'পথের পাঁচালী'র স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন চিরকূটে! জন্মশতবর্ষে অজানা কিছু গল্প...
- Published by:Shubhagata Dey
- news18 bangla
Last Updated:
সত্যজিৎ যখন তাঁর প্রথম ছবি 'পথের পাঁচালী' পরিচালনা করেন, তখন জানতেনই না ছবির কোনও স্ক্রিপ্ট হয়।
সত্যজিৎ রায়। এই নামটা বলার পর আর বোধহয় কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। বাঙালির মনে শুধু নয় গোটা বিশ্ববাসির মনে তাঁর একটাই জায়গা। বিশ্বের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তাঁর নাম আগে আসবেই। 'পথের পাঁচালী' থেকে শুরু করে 'গুপি গায়েন বাঘা বায়েন' থেকে 'আগুন্তুক' এই ছবির যাত্রাপথ কম কঠিন ছিল না। photo source collected
advertisement
গোটা জীবনে তিনি ৩৫-এরও বেশি ছবি পরিচালনা করেছেন। সেই বিশ্বপ্রিয় পরিচালকের আজ মৃত্যু দিন। ১৯২১ সালের ২মে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, সাহিত্যিক, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার হিসেবে তিনি পরিচিত। তাছাড়া তাঁর লেখা বই-য়ের কথা আর নতুন করে বাঙালিকে বলে দিতে হবে না। তাঁর সাহিত্যিক মানও তাঁর সমকালীন সময়ের কোনো প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক থেকে কম ছিলো না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্যজিৎ রায় তাঁর সমকালকেও ছাড়িয়ে গেছেন। সত্যজিতের অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’ তাঁর সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর বয়ে চলছে যুগ থেকে যুগান্তরে। photo source collected
advertisement
‘পথের পাঁচালী’ সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের যাত্রা শুরু। এরপর একে একে নির্মাণ করেন, পরশ পাথর , জলসা ঘর, অপুর সংসার, অভিযান, মহানগর, কাপুরুষ ও মহাপুরুষ , নায়ক, গুপি গাইন বাঘা বাইন , অরণ্যের দিন রাত্রি, সীমাবদ্ধ, অশনি সংকেত সোনার কেল্লা জন অরণ্য, শতরঞ্জ কি খিলাড়ী, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণ শত্রু, শাখা প্রশাখা এবং সর্বশেষ বানানো সত্যজিতের সিনেমার নাম আগুন্তুক। photo source collected
advertisement
অসাধারণ সব চলচ্চিত্র নির্মাণ যেমন করেছেন, তার জন্যে হয়েছেন পুরস্কৃতও। তাঁর পুরস্কারের ঝুলি দেখে মনে হবে যেনো জাতীয় পুরস্কারের চেয়ে তিনি আন্তর্জাতিকভাবেই বেশী স্বীকৃত! আজীবন সম্মানস্বরূপ একাডেমি পুরস্কার (অস্কার) অর্জন ছাড়াও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন তিনি। যা তার আগে একমাত্র মহান নির্মাতা ও অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনই পেয়ে ছিলেন। ফ্রান্সের সরকার ১৯৮৭ সালে তাঁকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার ‘লেজিওঁ দনরে’ প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে অর্জন করেন ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই ভারত সরকার তাঁকে প্রদান করেন দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন। সেই বছরেই মৃত্যুর পরে তাঁকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। photo source collected
advertisement
জানেন কী সত্যজিৎ যখন তাঁর প্রথম ছবি 'পথের পাঁচালী' পরিচালনা করতে গিয়েছিলেন তখন তিনি জানতেন না ছবির জন্য আলাদা করে স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হয়। সেটে সবাই রেডি শ্যুটিংয়ের জন্য। সহ পরিচালক এসে তাঁর কাছে স্ক্রিপ্ট চাইলে তিনি বলেন, 'স্ক্রিপ্টের কী দরকার? আমি যা বলবো ওরা তাই করবে বলবে। আলাদা করে স্ক্রিপ্টের কী দরকার?' সবাই তো এই কথা শুনে হা। তারপর তিনি বলেছিলেন, 'ঠিক আছে পেন আর কাগজ নিয়ে এস। আমি লিখে দিচ্ছি।' সেই মতো তিনি ছোট কাগজের টুকরোতে একটা করে দৃশ্য এঁকে দিলেন। এবং কে কি কথা বলবে তা তখনই বসে লিখে লিখে দিলেন। এই চিরকুট গুলোই ছিল 'পথের পাঁচালী'র স্ক্রিপ্ট। এই থেকেই বোঝা যায় তিনি ছিলেন কালজয়ী পরিচালক। মাথায় পুরো বিষয়টা এমনভাবে গেঁথে নিতেন যে তাঁর কোনও কিছুরই দরকার পড়তো না। photo source collected
advertisement
advertisement
স্বাধীনতার পরে যখন দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার সময়, তখন চলচ্চিত্র পরিচালকদের পৃষ্ঠপোষক হয়েছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও ইন্দিরা গান্ধী। দুজনেই ছিলেন চলচ্চিত্রমোদী এবং ভারতীয় পরিচালকদের বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে প্রভূত উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁরা। ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরামর্শদাতা মারি সিটন ছিলেন নেহেরুদের পারিবারিক বন্ধু। রুশ কিংবদন্তি পরিচালক সের্গেই আইজেনস্টাইনের জীবনী লেখার পরেই নেহেরু পরিবারের আমন্ত্রণে তিনি ভারতে আসেন। photo source collected
advertisement
সিটনের সহায়তায় সরকারী চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রচারই ছিল তাঁকে এদেশে আমন্ত্রণ জানানোর মূল উদ্দেশ্য। অনেকেই হয়তো জানেন না, ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের দরবারে ভারতীয় শিল্পকলাকে তুলে ধরতে অত্য়ন্ত উত্সাহী ছিলেন। ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'পথের পাঁচালী'-র সূত্র ধরেই সত্যজিত্ রায় ও তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে অবহিত হন ইন্দিরা। মারি সিটন-ও ভূয়সী প্রশংসা করেন ছবির। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে নিও-রিয়্যালিজমের সূত্রপাত করেছে 'পথের পাঁচালী', নেহেরু পরিবারকে ছবি সম্পর্কে এমনটাই জানিয়েছিলেন সিটন। photo source collected
advertisement
সত্যজিতের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী ও মারি সিটনের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। মারি সিটন 'পথের পাঁচালী'-র প্রসঙ্গে জানার পরে কলকাতায় আসেন এবং কলকাতা ফিল্ম সোসাইটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগী হন। ওই সোসাইটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, পঞ্চাশের দশকের শুরুতে এই সোসাইটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ সদস্যই তখন নিজের নিজের ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। মারি সিটন দীর্ঘ সময় কলকাতায় থাকেন এবং ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা সত্যজিতের জীবনীগ্রন্থ- 'পোর্ট্রেট অফ আ ডিরেক্টর- সত্যজিত্ রে'। photo source collected
advertisement
advertisement