মাধবনের সহ-অভিনেতা একসময় ১ লক্ষ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখতেন, পরে তিনিই ৩০ মিনিটে ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বন্ধুকে বাঁচান
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
তাঁর সাফল্য এবং অম্লান হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে সংগ্রাম, দৃঢ়তা এবং বন্ধুত্বের এক অসাধারণ গল্প যা অনেকেই জানেন না।
বলিউডে প্রতিভাবান অভিনেতাদের অভাব কোনও দিনই নেই, কেউ কেউ নায়ক হয়ে উঠতে পারেন, কেউ থেকে যান পার্শ্বচরিত্রাভিনেতা হিসেবেই, তা বলে তাঁদের গুরুত্ব কিছু কম নয়, তাঁরা না থাকলে ছবি দেখার মজা পুরোপুরি জমে না। বলিউডে দীপক দোবরিয়াল নামটাও ঠিক সেই রকম, তিনি অভিনয়ের জগতে এক বিরল স্থান দখল করে আছেন, এমন একজন শিল্পী যিনি বড় কোনও ব্যানার বা কোনও চলচ্চিত্র পরিবারের সমর্থন ছাড়াই নিজের জন্য একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন।
advertisement
অতুলনীয় কমিক টাইমিংয়ের জন্য তিনি সুপরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘তনু ওয়েডস মনু’ ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে, আর মাধবন এবং কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে ছবির সিক্যুয়েলেও তিনি সমান ভাবে নজর কেড়ে নিয়েছেন দর্শকের, হিন্দি ছবির জগতে একজন পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। যদিও তাঁর সাফল্য এবং অম্লান হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে সংগ্রাম, দৃঢ়তা এবং বন্ধুত্বের এক অসাধারণ গল্প যা অনেকেই জানেন না।তারকা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে দীপকের যাত্রা শুরু হয়েছিল কোনও সিনেমার সেটে নয়, বরং বলা ভাল মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে। তিনি ১৯৯৪ সালে থিয়েটার ডিরেক্টর অরবিন্দ গৌরের অধীনে থিয়েটারে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন।
advertisement
থিয়েটারের দুনিয়া থেকে অনেকেই এসে দাঁড়ানোর সুযোগ পান ক্যামেরার সামনে, দীপকের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছিলেন তিনি মঞ্চাভিনয়ের জগতে, অবশেষে ছবির দুনিয়া থেকে ডাক আসে, তিনি বিশাল ভরদ্বাজের মকবুল (২০০৩) ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেনন, একে একে কমেডি এবং সিরিয়াস নানা ভূমিকায় ৩০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। যদিও রুপোলি পর্দার একজন স্বীকৃত অভিনেতা হয়ে ওঠার অনেক আগে দীপককে রীতিমতো আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছিলন। অভিনয়ের সেই প্রথম দিকের দিনগুলোতে তাঁর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল একদিন শুধু ১ লক্ষ টাকা আয় করা!
advertisement
এই সামান্য পরিমাণ অঙ্কই তাঁর কাছে সাফল্যের প্রতীক ছিল। দীপকের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং সহকর্মী থিয়েটার শিল্পী অভিনেতা মনু ঋষি চাড্ডা, পডকাস্ট সিন কেয়া হ্যায়-তে কথোপকথনের সময় দীপকের জীবনের এই পর্বের কথা তুলে ধরেছিলেন। তিনি শেয়ার করেছিলেন যে দীপক একবার তাঁকে বলেছিলেন যে যেদিন তিনি ১ লক্ষ টাকা আয় করবেন, সেদিন তিনি তারকা বোধ করবেন। মনু আরও উল্লেখ করেছিলেন যে দীপকের হাতে খুব কমই টাকা থাকত, যদিও তিনি অভিনয় করতে এসেছিলেন এক স্বচ্ছল পরিবার থেকে।
advertisement
অবশেষে কেরিয়ারের সেই মাইলফলক এসে ধরা দিল। দীপক একটি বিজ্ঞাপনী প্রকল্প থেকে জীবনে প্রথম ১ লক্ষ টাকা পেমেন্ট পেলেন এবং তা যেন মুহূর্তেই তাঁর পৃথিবী বদলে দিল। মনু সবাইকে পডকাস্টে জানিয়েছেন যে তিনি কীভাবে দীপককে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে পেমেন্ট হয়েছে কি না। দীপক তা লুকিয়ে রাখতে পারতেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে স্বীকার করে নেন। মনু আরও বলেন যে তিনি দীপকের কাছে তখনই ১০,০০০ টাকা চেয়েছিলেন এবং দীপকও কোনও কিছু না ভেবেই তা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। দীপক এমনকি মনুর আরও টাকার প্রয়োজন আছে কি না তাও পরীক্ষা করে দেখেছিলেন, যা তাঁর সহজাত উদারতাই তুলে ধরে।
advertisement
যাই হোক, দীপকের বন্ধুদের পাশে থাকার গল্প এখানেই শেষ নয়। একবার তাঁদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিভার ফেলিওরে ভুগছিলেন এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। মনু তাঁর পডকাস্টে জানান যে সেই বিশাল চিকিৎসা খরচ জোগাড় করতে বন্ধুদের দল একত্রিত হয়েছিল। যখন তিনি দীপককে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য ফোন করেন, তখন দীপকের মনে পড়ে যায় যে, তাঁর খারাপ দিনগুলোতে ওই বন্ধু কীভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। মনু বলেছিলেন যে দরকার প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা, দীপক উত্তর দিয়েছিল যে তিনি একাই পুরো টাকা দিয়ে দেবেন। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে পুরো টাকা ট্রান্সফারও করা হয়েছিল।
advertisement
ঘটনাটি যাঁরা জানতেন, তাঁদের সকলের মনে তা দাগ কেটে যায়। সবাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে সাফল্য দীপককে বদলে দেয়নি, বরং তা তাঁকে বন্ধুদের আরও কাছে নিয়ে এসেছে, প্রয়োজনে তাঁদের জীবন পরিবর্তন করারও ক্ষমতা দিয়েছে। বন্ধুবৃত্তে যেমন, ঠিক সেরকম ভাবেই দীপক দোবরিয়াল বলিউডের ছবির জগতেও উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন। তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল ২০২৫ সালে অজয় দেবগন এবং মৃণাল ঠাকুরের সন অফ সর্দার ২-এ এবং গত বছর বিক্রান্ত মাসের সেক্টর ৩৬-তে। অন্য দিকে, আর মাধবন বর্তমানে আদিত্য ধরের ধুরন্ধর ছবির মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেখানে রণবীর সিং, সারা অর্জুন, সঞ্জয় দত্ত, অর্জুন রামপাল এবং অক্ষয় খান্নাও কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করছেন। ছবিটির ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে মুক্তি পাওয়ার কথা।
