West Medinipur- দুহাত ছাড়া মেদিনীপুরের জগন্নাথের জীবন থমকে নয়, দুই পা দিয়েই সে প্রতিবন্ধকতাকে করেছে জয়।দুই পায়ে লেখাপড়া থেকে ছবি আঁকা, সবকিছুতে সাবলীল জগন্নাথ
- Published by:Samarpita Banerjee
Last Updated:
মেদিনীপুরের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর চিল্ড্রেন সংস্থায় জগন্নাথকে রেখে যান তার মা। গত চার-পাঁচ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠান রয়েছে জগন্নাথ। এরমধ্যেই সে রপ্ত করে ফেলেছে নিজের সমস্ত কাজ দু'পা দিয়ে করার। নিজের পোষাক পরিধান, খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া, ছবি আঁকা সমস্ত কিছুই দু'পা দিয়ে করে জগন্নাথ। জগন্নাথ বলে, এখন আর কোন কাজ করতে কষ্ট হয় না তার!
#পশ্চিম মেদিনীপুর- দীনমজুর বাবা-মা'র বড় সন্তান। তবে, জন্ম থেকেই নেই তার দু'হাত! বাবা-মা তাই নাম রেখেছিলেন জগন্নাথ। এখন আর বাবা নেই, তবে তাঁর আদরের বড় সন্তান জগন্নাথ এখন দু'পায়ে ভর করেই জীবনপথে এগিয়ে চলেছে। নিজের সমস্ত কাজ নিজেই করে সে! জামা-কাপড় পরা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া-স্নান পা দিয়েই করে জগন্নাথ। শুধু তাই নয়, খেলাধুলা- পড়াশুনাও করে সাবলীল ভাবে। বইয়ের পাতা ওল্টানো থেকে লেখালেখি, ডান পা দিয়েই করে জগন্নাথ! এমনকি, ডান পায়ের আঙুলে পেন্সিল ধরে ফুটিয়ে তোলে একের পর এক চিত্র। রং করার পর সেই ছবি হয় আশ্চর্য সুন্দর। জগন্নাথের জীবন-শৈলি থেকে শিল্পসৃষ্টি, চমৎকৃত করে প্রতিমুহূর্তে! 'মেদিনীপুর রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর চিল্ড্রেন' নামক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে বছর ১২'র জগন্নাথ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরূপ ধাড়া বলেন, "ও আমাদের গর্ব! ওর সাবলীলতা, মানসিক শক্তি আমাদের মুগ্ধ করে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অঙ্কনে প্রাইজ পায় জগন্নাথ। ভালো গানও করতে পারে! আর, ফুটবল খেলাতে তো রীতিমতো পটু"।
এমআরসিসি (Midnapore Rehabilitation Centre for Children) সূত্রে জানা গেল, খড়গপুর দু'নম্বর ব্লকের চাঙ্গুয়াল অঞ্চলের গঙ্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথ সরেন। দিনমজুর পরিবারে জন্ম। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন বাবা। দিনমজুরি করে অনেক কষ্টে দু'ভাই-বোন'কে নিয়ে সংসার চালান মা। জন্ম থেকেই জগন্নাথের দুটি হাত প্রায় নেই (বাম হাত একেবারেই নেই, ডান হাতের ছোট্ট একটু অংশ অকেজো অবস্থায় ঝুলছে শরীর থেকে)! এই অবস্থায় দিনমজুরি করে প্রতিবন্ধী ছেলের পড়াশোনা করানোর মতো সামর্থ্য ছিল না জগন্নাথের পরিবারের। তাই বছর পাঁচেক আগে, মেদিনীপুরের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর চিল্ড্রেন সংস্থায় জগন্নাথকে রেখে যান তার মা। গত চার-পাঁচ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠান রয়েছে জগন্নাথ। এরমধ্যেই সে রপ্ত করে ফেলেছে নিজের সমস্ত কাজ দু'পা দিয়ে করার। নিজের পোষাক পরিধান, খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া, ছবি আঁকা সমস্ত কিছুই দু'পা দিয়ে করে জগন্নাথ। জগন্নাথ বলে, এখন আর কোন কাজ করতে কষ্ট হয় না তার!
advertisement
জগন্নাথের জীবনীশক্তি দেখে উৎসাহিত হয় এই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েরাও। প্রসঙ্গত, এই প্রতিষ্ঠান আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে, পুরস্কৃত হচ্ছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। পুরস্কৃত হচ্ছেন বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রশিক্ষক বিলু পাত্র'ও। বিলু'র নেই দু'পা। তবুও জীবনযুদ্ধে জয়ী তিনি। তাঁর আদর্শ ছাত্র জগন্নাথের নেই দুই হাত! দু'পায়ে ভর দিয়ে এগিয়ে চলছে সেও। রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর চিল্ড্রেনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরূপ কুমার ধাড়া জানান, "প্রথম প্রথম পা দিয়ে কাজ করতে অসুবিধে হত জগন্নাথের! তবে যখন বুঝতে শিখলো যে ওকে নিজের দুটো পা কেই হাত হিসেবে ব্যবহার করতে হবে, তখন থেকেই অদম্য চেষ্টা করতে শুরু করে এই কিশোর। ওকে দেখে সত্যি মনে হয়, মানুষ যদি চায় কিছু করতে, কোনো প্রতিবন্ধকতাই তার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।" হাত-বিহীন মেদিনীপুরের এই 'জগন্নাথ' যেভাবে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছে, তাতে সকলেই নিশ্চিত যে, ওই কাঁধেই সংসারের বড় সন্তান হিসেবে সমস্ত 'দায়িত্ব'ও সে অচিরেই তুলে নিতে পারবে! আর, হয়ে উঠবে এই সমাজের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
advertisement
Location :
First Published :
December 03, 2021 9:25 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/পশ্চিম মেদিনীপুর/
West Medinipur- দুহাত ছাড়া মেদিনীপুরের জগন্নাথের জীবন থমকে নয়, দুই পা দিয়েই সে প্রতিবন্ধকতাকে করেছে জয়।দুই পায়ে লেখাপড়া থেকে ছবি আঁকা, সবকিছুতে সাবলীল জগন্নাথ