বর্তমান সময়ে টিভি ধারাবাহিক হোক কিংবা ছবি, সব জায়গাতেই অন্তরঙ্গ দৃশ্য প্রায় জল-ভাত হয়ে গিয়েছে। আসলে ছবির প্রয়োজনে এবং স্ক্রিপ্টের চাহিদার কারণে প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই পর্দায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়। কিন্তু বিষয়টা আপাতদৃষ্টিতে সহজ হলেও আদতে ওই দৃশ্যে অভিনয় করাটা ততটাও সহজ নয়। আর এটা বহু তারকাই নিজে মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন। অথচ যখন আমরা ফিল্মে দেখি, তখন মনে হয় কতটা অনায়াসে এবং সাবলীল ভঙ্গিতে তারকারা সুন্দর করে অন্তরঙ্গ দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে তাঁরাই স্বীকার করেছেন যে, অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় খুবই কঠিন এবং জটিল। আজ এমনই কিছু তারকার বিষয়ে কথা বলব আমরা। যাঁরা খোদ স্বীকার করেছেন অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করার চ্যালেঞ্জের কথা। সেই তারকাদের সম্পর্কে বলব যাঁরা স্বীকার করেছেন যে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শ্যুটিং করা কঠিন। এমনকী সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং আতঙ্কের কথাও বলেছেন তাঁরা।
নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন ববি দেওল: সম্প্রতি পরিচালক প্রকাশ ঝা-র ওয়েব সিরিজ 'এক বদনাম: আশ্রম সিজন ৩'-এ দেখা গিয়েছিল অভিনেতা ববি দেওলকে। সিরিজের তৃতীয় পর্বে সোনিয়া চরিত্রে দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রী এষা গুপ্তাকে। এই ওয়েব সিরিজে এষা এবং ববির মধ্যে অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখা গিয়েছে। যা দেখে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছিল ভক্তমহলে। কিন্তু সিরিজ মুক্তির পাওয়ার পরে যখন ববিকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ওই সিরিজের অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতে গিয়ে যারপরনাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। স্পটবয়-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ববি দেওল বলেছিলেন যে, এষা গুপ্তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে রীতিমতো নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্ক্রিপ্টের চাহিদার কারণে দৃশ্যটিকে সহজ করে তুলেছিলেন খোদ অভিনেতাই। তিনি জানিয়েছিলেন যে, এষা খুবই পেশাদার এক জন অভিনেত্রী। ফলে স্বচ্ছন্দেই এই দৃশ্য উতরে দিতে পেরেছেন তিনি। এর পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই সব শ্যুটিং হয়েছে। আর মানুষও এটিকে অনেক পছন্দ করেছে।
হাত-পা কেঁপে গিয়েছিল রণবীর কাপুরের: অন্তরঙ্গ দৃশ্যে যে অভিনয় করা সহজ নয়, সেই কথা অকপটে জানিয়েছেন কাপুর পরিবারের সন্তান রণবীর কাপুরও। ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল। রণবীর কাপুরের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অনুষ্কা শর্মা এবং ঐশ্বর্য রাই বচ্চন। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে বচ্চন-বধূর সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছিল রণবীরকে। একটি সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছিলেন তিনি। রণবীর জানিয়েছিলেন যে, রাইসুন্দরীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শ্যুটিং করার সময় তিনি এতটাই নার্ভাস হয়েছিলেন যে তাঁর হাত রীতিমতো কাঁপতে শুরু করে দিয়েছিল। এমনকী ঐশ্বর্যর গাল স্পর্শ করার সময়ও বেশ নার্ভাস ছিলেন তিনি। রণবীরের এ হেন অবস্থা দেখে ঐশ্বর্য বিষয়টিকে সহজ করে তোলেন। দৃশ্যটি যাতে সঠিক ভাবে হয়, সেই জন্য রণবীরকে সাহায্য করেছিলেন অভিনেত্রী।
জ্যাকি শ্রফও বিব্রত বোধ করেছিলেন: 'দ্য ইন্টারভিউ: নাইট অফ ২৬/১১'-তে অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতে দেখা গিয়েছিল জ্যাকি শ্রফকে। যখন অভিনেতাকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, “অন্তরঙ্গ দৃশ্যে শ্যুটিং করার সময় আমি লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। আসলে এই ধরনের দৃশ্য করতে গিয়ে আমি সাধারণত ঘাবড়ে যাই। তবে এটা আমি করেছি, কারণ আমি একজন অভিনেতা। আর এটা যদি চরিত্রের অংশ হয়, তবে এক জন অভিনেতাকে সেটা করতেই হবে।"
ভয়ে অস্বস্তিতে মেক-আপ রুমে গিয়ে বসেছিলেন ডিম্পল কাপাডিয়া: অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শ্যুটিং করতে গিয়ে বেশ অস্বস্তিবোধ করেছিলেন ডিম্পল কাপাডিয়াও। 'প্রেম ধর্ম' ছবিতে বিপরীতে ছিলেন বিনোদ খান্না। মহেশ ভাট পরিচালিত এই ছবিতেই ছিল সেই অন্তরঙ্গ দৃশ্য। যার শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল রাতের দিকে। তার উপর ছবির দৃশ্যের প্রয়োজনে সেটের আলোও রাখা হয়েছিল খুবই ম্লান। ক্যামেরার ও-পার থেকে পরিচালক অ্যাকশন বলা মাত্রই বিনোদ খান্না জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে শুরু করেন ডিম্পলকে। এমনকী দৃশ্যে এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে, পরিচালক কাট বলার পরেও অভিনেত্রীকে ছাড়েননি বিনোদ খান্না। এতেই ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েন ডিম্পল। কোনও রকমে অভিনেতার হাত ছাড়িয়ে নিজেকে মুক্ত করে মেক-আপ রুমে দৌড়ে পালিয়ে যান তিনি।
অস্বস্তিতে ছিলেন মল্লিকা শেরাওয়াত: বহু বারই অন্তরঙ্গ দৃশ্য়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বলিউডের তণ্বী অভিনেত্রী মল্লিকা শেরাওয়াতকে। কিন্তু এতটাই সাবলীল ভাবে তিনি পর্দায় এই ধরনের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন যে, কেউ কিছুই বুঝতে পারেননি। অথচ এই দৃশ্যে অভিনয়ের অস্বস্তির কথা তিনিই নিজ মুখে শেয়ার করেছেন। ২০১৫ সালের 'ডার্টি পলিটিক্স' ছবিতে প্রবীণ অভিনেতা ওম পুরির সঙ্গে একটি অন্তরঙ্গ দৃশ্য ছিল তাঁর। আর সেই সময়ই তিনি অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। মল্লিকা জানিয়েছিলেন, ৬৪ বছর বয়সী অভিনেতা ওম পুরির সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্য করা সহজ ছিল না। কারণ শ্যুটিংয়ের সময় অভিনেতা কাছাকাছি আসতেই মল্লিকার শরীর কাঁপতে শুরু করে। আর তিনি অস্বস্তিতে ভুগতে শুরু করেন। অভিজ্ঞ অভিনেতা ওম পুরি বুঝতে পেরেছিলেন যে, মল্লিকা তাঁর সঙ্গে এই দৃশ্যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। তাই দৃশ্যটা অভিনেত্রীকে ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেন নিয়ে ওম পুরি। এর পরে অবশ্য আর অসুবিধা হয়নি। মসৃণ ভাবেই শ্যুটিং সম্পূর্ণ করেছিলেন তাঁরা।
ভয় পেয়েছিলেন সুস্মিতা সেন: 'চিঙ্গারি' ছবিতে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতে গিয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন সুন্দরী অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনও। শোনা যায়, সেটে গিয়ে সুস্মিতা যখন এই কথা জানতে পারেন, তখন তিনি ভয় পেয়ে টয়লেটে গিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু পরিচালকদের অনেক বোঝানোর পর সেই দৃশ্যের শ্যুটিংয়ে রাজি হয়েছিলেন প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী। সূত্রের খবর, ওই সময়টায় আবার মিঠুন আর সুস্মিতার সম্পর্কও তেমন ভাল ছিল না। কোনও একটা বিষয় নিয়ে একে অপরের উপর চটে ছিলেন তাঁরা!