনৈতিক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
advertisement
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন অনুসারে, হাদি কথিতভাবে অনলাইনে এই ধরনের মানচিত্র প্রচার বা প্রদর্শন করেতেন, বা করছিলেন। এই ম্যাপগুলিতে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতসহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশাল এলাকাকে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যসহ এলাকাকে তথাকথিত ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’-এর অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
advertisement
‘সালতানাত-এ-বাংলা’ শিরোনামের এই মানচিত্রটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পয়লা বৈশাখ প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছিল। এই বিতর্কের পেছনের ধারণা বুঝতে গেলে পিছিয়ে যেতে হয় ব্রিটিশ শাসনের শেষ বছর পর্যন্ত। ১৯৪৭ সালে মুসলিম লিগ নেতা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির মতো নেতারা ভারত ও পাকিস্তান উভয় থেকে আলাদা একটি ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব করেছিলেন। এই প্রস্তাবটি গান্ধি ও জিন্নাহর কাছ থেকে প্রাথমিক সমর্থন পেলেও কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের হাইকম্যান্ডের তীব্র বিরোধিতার মুখে ব্যর্থ হয়।
advertisement
advertisement
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ ধারণাকে সমর্থন করেনি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আরও বলেছে যে হাদির হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সাথে কোনও আঞ্চলিক বা পররাষ্ট্রনীতিগত বিষয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সম্প্রতি পাক সফরে গিয়ে বাংলাদেশের বিতর্কিত মানচিত্র সংবলিত একটি বই উপহার দিতে দেখা গিয়েছিল পাক সেনা প্রধানকে৷






