ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে করোনার বিধিনিষেধ। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও কেটে যাচ্ছে বিধিনিষেধের গেরো। আর তাই বেরিয়ে পড়েছে মানুষও। ভ্রমণ হোক কিংবা উচ্চশিক্ষা অথবা চাকরির জন্যই হোক। বিভিন্ন দেশে আবার আগের মতোই পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। তবে পরিসংখ্যান বলছে, সিঙ্গাপুরে (Singapore) পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত (India) এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। আর প্রথম স্থানে রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া (Indonasia)।
হিসেব বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আচমকাই সিঙ্গাপুরে ভারতীয় ভ্রমণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যেতে দেখা যায়। গত এপ্রিলেই ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত সমস্ত ভ্রমণার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুর সীমান্ত। তার ফলে প্রথম ৬ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ ভ্রমণার্থীর সমাগম হয় সিঙ্গাপুরে। তার মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ১৯ হাজার। যেখানে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার থেকে আগত ভ্রমণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লক্ষ ৮২ হাজার।
আর ভারতের পরেই তৃতীয় স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া (Malaysia)। সেই দেশের প্রায় ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ভ্রমণার্থী আকাশ-পথে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। আবার এর পরের স্থানেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়া (Australia)। এই ছয় মাসে সেখানকার প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার ভ্রমণার্থী সিঙ্গাপুরে পাড়ি দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার পরেই স্থান পেয়েছে ফিলিপিন্স (Philippines)। এখানকার প্রায় ৮১ হাজার ভ্রমণার্থীর আগমন ঘটেছে সিঙ্গাপুরে। হিসেব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের এই সময়কালের মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি দেশের আন্তর্জাতিক ভ্রমণার্থীর পরিমাণ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৬ শতাংশেরও বেশি। আসলে সিঙ্গাপুর হল এমন একটি দেশ, যা কোনও রকম কোয়ারান্টিনের শর্ত ছাড়াই নিজেদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এটা অত্যন্ত নিরাপদ গন্তব্য হিসেবেও গণ্য হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা খুব সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে সামলে নিয়েছিল এই দেশটা। তাই সব দিক দেখে এই দেশেই ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রমণার্থীরা।
সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড (Singapore Tourism Board) বা এসটিবি (STB) ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়েছিল যে, তাদের আশা, এই বছরে প্রায় ৬০ লক্ষ আন্তর্জাতিক ভ্রমণার্থীর সমাগম ঘটবে সিঙ্গাপুরে। বছরের পর বছর ভ্রমণার্থী বৃদ্ধির পরিসংখ্যান বলছে, ইন্দোনেশিয়ার ভ্রমণার্থী বেড়েছে প্রায় ১৯৯৬ শতাংশ। সেখানে ভারতীয় ভ্রমণার্থীর সমাগম প্রায় ১৩৪৪ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ার ভ্রমণার্থীর সমাগম প্রায় ২০০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভ্যাকসিনেটেড ভ্রমণার্থীদের জন্য এপ্রিল মাস থেকে সিঙ্গাপুর সীমান্ত পুনরায় খুলে যাওয়ার পর ১৫ লক্ষ ভ্রমণার্থীর প্রায় ৮৪ শতাংশই এসেছিলেন সিঙ্গাপুরে। তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে যে, গত বছর বা ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসে সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক ভ্রমণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। আবার ঠিক তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ওই সময়ে সেই সংখ্যাটা ছিল ২৭ লক্ষ ৪০ হাজার। আর ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসের এই হিসেবের প্রায় ৮৮ শতাংশ ভ্রমণার্থীই সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন অতিমারীর আগেই অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই।
এখানেই শেষ নয়, বিমান চলাচলের পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বিমানবন্দরে যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে অর্থাৎ সিঙ্গাপুর সীমান্ত পুরোপুরি খোলার আগে চাঙ্গি বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছেন মোট ২৫ লক্ষ ৬৩ হাজার যাত্রী। আবার এপ্রিল এবং মে মাসে ওই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৯ লক্ষ ৩০ হাজার এবং ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার। আবার তুলনামূলক হিসেব করলে দেখা যাবে যে, গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চাঙ্গি বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছেন প্রায় ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার যাত্রী। গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স (Singapore Airlines)-এর তরফে গত জুন মাসের অপারেটিং সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে যে, বছরের মধ্যবর্তী সময়ে ছুটি এবং গ্রীষ্মকালীন অবকাশের কারণে জুন মাসে আকাশ-পথে ভ্রমণের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। তবে চিন, জাপান, তাইওয়ান-এর নিরিখে এটা ভীষণই ব্যতিক্রমী। কারণ সেখানে এখনও ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ জারি রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, বিমান চলাচলের পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বিমানবন্দরে যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে অর্থাৎ সিঙ্গাপুর সীমান্ত পুরোপুরি খোলার আগে চাঙ্গি বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছেন মোট ২৫ লক্ষ ৬৩ হাজার যাত্রী। আবার এপ্রিল এবং মে মাসে ওই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৯ লক্ষ ৩০ হাজার এবং ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার। আবার তুলনামূলক হিসেব করলে দেখা যাবে যে, গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চাঙ্গি বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছেন প্রায় ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার যাত্রী। গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স (Singapore Airlines)-এর তরফে গত জুন মাসের অপারেটিং সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে যে, বছরের মধ্যবর্তী সময়ে ছুটি এবং গ্রীষ্মকালীন অবকাশের কারণে জুন মাসে আকাশ-পথে ভ্রমণের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। তবে চিন, জাপান, তাইওয়ান-এর নিরিখে এটা ভীষণই ব্যতিক্রমী। কারণ সেখানে এখনও ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ জারি রয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসে এই এয়ার লাইন্সের মাধ্যমে মোট ১৯ লক্ষ ৩৮ হাজার ২০০ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। আর হিসেব বলছে, আগের মাস অর্থাৎ মে-র তুলনায় এই পরিমাণটা প্রায় ১৩.৭ শতাংশ বেড়েছে। আবার এই বছরের জুন মাসে গ্রুপ প্যাসেঞ্জার ক্যাপাসিটি (যা উপলব্ধ সিট-কিলোমিটারে পরিমাপ করা হয়) মে মাসের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, গত বছর জুন মাসের তুলনায় তা প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। আবার বর্তমানে তা অতিমারী-পূর্ববর্তী স্তরের ৬৪ শতাংশে রয়েছে। গ্রুপ প্যাসেঞ্জার লোড ফ্যাক্টর বা পিএলএফ (PLF) ৮৫.৫ শতাংশের এক নয়া প্যান্ডেমিক উচ্চতায় পৌঁছ যায়। মাসে মাসে তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৩ শতাংশ পয়েন্ট এবং বছরে বছরে তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৯.৪ শতাংশ পয়েন্ট। এছাড়াও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স পোস্ট করেছে ৮৭.৮ শতাংশের মাসিক পিএলএফ। যা ওই উড়ান সংস্থার জন্য বড়সড় রেকর্ড।
গত মাসের গোড়ার দিকে এই এয়ারলাইন্স ঘোষণা করেছিল যে, অক্টোবর মাস শেষ হওয়ার আগেই তারা তাদের ভারতের উড়ানগুলিকে মহামারী পূর্ববর্তী পর্যায়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ধীরে ধীরে উড়ানের পরিমাণও বাড়াবে এবং চেন্নাইয়ে ১৭টি সাপ্তাহিক বিমান চালনা করবে তারা। আসলে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে মোট ১০টি উড়ান চালায় ওই উড়ান সংস্থা। ফলে ধীরে ধীরে সেই পরিমাণটা বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী তারা। আবার কোচির উদ্দেশে এখন তারা প্রতি সপ্তাহে ৭টি করে উড়ান চালাচ্ছে। পরবর্তী কালে সেই উড়ানের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৪ করা হবে। শুধু তা-ই নয়, বাড়বে বেঙ্গালুরুর ক্ষেত্রে বিমান পরিষেবাও। এখন ওই সংস্থা বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে মোট ৭টি উড়ান চালাচ্ছে। পরে সেটা বাড়িয়ে ১৬ করা হবে বলে আশাবাদী তারা।
কিন্তু সিঙ্গাপুরে পর্যটকরা যান কেন? এই দ্বীপ সারা বছর ধরে রঙিন এবং প্রাণবন্ত থাকে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানও জোরকদমে চলতে থাকে। যার জেরে পর্যটক সমাগমও ব্যাপক ভাবে ঘটে। সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডের আশা, ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি (Formula 1 Grand Prix), হো পার ভিলার হেলস মিউজিয়াম (Hell's Museum at Haw Par Villa), মিউজিয়াম অফ আইসক্রিম (Museum of Ice Cream), স্কাইহেলিক্স সেন্টোসা (SkyHelix Sentosa) এবং গার্ডেন্স বাই দ্য বে-এর ‘অ্যাভাটার: দ্য এক্সপেরিয়েন্স’ (Avatar: The Experience at Gardens by the Bay)-এর মতো ইভেন্টই পর্যটকদের ভিড় টানবে।
সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডের চিফ একজিকিউটিভ কিথ ট্যান জানান, ভ্রমণার্থী এবং পর্যটক সমাগমে এমন বৃদ্ধি দারুণ চাহিদার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, অবসর বা ছুটি কাটানোর জন্য সিঙ্গাপুর এখনও ভীষণ প্রাণবন্ত একটি গন্তব্য পর্যটক এমনকী ব্যবসায়ীদের জন্যও। যদিও এখনও পর্যন্ত কিন্তু মহামারীর বিপদ কাটেনি। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন রঙিন ইভেন্ট এবং পর্যটকদের জন্য নতুন নতুন পরিষেবার উপহার - এ সবই চলতি বছরের বাকি সময় এবং তার পরেও এই দেশে পর্যটক টানতে সক্ষম হবে। এত আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক করছে সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড। তাদের বক্তব্য, পর্যটনের ক্ষেত্র বছরের বাকি সময়ে কিছু বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ বর্তমানে বিশ্বের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের খুবই টালমাটাল পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় তো আছেই। ফলে সে-দিকটাও মাথায় রাখছে তারা।