Durga Puja 2025: আমেরিকার ডেলাওয়ারে প্রবাসীদের অতি আপন পুজো উড়ান, ক্রিস্টিনা নদীর পারে যেন একটুকরো বাংলা!
- Published by:Raima Chakraborty
- news18 bangla
Last Updated:
Durga Puja 2025: উড়ান বিদেশে আয়োজিত হলেও পুজোর পুরোহিতরা প্রতিটি নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন এখানে। মায়ের বোধন থেকে সন্ধিপুজো, চণ্ডীপাঠ, পুষ্পাঞ্জলি বা মায়ের দর্পণ বিসর্জন, সিঁদুর খেলা কিছুই বাদ যায় না।
শারদীয়ার এই সময়টায় শরতের আকাশে যখন পেঁজা তুলোর মতো মেঘরাশি ভেসে আসে, সেটা যে শুধু বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে তা কিন্তু নয় - সুদূর প্রবাসেও সে রকম নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখা যায় উত্তর আমেরিকার ডেলাওয়ার রাজ্যে। ক্রিস্টিনা নদীর পার বরাবর বোর্ডওয়াক দিয়ে উইলমিংটন শহর থেকে ফিলাডেলফিয়া শহরের দিকে আসতে গেলে কাশ ফুলের সমারোহ দেখতে দেখতে মনটা সকলের অজান্তেই পৃথিবীর অন‍্য প্রান্তে চলে আসে। (ছবি ও তথ্য-- বিশ্বরূপা চৌধুরী, ডেলাওয়ার)
advertisement
এখানে যদিও শরৎকালের এই সময়টা অনেকটা শীতল হয়ে আসে আর তাই গাছের পাতা পড়ার আগে বিভিন্ন গাছে নানা বিচিত্র রঙের সম্ভার দেখতে পাওয়া যায়, যাকে ফল ফোলিয়েজ বলা হয়ে থাকে। ঢাকে কাঠি পড়তেই আর ইউটিউবে মহালয়ার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ শোনামাত্রই বাঙালির মন বিচলিত হবে না-- এ হতেই পারে না। “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী”। কলকাতার মতো এখানেও শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে ছিল ক'দিন। রবিবার শেষ হল উড়ান-এর দুর্গোৎসব ২০২৫।
advertisement
বিগত ১২ বছর ধরে ‘উড়ান’ নামক একটি ক্লাব শারদোৎসবের আয়োজন করে চলেছে প্রবাসী বাঙালিদের জন‍্য। তবে এই ক্লাব অপেক্ষাকৃত নবীন হলেও আয়োজনের আয়তনে প্রবীণদের সমকক্ষ! এখানে আবালবৃদ্ধবনিতা করজোড়ে একসঙ্গে মায়ের বন্দনা করে ডেলাওয়ারের নেওয়ার্ক শহরের উপকণ্ঠে। উড়ানের আয়োজকরা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সকল অনুরাগীরা নিজ নিজ কল্পনা খাটিয়ে প্রতি বছর নতুন সাজে সাজিয়ে তোলেন ঊমাকে। সারা বছরের প্রস্তুতি যখন ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে তখন পরিতৃপ্ত হাসি প্রসাধন টিমের মুখে যেন অমলিন।
advertisement
স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বহর এখানেও কিছু কম না। দেশে সারেগামাপা বা ইন্ডিয়ান আইডলের মতো ট‍্যালেন্ট হান্টে অংশগ্রহণকারী অনেকেই পরে বিদেশে চলে এলে এখানেও তাঁদের চর্চা বজায় রাখেন। তাঁরাই এখানে কচিকাঁচাদের পথপ্রদর্শক। এর সঙ্গে বড়দের এবং ছোটদের জন‍্য নাটক উপস্থাপনা। নির্দেশক দিনরাত রিহার্সাল করেন আরও নিখুঁত পরিবেশনার জন্য।
advertisement
তবে অবশ্যই বড় চমক দেশের ‘শিল্পী আকর্ষণ’। কুমার শানু, নচিকেতা, ইমন, লগ্নজিতা, অনুপম রায় বা কার্তিক দাস বাউল থেকে শুরু করে রূপম ইসলাম, সোমলতা, তিমির, ঋষি পান্ডা-- বহু তাবড় শিল্পী বিগত বছরগুলিতে উড়ানের দুর্গোৎসবের আসর মাতিয়েছেন। এবারের চমক যেমন সুরজিত ও বন্ধুরা এবং অন্বেষার সুরমূর্ছনা। তা নিয়ে আর্টিস্ট ম‍্যানেজমেন্ট টিম সদাই ব‍্যস্ত। এই কদিন, একদিকে সাউন্ড সিস্টেমের চেক চলছে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ের জন‍্য। সব কিছু মিলে বেশ সাজ সাজ রব। কচিকাঁচারা ওদিকে ছোটাছুটি করছে, আবার অপরদিকে সদ‍্য দাদু-দিদারা তাঁদের নাতি-নাতনিদের সামলাতে সামলাতে পুজোর অনাবিল আনন্দ উপভোগ করছেন একছাদের তলায়।
advertisement
তা ছাড়াও বাঙালির পুজোয় কব্জি ডুবিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন রীতিমতো নজরকাড়া। ‘উড়ান’ ক্লাবের পুজো কমিটির কালচারাল সেক্রেটারি সূদুর বেয়ার থেকে জানালেন, “বাঙালিরা বড়াবড়ি আন্তরিকতার খোঁজে সন্ধিৎসু। আর তার সঙ্গে যদি সাংস্কৃতিক যোগাযোগ পায় তবে তো আর কথাই নেই। চেষ্টা করি যেটা আমি আমার ছোটবেলায় পেয়েছি সেই মঞ্চটা যেন আমার সন্তানসম সব ছোটদেরই দিতে পারি এই উৎসবের আঙিনায়।” বিদেশে যেহেতু ছুটি পাওয়া খুবই দুষ্কর তাই এই কটা দিন সকলে চেষ্টা করে একটি বৃহৎ পরিবারের মতো করে নিজেদের মধ্যে উপোভোগ করে নিতে।
advertisement
এবছরের পুজোর প্রস্তুতি কেমন ছিল? লম্বা ফিরিস্তি দিলেন ফুড কমিটির দুই সদস‍্য। “এবারে এখানে ৩ দিন পুজো পালিত হবে। তার মধ্যে শনিবার (৪ অক্টোবর) এবং রবিবার (৫ অক্টোবর) রয়েছে সুস্বাদু মেনু! থাকছে ফুলকো লুচি ও নবরত্ন ছোলার ডাল, পাশতুনি চাপলি কাবাব, নবাবী বিরিয়ানি, গোস্ত ভুনা, চাটনির মতো পদ। অন্যদিকে মিষ্টি মুখের তালিকায় থাকছে ওপার বাংলার রাজকীয় রসগোল্লা এবং নলেন গুড়ের সন্দেশ। বাঙালির দুর্গোৎসবে এসব না হলে কি চলে?” এই চত্বরে গৃহিনীরা হেঁশেলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন এই সপ্তাহান্তে-এ তো বলাই বাহুল্য। আপনারা চাইলে উড়ানের ওয়েবসাইটে চোখ বুলিয়ে দেখলেই বুঝবেন। udaandelaware.org | এ বছরই উড়ানের ওয়েবসাইটখানিও নব কলেবরে সেজে উঠেছে।
advertisement
উড়ান বিদেশে আয়োজিত হলেও পুজোর পুরোহিতরা প্রতিটি নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন এখানে। মায়ের বোধন থেকে সন্ধিপুজো, চণ্ডীপাঠ, পুষ্পাঞ্জলি বা মায়ের দর্পণ বিসর্জন, সিঁদুর খেলা কিছুই বাদ যায় না। তবে বাকি পুজোর মতো এখানে কোনও মেম্বারশিপ লাগে না - সকলের জন‍্য একই সুবিধে। আক্ষরিক অর্থেই তাই - আপনারা পাঠকরাও যদি পুজোয় এই চত্বরের আসে পাশে থাকেন এই সময়টা - একবার ঢুঁ মেরে যেতেই পারেন আর প্রবাসী বাঙালিদের অভ‍্যর্থনায় কোনও খামতি রাখতে চায় না। (ছবি ও তথ্য-- বিশ্বরূপা চৌধুরী, ডেলাওয়ার)