Success Story: দেশভাগের সময় ভারতে পাড়ি, ছোট্ট ঠেলায় মিষ্টি বিক্রি করতে শুরু করেন দুই ভাই ! আজ তাঁদের সেই ছোট্ট ব্যবসাই ডালপালা মেলে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে মানুষকে
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Success Story: এটা শুধুই মিষ্টির গল্প নয়, বরং সাহসিকতা, কঠোর পরিশ্রম এমনকী, নিজেদের শিকড়কে আঁকড়ে ধরে রাখার গল্পও বটে! পাকিস্তানের মুলতান থেকে ভারতে এসেছিলেন কাঠুরিয়া ভাইয়েরা। ছোট্ট একটি দোকানের হাত ধরে এখানে তাঁদের ব্যবসার সূত্রপাত। দিল্লি এবং এনসিআর এলাকায় রয়েছে তাঁদের ২০টি দোকান। বর্তমানে ডোডা বরফি-র রাজাও বলা হয় কাঠুরিয়া ভাইয়েদের। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী মুলতান থেকেই এই কাহিনির সূত্রপাত।
advertisement
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে গুরুগ্রামকে ঝাঁ-চকচকে শহরই বলা যায়। অন্ধকার নামলেই গুরুগ্রামের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা গগনচুম্বী বহুতলগুলির কারণে এই শহরটিও যেন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে। আর নানা ধরনের স্ট্রিট ফুডের গন্ধে ভরে ওঠে গুরুগ্রামের আকাশ-বাতাস। তবে এখানে রয়েছে একটি মিষ্টির দোকান। যা সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এখানে কথা হচ্ছে, ওম স্যুইটস-এর। নিজেদের কঠোর পরিশ্রম এবং মিষ্টি ব্যবহারের মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকার এই ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে কাঠুরিয়া পরিবার।
advertisement
এটা শুধুই মিষ্টির গল্প নয়, বরং সাহসিকতা, কঠোর পরিশ্রম এমনকী নিজেদের শিকড়কে আঁকড়ে ধরে রাখার গল্পও বটে! পাকিস্তানের মুলতান থেকে ভারতে এসেছিলেন কাঠুরিয়া ভাইয়েরা। ছোট্ট একটি দোকানের হাত ধরে এখানে তাঁদের ব্যবসার সূত্রপাত। দিল্লি এবং এনসিআর এলাকায় রয়েছে তাঁদের ২০টি দোকান। বর্তমানে ডোডা বরফি-র রাজাও বলা হয় কাঠুরিয়া ভাইয়েদের। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী মুলতান থেকেই এই কাহিনির সূত্রপাত। আসলে মুলতানেই সোহান হালুয়া বানিয়ে দিন গুজরান করত কাঠুরিয়া পরিবার। এই একটি দক্ষতার উপর ভর করেই ব্যবসা চালাতে থাকেন তারা। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ওই পরিবারটিকে ভারতে চলে আসতে হয়। এখানে এসে গুরুগ্রামের অর্জুন নগরের কাছে একটি ছোট্ট ঠেলাগাড়ি নিয়ে সোহান হালুয়া বিক্রি করতে শুরু করে ওই পরিবারটি।
advertisement
যদিও এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় এসে ব্যবসা চালানো খুব একটা সহজ ছিল না। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েনি কাঠুরিয়া পরিবার। এদিকে ইতিমধ্যেই পরিবারের কর্তার মৃত্যু হয়। ফলে পরিবারের বড় সন্তান ওম প্রকাশকে নিজের পড়াশোনা ছেড়ে ব্যবসার হাল ধরতে হয়। তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসেবে ঠেলাগাড়ি একটি দোকানে পরিণত হয়। এরপর ধীরে ধীরে এলাকায় বড় নাম তৈরি হয় কাঠুরিয়া পরিবারের এই ব্যবসার।
advertisement
আর আজ ওম স্যুইটসের মেন্যুতে জায়গা করে নিয়েছে ৬০০টিরও বেশি পদ। এর মধ্যে অন্যতম হল - ক্রিস্পি দোসা, স্পাইসি চাউমিন, জ্যুসি রসমালাই। তবে সব কিছুর মধ্যে স্পেশ্যাল হল - ডোডা বরফি। কারণ এই বরফি শুধুমাত্র মিষ্টিই নয়, এটা মানুষের জন্য একটা আবেগও বটে!আসলে এর জন্য ব্যবহার করা হয় স্পেশ্যাল অঙ্গুরি হুইট। ফলে একটা অনন্য স্বাদ আসে এই খাবারে। প্রতিদিন ১০ হাজার কেজি বরফি বিক্রি হয়। তবে উৎসবের মরশুমে এর বিক্রি ৫ গুণ বেড়ে যায়। এই মিষ্টির স্বাদে আসলে আকুল মানুষও।
advertisement
কাঠুরিয়া পরিবারের দুই ছেলে অঙ্কিত এবং করণ নিজেদের পারিবারিক ব্যবসাকে এক নয়া উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দোকানের সমস্ত কাজই তাঁদের নখদর্পণে। বলা ভাল, ময়দা মাখা থেকে শুরু করে দোকানে দাঁড়িয়ে গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়া - সব কিছুই জানেন তাঁরা। আজ ওম স্যুইটসের রয়েছে আধুনিক স্টোর, অনলাইন ডেলিভারির সুবিধাও। আজ এই দোকানের মিষ্টি সরবরাহ করা হয় দুবাই আর কাতারের মতো দেশগুলিতেও।
advertisement
এখানেই শেষ নয়, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার এক মেলবন্ধনও ঘটানো হয়েছে এই ব্যবসায়। ফলে গ্রাহকদের জন্য আনা হয়েছে ঠান্ডাই পার্লস এবং বিসকফ বরফি-র মতো নতুন পদও। মানুষের ভরসা এবং কথার জোরেই আজ বিকানেরওয়ালা এবং হলদিরামের মতো বড় বড় ব্যবসার পাশাপাশি নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে ওম স্যুইটস-ও। আজকের দিনে ওম স্যুইটসে এক বাটি ছোলে বিক্রি হয় মাত্র ২৫ টাকায়। যা বেশ সস্তা তো বটেই! এর ফলে সমস্ত শ্রেণীর গ্রাহকরাই এর অতুলনীয় স্বাদ চেখে দেখারও সুযোগ পান। আসলে কাঠুরিয়া পরিবার বিশ্বাস করে যে, প্রত্যেক গ্রাহকেরই একই ভালবাসা এবং মিষ্টতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর ওম স্যুইটস-এর এই কাহিনি শুধু ব্যবসার সাফল্যেরই গল্প নয়। এই গল্পে কিন্তু নিজেদের শিকড়কে আঁকড়ে ধরে রাখার দিকটাও জায়গা পেয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলে নেওয়ার কথাও বলে ওম স্যুইটস। আর এমনিতেও ইতিহাস বলে যে, প্রতিটি মিষ্টির মধ্যেই কঠোর পরিশ্রমের মিষ্টত্ব থাকে। ফলে কাঠুরিয়া পরিবারের এই ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্প সকলকে বড় স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জোগায়।