বছর শেষে 'কলকাতা সুরমূর্চ্ছনা'য় মেতে উঠল শহর, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষ অনুষ্ঠানে নজরকাড়া ভিড়
- Published by:Pooja Basu
- news18 bangla
Last Updated:
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিকাশের জন্য বিবিধ সাংস্কৃতিক কার্যক্রম গ্রহণ করে চলেছে,এর সূচনা হয়েছিল কলকাতা তথা ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুজন দিকপাল মানুষের হাত ধরে, প্রয়াত পণ্ডিত এ কানন এবং সঙ্গীত বিদূষী মালবিকা কানন, তাঁদেরই ছত্রছায়ায় তাঁদের যোগ্য শিষ্য এবং উত্তরসূরি শ্রী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংস্থাটি গড়ে তোলেন।
সুরমূর্চ্ছনা কলকাতা এবং সুরমূর্চ্ছনা ইউএসএ-এর উদ্যোগে 'পণ্ডিত এ কানন ও বিদূষী মালবিকা কানন স্মৃতি সঙ্গীত উৎসব -২০২৪' শীর্ষক দীর্ঘ ছ'ঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানটি সম্প্রতি হয়ে গেল কলকাতার উত্তম মঞ্চে, ২১ডিসেম্বর,২০২৪ এ। 'কলকাতা সুরমূর্চ্ছনা' বিগত ২০০৭ সাল থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিকাশের জন্য বিবিধ সাংস্কৃতিক কার্যক্রম গ্রহণ করে চলেছে,এর সূচনা হয়েছিল কলকাতা তথা ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুজন দিকপাল মানুষের হাত ধরে, প্রয়াত পণ্ডিত এ কানন এবং সঙ্গীত বিদূষী মালবিকা কানন, তাঁদেরই ছত্রছায়ায় তাঁদের যোগ্য শিষ্য এবং উত্তরসূরি শ্রী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংস্থাটি গড়ে তোলেন।
advertisement
এবছরের অনুষ্ঠানের প্রথম শিল্পী ছিলেন কুমারী সুমৌলিকা সরকার, যিনি পন্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম। তিনি এই অনুষ্ঠানে রাগ মধুমন্তী পরিবেশন করেন, বিলম্বিত একতাল এবং দ্রুত তিনতালের বন্দিশে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। পরবর্তীতে তিনি রাগ তিলং-এ একটি ঠুমরি পরিবেশন করেন, এটি বিদুষী মালবিকা কাননজীর রচনা। সুমৌলিকা সরকারকে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন শ্রী অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং তবলায় ছিলেন শ্রী বিভাস সাংঘাই।
advertisement
এরপর অন্যতম আকর্ষণ ছিল পণ্ডিত অসীম চৌধুরীর সেতার পরিবেশনা। তিনি রাগ পটদীপের সাথে শুরু করেন, যা তার শান্ত স্বভাব এবং মিষ্টি সুরের চলনের সঙ্গে সম্পূর্ণ মানানসই। আনন্দময় এবং সুরেলা পরিবেশনে তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন, তাঁকে তবলায় যোগ্য সঙ্গত দেন শ্রী শুভজ্যোতি গুহ। পরবর্তী অনুষ্ঠান ছিল পণ্ডিত শান্তনু ভট্টাচার্যের কণ্ঠসঙ্গীত, তিনি রাগ পুরিয়া ধ্যানেশ্রী পরিবেশন করেন। এর তাল ছিল মধ্যলয় ঝুমরা, তিনতাল এবং দ্রুত একতাল, যার মাধ্যমে শ্রোতারা এক অনন্য সঙ্গীতানুভূতির সাক্ষী হন এবং তিনি খামাজ রাগ-এ একটি ঠুমরী পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ করেন।
advertisement
শান্তনু ভট্টাচার্যের সঙ্গে ছিলেন তবলায় পণ্ডিত পরিমল চক্রবর্তী এবং হারমোনিয়ামে শ্রীমতি রূপশ্রী ভট্টাচার্য। এরপর পন্ডিত প্রত্যুষ ব্যানার্জী রাগ ইমন এর মধ্য দিয়ে তার সুরেলা সরোদ পরিবেশনা করেন এবং দর্শকদের মন জয় করে নেন, তার সঙ্গে সঙ্গতে ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বোস। এই জুটি বরাবরই খুব উপভোগ্য সঙ্গীত পরিবেশন করে এসেছেন। তিনি রাগ নন্দ দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে। তিনি নিজের পরিশীলিত সঙ্গীতবোধ, অনবদ্য স্বর সংস্থান এবং আকর্ষণীয় চলনের মাধ্যমে সকলের মন জয় করে নেন।
advertisement
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল সম্মাননা জ্ঞাপন। এই সময়ের অন্যতম তবলা বাদক, বেনারস ঘরানার জীবন্ত কিংবদন্তি পণ্ডিত কুমার বোসকে 'পণ্ডিত এ. কানন এবং বিদুষী মালবিকা কানন পুরস্কার' -এ সম্মানিত করা হয়। এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত দেবাশীষ ভট্টাচার্য, পণ্ডিত সমর সাহা এবং পণ্ডিত তন্ময় বোস প্রমুখরা। এদের আলাপচারিতায় উঠে আসে সুরমূর্চ্ছনার প্রশংসাযোগ্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কথা। সম্মাননা জ্ঞাপনের পর ছিল পণ্ডিত কুমার বোসের একক তবলা বাদন, যা এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা ছিল। কুমারজী তাঁর দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনের অধীত বিদ্যা, অনন্য সঙ্গীতবোধ এবং লয়কারির দুরন্ত সংমিশ্রণে শ্রোতাদের কাছে এক অশ্রুতপূর্ব সন্ধ্যা উপহার দেন।