রাজ্যের মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক পৌরসভা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। মোট ২৭ টি পুরসভা নিয়ে গড়ে ওঠা সুবিশাল জেলা গুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এই পুরসভা গুলির মধ্যে মডেল পুরসভা হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে মধ্যমগ্রাম পুরসভা। পরবর্তীতে রয়েছে হাবরা, বারাসাত সহ অন্যান্য পুরসভা গুলিও। তবে মধ্যমগ্রাম পুরসভার নানা পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি লাভ করেছে সাধারণ জনগণের মধ্যে। যার ফলে খুশি পৌরবাসীরাও।
পৌরসভার সূত্রে জানা যায়, নিজেদের পৌর এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুরসভা। সাফল্যও মিলেছে অনেকটাই দাবি পৌর কর্মীদের। এলাকার বর্জ্য সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার। সেই নোয়াই জৈব সার মধ্যমগ্রাম পুরসভা প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রিও করছে। ফলে এলাকার পরিবেশ দূষণ অনেকটাই রোধ করা সম্ভবপর হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মধ্যমগ্রাম পৌরসভার পুরপ্রধান নিমাই ঘোষ জানান, মধ্যমগ্রাম পুরসভা যে একটা মডেল হতে পারে তা এই পরিকল্পনা থেকে বলাই যায়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনেই ২৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে দুটি ওয়ার্ডে অর্থাৎ ২৬ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে নোয়াই জৈবসার কেন্দ্র। এলাকার বর্জ্য পদার্থ দিয়েই তৈরি হচ্ছে এই জৈবসার।মধ্যমগ্রাম পুরসভার উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এই নতুন প্রক্রিয়াটি চালু করা হয়েছে। পুরসভার ২৮ টি ওয়ার্ড এর প্রত্যেক বাড়িতে নীল ও সবুজ বালতি দিয়ে, কোন বালতিতে কী বজ্র পদার্থ ফেলতে হবে তা নির্দিষ্ট করে বুঝিয়ে বলে সচেতনতা প্রচার চালানো হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে সেই বর্জ্য পদার্থ নিয়ে এসে সেখান থেকে জৈবসার তৈরি করা হচ্ছে। এর জন্য মধ্যমগ্রাম পুরসভার উদ্যোগে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী দিনে প্রতিটি ওয়ার্ডে এই প্রকল্প গড়ে তোলা হবে বলেও পুরসভার তরফ থেকে জানানো হয়। মধ্যমগ্রামকে দূষণ মুক্ত ও মডেল পুরসভা করে তুলতে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের বিশেষ নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, নিজেদের এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উপর বেশি করে নজর রাখার জন্য।
অন্যদিকে, পলিথিন ও থার্মোকল মুক্ত মধ্যমগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সর্বচ্চ উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান মধ্যমগ্রামের পুরপ্রধান নিমাই ঘোষ।পুরসভার সকল কর্মী, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা শপথ নিয়েছেন মধ্যমগ্রাম কে পলিথিন ও থার্মোকল মুক্ত শহর গড়ে তোলার। মধ্যমগ্রাম শহরে সুস্থ পরিবেশ তৈরির জন্য বৃক্ষরোপণও করা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। একই ভাবে মধ্যমগ্রাম পৌরসভার অন্তর্গত যতগুলি জলাশয় আছে, সেগুলি সংরক্ষণ করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি মধ্যমগ্রাম পুরসভা দেওয়াল বাগান করার এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। রীতিমতো প্রচার চালিয়ে পুরসভা ইকো ফ্রেন্ডলি দেওয়াল বাগান তৈরির উপর সাধারণ বাসিন্দাদের অবগত করছে। এই ইকো ফ্রেন্ডলি দেওয়ালের ফলে ঘরের তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলে মত পুরসভার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক দফতরের। ইতিমধ্যে দুটি ওয়ার্ডে এই দেওয়াল বাগান করা হয়েছে। সেই দেওয়াল বাগানেও পুরসভার তৈরি নোয়াই জৈবসার ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান পুরপ্রধান। আপাতত দুটি ওয়ার্ডকে পাইলট প্রোজেক্ট করা হলেও, আগামী দিনে ২৮ টি ওয়ার্ডেই কার্যকরী হবে পুরসভার এই উদ্যোগ। দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে পুরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সমাজসেবী থেকে বুদ্ধিজীবী মহল।