#দুর্গাপুর: অপরাধীদের কাছে তিনি যম। আবার আইন ব্যবস্থার কাছে তিনি একজন হিরো। তিনি রাজ্য পুলিশের একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ গোয়েন্দা আধিকারিক। তবে এসবের বাইরেও এই গোয়েন্দা অফিসারের আরও একটি পরিচয় তৈরি হয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে সুস্থ করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এই গোয়েন্দা শিকারি এখন সেই যুবকের কাছে তার ভগবান, তার পরিবার।
দুর্গাপুরে দেখা পাওয়া গিয়েছে পুলিশ আধিকারিকের এই মানবিক মুখ। আইনি দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পালন করে গিয়েছেন আদালতের নির্দেশ। পালন করে গিয়েছেন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব। এই গোয়েন্দা আধিকারিকের নাম মনোরঞ্জন মন্ডল। তিনি আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের একজন আধিকারিক। মনোরঞ্জনবাবু পরিবার হারানো যুবক অর্ণব চক্রবর্তীকে তিলে তিলে সুস্থ করে তুলেছেন। পরিবার হারানোর শোকে যে অর্ণব একদিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন, সেই অর্ণব এখন অনেকটাই সুস্থ।
আরও পড়ুন- ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজিতে ভবিষ্যৎ গড়তে চান? রয়েছে দারুণ সুযোগ!
পুরো গল্প জানতে হলে আপনাকে পিছিয়ে যেতে হবে এক দশক আগে। দুর্গাপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেনাচিতি বাজার মহিস্কাপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বিপুল কান্তি চক্রবর্তী। ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি ঘর থেকে তার পচা-গলা দেহ উদ্ধার হয়। বিপুল বাবুর স্ত্রীও তিন বছর আগে গত হয়েছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই কিছুটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন চক্রবর্তী দম্পতির একমাত্র ছেলে অর্ণব চক্রবর্তী। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। সে সময় তার বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। পরিবার-পরিজন হারিয়ে নিঃসঙ্গ অর্ণব আরও একা হয়ে যান। চরম দুর্দশায় দিন কাটছিল তার। রাস্তাঘাটে পড়ে থেকে অনাহারে দিন গুজরান হচ্ছিল অর্ণবের।
আরও পড়ুন- নিউজ ১৮ লোকালের খবরের জের! সংস্কার শুরু হল চরম বেহাল রাস্তার
এরপর এই ঘটনাটি নজরে আসে পুলিশ আধিকারিক মনোরঞ্জন মন্ডলের। যিনি আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে থাকা গোয়েন্দা বিভাগের একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ কর্তা। তিনি অর্ণব চক্রবর্তীকে উদ্ধার করে তার মামার বাড়ি শ্রীরামপুরে যোগাযোগ করেন। কিন্তু মামার বাড়ির লোকজন অর্ণবের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। তখন অসহায় অর্ণবের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন মনোরঞ্জন বাবু। সেসময় মানসিক ভারসাম্য হারানোর অর্ণবকে তোলা হয় দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে। তারপর আদালতের নির্দেশে তাকে সরকারি হেফাজতে রাখার ব্যবস্থা করেন এই গোয়েন্দা আধিকারিক। দেখভালের দায়িত্ব নেন নিজেও। অর্ণবকে ভর্তি করানো হয় বহরমপুরের একটি হাসপাতালে।
তখন থেকেই অঘোষিতভাবে অর্ণবকে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মনোরঞ্জন মন্ডল। নিয়মিতই তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখতেন। প্রথমদিকে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে ওষুধ কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। পাশাপাশি অর্ণব সুস্থ হয়ে উঠলে যাতে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন বা তার প্রাপ্য জিনিসগুলির যাতে কেউ দখল নিতে না পারে, তারও ব্যবস্থা করেন এই গোয়েন্দা আধিকারিক। অর্ণবের সমস্ত আসবাবপত্র একটি ভাড়া বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আর আসবাবের কাস্টডি দেওয়া হয় বাড়ির মালিককে। তাছাড়া অর্ণবের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়, যাতে তার অ্যাকাউন্ট থেকে কেউ টাকা তুলে নিতে না পারেন।
ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে এক দশক। কিন্তু নিজের দায়িত্ব থেকে সরে যাননি মনোরঞ্জন মন্ডল। সরকারি হেফাজত আর মনোরঞ্জন বাবুর সহযোগিতায় অর্ণব চক্রবর্তী এখন অনেকটাই সুস্থ। ইতিমধ্যে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে অর্ণবকে। তাই মনোরঞ্জন বাবু নিজে অর্ণব চক্রবর্তীকে নিয়ে ফের মহকুমা আদালতে এসেছিলেন।
সুস্থ হয়ে অর্ণব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, "মনোরঞ্জনবাবু না থাকলে কোথাও হারিয়ে যেতাম। ওনাকে অনেক ধন্যবাদ। উনিই আমার কাছে পরিবার, অভিভাবক। ওনার ঋণ কখনও শোধ করা যাবে না।" তবে মনোরঞ্জন বাবু এই বিষয়ে বিশেষ কিছু বলেন নি। অর্ণবের হাত ধরে আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে তিনি শুধু বলেছেন, "মানবিক দিক থেকে অনেক তৃপ্তি পেয়েছি।"
Nayan Ghosh
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Durgapur, Humanity, Mentally Challenged, Police, West Bardhaman