Manmohan Singh: নেদারল্যান্ডস থেকে ফিরে ঘুমোচ্ছিলেন মনমোহন সিং, একটা ফোন কলই বদলে দিল ভারতের অর্থনীতি
- Published by:Siddhartha Sarkar
- trending desk
Last Updated:
Manmohan Singh Phone Call that Changed the Nation: এই সংস্কারের ফলে দিশা পায় ভারতীয় অর্থনীতি। ফের সঠিক ট্র্যাকে ফিরে আসে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সবাই।
সময়টা ১৯৯১ সালের জুন মাস। মনমোহন সিং নেদারল্যান্ডস থেকে সদ্য দিল্লি ফিরেছেন। খুব ক্লান্ত। ঘুমিয়ে পড়েছেন। সেই রাতেই একটা ফোন এল। মনমোহন তখনও ঘুমোচ্ছেন। ফোন ধরলেন তাঁর জামাই বিজয় টাঙ্কা। ফোনের অপর প্রান্তে পিসি আলেকজান্ডার, নরসিমা রাওয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। শশব্যস্ত গলায় বললেন, “শ্বশুরমশাইকে এখনই তুলুন, খুব দরকার।”
advertisement
কয়েক ঘণ্টা পর আলেকজান্ডারের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন মনমোহন সিং। আলেকজান্ডার খোলাখুলি জানালেন, নরসিমা রাও তাঁকে অর্থমন্ত্রী করতে চান। মনমোহন সিং তখন ইউজিসি-এর চেয়ারম্যান। রাজনীতি থেকে শতহস্ত দূরেই থাকেন। দিল্লির কুর্সির প্রতি তাঁর আগ্রহও খুব একটা নেই। তাই খুব একটা গুরুত্ব দিলেন না তিনি। সেদিন আলেকজান্ডার আর কথা বাড়াননি। হয়ত মনে করেছিলেন, এই ব্যক্তিকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাজি করানো যাবে না। তবে নরসিমা রাও নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংকেই তাঁর চাই।
advertisement
২১ জুন ইউজিসি-এর অফিসে বসে মনমোহন সিং। হঠাত তাঁর কাছে নির্দেশ এল, বাড়ি যান। জামাকাপড় পরে তৈরি হয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে চলে আসুন। ব্যাপারটা কী হল? “সবাই অবাক হয়ে দেখলেন, আমি নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমার দায়িত্ব পরে ঠিক হয়। তবে নরসিমা রাও জানিয়ে দিয়েছিলেন, আমি অর্থমন্ত্রী হতে চলেছি।” মেয়ে দমন সিংয়ের লেখা ‘স্ট্রিক্টলি পার্সোনাল, মনমোহন অ্যান্ড গুরুশরণ’ বইতে এ কথা বলেছেন খোদ মনমোহন সিং। অন্তর্মুখী, নিয়ন্ত্রণ সর্বস্ব, স্বল্প বৃদ্ধির অর্থনীতি থেকে ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধির অর্থনীতির দেশ ভারত। এর পিছনে রয়েছে সেদিনের একটা ফোনকল, নরসিমা রাওয়ের একটা সিদ্ধান্ত।
advertisement
১৯৯১ সালের আর্থিক সংস্কারের কথা ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এর দুই স্থপতি। মনমোহন সিং এবং নরসিমা রাও। বুক চিতিয়ে কংগ্রেসের ভিতর এবং বাইরে থেকে আসা যাবতীয় আক্রমণ মোকাবিলা করেছেন তাঁরা। নিয়েছেন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছেন দেশকে। ভারতীয় অর্থনীতিতে তখন চূড়ান্ত টালমাটাল অবস্থা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২,৫০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। যা দিয়ে মাত্র ২ সপ্তাহের আমদানি করা যাবে। আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আর ঋণ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি চড়চড় করে বাড়ছে। আমজনতা নাজেহাল।
advertisement
মনমোহন সিং এসব আগে থেকেই জানতেন। কী করলে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, তাও তাঁর অজানা ছিল না। দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই মতো কাজ শুরু হল। তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রী পি চিদম্বরের সঙ্গে মিলে রফতানি নিয়ন্ত্রণ তুলে দিলেন। রুপির অবমূল্যায়নের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর সি রঙ্গরাজনের সঙ্গে। ২৪ জুলাই প্রথম বাজেটে ‘লাইসেন্স-পারমিট রাজ’ তুলে দিলেন মনমোহন। এ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বাজেট ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে সংসদে নতুন শিল্প নীতি পেশ করে রাও সরকার। এই নীতি মনমোহন সিংয়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। ১৯০-৯১ সালে জোট সরকারে চন্দ্রশেখরের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে অল্প সময় কাজ করেছিলেন মনমোহন সিং। সেই সময় থেকেই এই ভাবনাগুলো তাঁর মাথায় ছিল।
advertisement
যাইহোক, শিল্পখাতে লাইসেন্স রাজ তুলে দেওয়া হল। ৩৪টি শিল্পে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে অনুমতি দিল রাও সরকার। পাশাপাশি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সরকারি খাতের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে সরকারের শেয়ারের বেসরকারীকরণেও অনুমতিও মিলল। বাজেটে একের পর এক বড় ঘোষণা করলেন মনমোহন সিং। সেবি তৈরি হল, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর তহবিল সংগ্রহে বাধা থাকল না। আরবিআই গভর্নর এম নারাসিমহনের নেতৃত্বে একটি নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা হল, যাঁরা আর্থিক খাতে নতুন কাঠামো তৈরি করবে।
advertisement
১৯৯১ সালের বাজেট বক্তৃতায় মূলবৃদ্ধির উপরেও আলোকপাত করেছিলেন মনমোহন সিং। তিনি বলেছিলেন, “মূল্য পরিস্থিতি, যা আমাদের জনগণের জন্য তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয়, গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করছে, কারণ মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ অঙ্কে পৌঁছেছে। ১৯৯১ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া অর্থবর্ষে পাইকারি মূল্য সূচক ১২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ভোক্তা মূল্য সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৬ শতাংশ। প্রধানত প্রয়োজনীয় পণ্যেই এই মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাচ্ছে।”
advertisement