advertisement
সুশাসন ও আইনশৃঙ্খলা: তৃণমূল সরকারের ইস্তেহারে প্রথমেই তুলে ধরা হয়েছে রাজ্যে শাসন, আইন-শৃঙখলাকে ৷ ইস্তেহার অনুযায়ী, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই গোটা পশ্চিমবঙ্গে সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন ভেঙে পড়েছিল ৷ নারীদের নিরাপত্তা থেকে পথ দুর্ঘটনা, কিংবা সাধারণ মানুষের দৈনদ্দিন নিরাপত্তা- কোনও ক্ষেত্রেই পূর্বতন সরকার (বামফ্রন্ট) যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেনি ৷ তাই বামফ্রন্টকে সরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের স্লোগন ছিল, ‘বদলা নয়, বদল চাই’ ৷ কিন্তু সত্যিই কি বদল এসেছে ৷ বিরোধীরা অবশ্য মনে করছে অন্যরকম ৷ তাঁদের হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে ৷ বিরোধীদের কথায়, ধর্ষণ কাণ্ডে গোটা দেশে এক নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ ৷ এই সরকারের আমলেই ঘটেছে কামদুনি, পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণের ঘটনা ৷ বিরোধীদের মন্তব্য, এই সব গণধর্ষণে রাজনীতির রং চাপিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো ‘সাজানো নাটক’ বলে মন্তব্য করেছে ৷ শুধু তাই নয়, চিট ফাণ্ডের কবলে পড়ে রাজ্যের বহু মানুষ বিপন্ন ৷ কালোবাজারীর সঙ্গে জড়িত মানুষেরা অবলীলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ বিরোধীদের প্রশ্ন কোথায় নিরাপত্তা? কোথায় সু-শাসন? তৃণমূল সরকারের ইস্তেহারে অবশ্য রয়েছে, উন্নতমানের আইন-শৃঙ্খলার কথা ৷ যেখানে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগে মোবাইল অ্যাপসের ব্যবহার, ই-নথিকরন, ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট, সিবিআই কোর্টের কথায় ৷ উল্লেখ রয়েছে, কামদুনি ও পার্কস্ট্রিট কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির কথাও ৷ তবে বিরোধীরা সমালোচনার চোখে দেখছে গোটা ইস্তেহারকেই৷
advertisement
স্বাস্থ্য: ইস্তেহার অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের খাতায় তৃণমূল সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, রাজ্যের সকলের জন্য সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা হবে মা-মাটি-মানুষের সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ৷ তৃণমূলের খতিয়ান অনুযায়ী, প্রসূতি মৃত্যুর হার যথাসম্ভব কমানোর প্রচেষ্টা ৷ তাই উন্নত চিকিৎসার পরিষেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছে তৃণমূল সরকার ৷ ইস্তাহার বলছে, রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালে সবার জন্য অন্তঃবিভাগীয় (indoor) চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে ৷ এমনকী, সরকারি হাসপাতাল গুলিতে সমস্ত রোগিকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে ৷ মহকুমাস্তরেও ICU -এর ব্যবস্থা রয়েছে ৷ মাত্র সাড়ে ৪ বছরে ১০৯ টি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলা হয়েছে ৷ যেখান থেকে বিভিন্ন ওষুধের দামে ৪৮ শতাংশ থেকে ৭৭.২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে ৷ শুধু তাই নয়, সস্তায় ডায়েলেসিস, গ্রামে গ্রামে CCU, ICU-এর ব্যবস্থা ৷ ৪১ টি মাল্টিসুপার হাসপাতাল, হোমিয়প্যাথি, যোগাসন, নেচারোপ্যাথিকে জনপ্রিয় করেত রাজ্যস্তরে পৃথক পরিকাঠামোর ব্যবস্থা ৷ স্বাস্থ্যের খাতে ইস্তাহারে এই খতিয়ানেরও বিরোধীতা করে বিরোধীদল ৷ বিরোধীদের কথায়, রাজ্যে স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ শোচনীয় ৷ হাসপাতাল থাকলেও, উপযুক্ত ব্যবস্থা ও সরকারি হাসাপাতাল গুলিতে দুর্নীতি ভরে যাওয়ায় সাধারণ মানুষেরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না ৷ সম্প্রতি কলকাতা মেডিকেল কলেজে শিশু বিভাগে শিশু মৃত্যু ঘটনার উদাহরণ তুলে, তৃণমূল সরকারের ইস্তাহারের সমালোচনা করতে ছাড়েনি বিরোধীপক্ষ ৷ গ্রামেগঞ্জে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও কম নয় রাজ্যে ৷ এমনকী, সম্প্রতি সরকারের কৃমিনাশক কর্মসূচীর ফলেও অসুস্থ হয়েছিলেন বহু শিশু ৷ বিরোধীরা সেই দিকেই আঙুল তুলছেন বার বার ৷
advertisement
শিল্প: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ করা ইস্তেহারে ‘শিল্প’কেই সর্বাধিক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ৷ বিরোধীদের কড়া চোখ, ইস্তেহারের বলা শিল্পন্নোয়নের দিকেই ৷ তৃণমূলের ইস্তেহার অনুযায়ী, শিল্পে সুবজ বিপ্লব আনার কথা বলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গোটা রাজ্যে শিল্প গড়ে তোলার স্বচ্ছ পরিবেশের কথাও বলা হয়েছে ইস্তেহারে ৷ ২০১৫-এর বেঙ্গল বিজনেস সামিটের প্রসঙ্গ তুলে ইস্তেহারে তুলে ধরা হয়, ২, ৪৩,১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, যা আগামী ৩ বছরে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে ৷ ইস্তেহার অনুযায়ী, বর্তমানে শিল্পক্ষেত্রে ২ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রূপায়ণের পথে ৷ আরও আড়াই লক্ষ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে ৷ তৃণমূল সুপ্রিমো আগেই জানতে শিল্প নিয়ে কথা উঠলেই, সিঙ্গুর প্রসঙ্গ টানতে ছাড়বেন না বিরোধীরা ৷ তাই ইস্তেহারেই বলে দিয়েছেন, সিঙ্গুরের কৃষি জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তৃমমূল সরকার স্বচেষ্ট ৷ যেকোনও ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়াবে তৃণমূল সরকার ৷ বিতর্কীত এলাকা শালবনিতে জিন্দলদের সিমেন্ট ও রং কারখানার শিল্যান্যাসের কথাও বলতে ছাড়েননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর বিরোধীরা সমালোচনার আঙুল তুলেছেন সেখানে থেকেই ৷ ইস্তেহারের সমালোচনায় অংশ নিয়েছিলেন বণিক মহলও ৷ প্রথমেই তারা বলেন, গোটা ইস্তেহারে শিল্পের বড়াই করলেও, তৃণমূল সুপ্রিমো গত পাঁচ বছরে রাজ্যে বলার মতো বড় মাপের শিল্প আসার কথা কিছুই বলেনি ৷ বণিক মহলের মন্তব্য, এ রাজ্যে শিল্পের রোগগুলি কী, তা মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন ৷ বণিক মহল ও বিরোধীদের মন্তব্য, সত্যি সত্যিই শিল্পায়ন চাইলে জমিনীতি নিয়ে নমনীয়তা প্রয়োজন ছিল ৷ সিন্ডিকেট রাজ এবং তোলাবাজি বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল ৷ তৃণমূল সরকার সে সব করেনি ৷ সমালোচনা করে বিরোধীরা বলেন, ২০১১-য় ক্ষমতায় আসার আগে মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছিলেন. ‘সেজ’ গড়ার অনুমতি দেবেন না ৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো সংস্থা জমি কিনেও, কাজ শুরু করতে পারেনি ৷ তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ টানায় ‘সেজ’ নিয়ে ছুতমার্গ বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ ২০১৩ সালে কেরল থেকে সফটওয়্যার রফতানির পরিমাণ ছিল ৭০০০ কোটি টাকা ৷ ২০১৪-তে তা আরও বেড়েছে ৷ অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে আইটি ক্ষেত্রে রফতানি বেড়েছে মাত্র ১১ শতাংশ !
advertisement
শিক্ষা ইস্তেহারে শিক্ষার খতিয়ানে প্রথমেই তৃণমূল সরকার শিক্ষা ও তার সঙ্গে যোগ করেছেন কর্মসংস্থানের কথা ৷ উচ্চশিক্ষাকে আরও বেশি প্রসারিত করতে জেলায় জেলায় নতুন নতুন সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, টেকনিকাল শিক্ষা, ভোকেশনাল শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে ৷ ইস্তেহারের বলা হয়েছে প্লেসমেন্টের সেলের কথাও ৷ শিক্ষার সঙ্গে ইস্তেহারে তুলে ধরা হয়েছে, সরকারের সবুজ সাথী অর্থাৎ স্কুলে-স্কুলে সাইকেল প্রদানের কথাও ৷ নারী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৷ সেই কথা মাথায় রেখেই সরকারের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প ৷ এমনকী, প্রাইমেরির ছাত্র-ছাত্রীদের জুতো দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে এর মধ্যে ৷ বিরোধী ইস্তেহারের এই পর্যায়কে চমক বলেই বণর্না করেছেন ৷ সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া ছাত্র বিক্ষোভের প্রশ্ন তুলে, সমালোচনা তৃণমূল সরকারকে সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা ৷ শুধু তাই নয়, টেট পরীক্ষা, অস্থায়ী শিক্ষকদের নিয়ে রাজনীতি ও দুনীর্তিকেও এক হাত নিতে ছাড়েননি বিরোধীপক্ষ ৷
advertisement
নারী ও শিশুকল্যাণ: ইস্তেহার অনুযায়ী, নারীর অধিকার রক্ষা ও মহিলা এবং শিশুদের সুরক্ষার দিকে বিশেষ করে দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ৷ আর সে কথা মাথায় রেখেই রাজ্যের ২০ টি জেলায় ১,১৪,০৯৬ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, অপুষ্টি দূর করতে ‘রেডি টু ইট’ খাবার প্রদান করা হচ্ছে ৷ যৌনকর্মী ও পাচার-হওয়া মহিলাদের সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য ‘মুক্তির আলো’ প্রকল্প, রূপান্তরকামী মানুষদের উন্নয়নে বিশেষ বোর্ড প্রতিস্থাপনের কথায় বলা হয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে ‘উইম্যান এমপ্লয়েন্ট ব্যাঙ্ক’ তৈরি করার কথাও বলা হয়েছে ৷ যা মহিলাদের কর্মসংস্থানকে সুদৃঢ় করবে ৷ শিশু ও নারী পাচার আটকাতে নতুন পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে ৷ তবে সব থাকলেও, বিরোধীদের প্রশ্ন, নারী নিরাপত্তা দিতে পাচ্ছে না এই সরকার ৷ শহর হোক বা গ্রামে রোজ রোজ বেড়ে চলেছে ধর্ষণকাণ্ড, এমনকী শিশু স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও অন্যান্য রাজ্য থেকে পিছিয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ ষ শিশুবিকাশেও পিছিয়ে এই রাজ্য ৷ মৃত্যুর হারও অন্যরাজ্যের থেকে বেশি এই রাজ্যে ৷
advertisement
নগরোন্নয়ন ও পরিবহণ: নগরোন্নয়নের ব্যাপারে সৌন্দার্য্যয়নকেই বেশিমাত্রায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই ইস্তেহারে ৷ শহরে ইকো ট্যুরিজম, নতুন পার্ক, আলোর ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ সঙ্গে রাস্তার প্রসার, জল প্রকল্প , ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, গীতাঞ্জলি ও নজরুল মঞ্চের সংস্কারের কথাও বলা হয়েছে ৷ শহরে নতুন উড়ালপুল, যেমন পরমা, কামালগাছী ৪ লেন উড়ালপুলের কথা বলা হয়েছে ৷ কল্যাণী, শান্তিনিকেতন, বারুইপুর, আসানসোলকে সমৃদ্ধি সিটি এবং হাওড়ায় স্পোর্টস সিটির সঙ্গে শিলিগুড়িতে তিস্তা সিটি গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে ৷ নগরোন্নয়নের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে পরিবহনকেও, অন্ডালে নতুন বিমান বন্দর, দুর্গাপুর, আসানসোল, শিলিগুড়ি, গঙ্গাসাগর, দীঘা হেলিকপ্টার সার্ভিস, শহরের রাস্তায় এসি বাসের কথাও বলা হয়েছে ৷ ইস্তেহারে বাদ পড়েনি বিদ্যুৎ সরবরাহের কথাও, বাংলায় ‘লোড শেডিং নেই’, ‘সবার ঘরে আলো’ এই ধরণের মন্তব্য করেই ইস্তাহারে বাংলার নগরোন্নয়নকে তুলে ধরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ কিন্তু বিরোধীরা অল্প কথায় জানিয়েছে, ইস্তেহারের পাতায় থাকা এই বিষয়গুলি বাস্তবে মরীচিকা ৷ এদের উপস্থিতি থেকেও নেই ৷ এমনকী, কলকাতার রাস্তায় সারা রাত বাস চলার ব্যাপারেও, বার বার নতুন নতুন ঘোষণা হলেও, বাস দেখাই যায় না ৷ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, পথদুর্ঘটনার হার প্রচুর ৷ বর্ষাকালে রাস্তার হাল বেহাল, নিকাশী ব্যবস্থাও বেশ দুর্বল ৷ একটু বৃষ্টি হলেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জল ৷ বিরোধীদের প্রশ্ন এটাই কি নগরোন্নয়ন ?
advertisement
কৃষি: তৃণমূল সুপ্রিমো ইস্তেহারে এবার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে কৃষিতেই ৷ মা-মাটি-মানুষের কথা মাথায় রেখে ইস্তেহারে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নকেই তুলে ধরেছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ ইস্তেহার অনুযায়ী, খাদ্যশস্য উৎপাদনে উৎকর্ষের জন্য আমাদের রাজ্য চলতি বছর নিয়ে পরপর চারবার ভারত সরকারের ‘কৃষি কর্মণ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে ৷ শুধু তাই ইস্তেহার অনুযায়ী কৃষকদের পারিবারিক আয়ও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ পরিবারপিছু বার্ষিক আয় ২০১০-১১ সালে ছিল মাত্র ৯৩ হাজার টাকা, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে তা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ৷ ইস্তেহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র সাড়ে ৪ বছরে তৃণমূল সরকার ৬৯ লক্ষ কৃষক পরিবারের হাতে ‘কিষান ক্রেডিট কার্ড’ তুলে দিয়েছে ৷ রাজ্যে ১৭৬টি কৃষক বাজার গড়ে উঠেছে ৷ এর মধ্যে ১২১ টিরও বেশি কৃষক বাজারের কাজ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে ৷ মৎসচাষের ক্ষেত্রে ৮১০ টি বৃহৎ জলাশয়ে মৎসচাষ শুরু হয়েছে ৷ ১.৩৮ লক্ষ মৎসচাষীকে বায়োমেট্রিক কার্ড প্রদান করা হয়েছে ৷ কৃষির উন্নতির জন্য জেলায় জেলায় কৃষি ভবন তৈরি করা ৷ তবে এক্ষেত্রেও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন শিল্প করার জন্য কৃষকদের থেকে জমি নেওয়ার ঘটনায় ৷ বিরোধীদের সোজাসাপটা প্রশ্ন, তৃণমূল সরকার একদিকে কৃষির উন্নতি চাইছে, অন্যদিকে শিল্প গড়ার জন্য কৃষকদের থেকে জমি নেওয়ার কথা বলছে ৷ শালবনি ও সিঙ্গুরের প্রশ্ন তুলে কৃষি ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকারের খতিয়ানকে সমালোচনয়া বিঁধছে বিরোধীপক্ষ ৷
advertisement
জঙ্গলমহল, পাহাড় ও চা বাগান জঙ্গলমহল, পাহাড় বাংলার রাজনীতির উগ্র চর্চার কেন্দ্র ৷ ইস্তেহারে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শান্তি ফিরেছে পাহাড়ে ৷ জঙ্গলমহল আজ শান্ত ৷ মাও রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে জঙ্গলমহলে এখন শান্তির হাওয়া ৷ আর এর পুরোটাই তৃণমূল সরকারের জন্য ৷ ইস্তেহারে দেওয়া খতিয়ান অনুযায়ী, বিগত সাড়ে চার বছরে জঙ্গলমহলে উন্নয়নের কাজ এক অন্যমাত্রা পেয়েছে ৷ আমাদের রাজ্যের মোট ২৪ টি ব্লকের মানুষ (পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১ টি, পুরুলিয়ায় ৯টি ও বাঁকুড়া জেলার ৪ টি) জঙ্গলমহল এলাকার অন্তর্ভুক্ত ৷ ২০১৫ সালে বীরভূম জেলার ১০ টি বল্কও এর আওতায় এসেছে ৷ ইস্তেহার অনুযায়ী, এই এলাকার মানুষের সরকারি কাজের সুবিধা এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রামকে একটি পৃথক জেলা এবং জেলার ঝালদা এবং মানবাজারকে ২টি পৃথক মহকুমা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ৷ জঙ্গলমহল এলাকার মূল সমস্যা হল ভূপ্রকৃতিগত কারণে মাটিতে জলধারণ ক্ষমতা কম তাই এই এলাকায় জলতীর্থ প্রকল্প তৈরি করার কথাও ভাবা হচ্ছে ৷ চা বাগানের সমস্যা সমাধানে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছে সরকার ৷ প্রকল্প অনুযায়ী, চা বাগান বন্ধ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে ৷ চা বাগানগুলি থেকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু করা হয়েছে ৷ মেডিকেল ইউনিট, উন্নতমানের পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে ৷ এছাড়াও পেনশন, খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুনিশ্চিত করার উদ্যোগে তৃণমূল সরকার বদ্ধপরিকর ৷ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, সবই প্রকল্প ও পরিকল্পনায় আটকে ৷ আজও চা বাগানে পরিস্থিতি ঠিক হয়নি ৷ একের পর এক চা বাগান বন্ধ হওয়ার বিপর্যস্ত চাবাগানের শ্রমিকেরা ৷ অপুষ্টি, মৃত্যুর হার প্রচুর ৷ শ্রমিক আত্মহত্যার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে ৷
advertisement
সংখ্যালঘু উন্নয়ন: ইস্তেহারে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ইস্তেহার অনুযায়ী, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন, তাঁদের কর্মসংস্থানে প্রাধান্য দেওয়া এবং তাঁদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ দফতর গঠনের কথা বলা হয়েছে ৷ বিশেষ করে নজর দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু স্কলারশিপ ও ঋণের উপর ৷ ইস্তেহার অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের স্ব-রোজগারের জন্য ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশে ১ নম্বর স্থানে ৷ সংখ্যালঘুদের সম্প্রদায়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ২০১০-১১ আর্থিক বছরের বাজেটে বরাদ্দ ৪৭২ কোটি টাকা থেকে বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৩৮৩ কোটি টাকা হয়েছে ৷ ইস্তেহার অনুযায়ী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৯১ জন ডাক্তারিতে, ২৫ জন WBCS-এ এবং ৯ জন WBJS-এ সফল হয়েছেন ৷ সংখ্যালঘু মানুষকে উচ্চশিক্ষার দিকে নিয়ে যেতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কসার্কাস ক্যাম্পাসে কাজও শেষ হয়েছে ৷
advertisement
পর্যটন: ইস্তেহার অনুযায়ী, পর্যটনের বিকাশেও রাজ্য খুবই এগিয়ে ৷ পর্যটনের বিকাশে বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল সরকার ৷ চালু করা হয়েছে West Bengal Incentive Scheme ৷ শুরু হয়েছে ECO Tourism, Home Tourism, Tea Tourism, Adevnture Sports প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ৷ পর্যটন বাড়াতে Home Stay Tourism এর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ ট্যুরিজমের সহায়ক সরকারী ট্যুর প্ল্যান, ট্যুর গাইড, যাতায়াত ব্যবস্থা, পর্যটকদের নিরাপত্তা সব দিকেই নজর দিয়েছে সরকার ৷ পাহাড় থেকে সমতল, শহর থেকে সৈকত সবদিকেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উন্নত ট্যুরিজমকে ৷ উৎসব, মেলা, অনুষ্ঠানের প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে পর্যটনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা ৷