ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল! প্রযুক্তি দুনিয়ায় ধস দেখল ২০২২, ভবিষ্যৎ টালমাটাল
- Published by:Ananya Chakraborty
Last Updated:
ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এফটিএক্স-এ ব্যাপক পতন বা মেটাভার্সের দুনিয়ায় অতি আগ্রাসী মেটার পদক্ষেপ আসতে ২০২২ সালের প্রযুক্তিগত ব্যর্থতাকেই ইঙ্গিত করছে।
প্রযুক্তির সাম্রাজ্য যে আসলে অনেকটাই মন্দার আঘাতে থরহরি, তা বুঝিয়ে দিল ২০২২ সালটি। রাজস্ব বৃদ্ধির ধীরগতি, ক্রিপ্টোর পতন হোক বা স্বৈরাচারী কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা— ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির ফাটকা যে আদৌ মঙ্গলকারক হয়নি তা বোঝাই যায়। এ বছরই ট্যুইটার দখল করেছেন ইলন মাস্ক। ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এফটিএক্স-এ ব্যাপক পতন বা মেটাভার্সের দুনিয়ায় অতি আগ্রাসী মেটার পদক্ষেপ আসতে ২০২২ সালের প্রযুক্তিগত ব্যর্থতাকেই ইঙ্গিত করছে।
মাস্কের খেয়ালিপনা—
টেসলার সিইও ইলন মাস্কের ট্যুইটার দখল করেছেন, তবে খুব কুসুমাস্তীর্ণ পথে নয়। ৩৭০০ কর্মীকে নিমেষে ছাঁটাই করা দিয়ে বিশৃঙ্খলার শুরু। তারপর নীল টিক সাবস্ক্রিপশনের গোলমাল কর্তৃপক্ষকে গ্রাহকের চোখে খুব স্বচ্ছ করতে পারেনি। মাস্ক পরিকল্পনা করেছেন ট্যুইটারকে ডিজিটাল ‘চণ্ডীমণ্ডপ’-এ পরিণত করবেন, যেখানে বর্তমান সমস্যাগুলি নিয়ে আরও খোলাখুলি বিতর্ক করা যাবে। কিন্তু একে অপরের মতকে সম্মান করবেন।
advertisement
advertisement
কিন্তু ট্যুইটারে, এই সংযম বজায় রাখা বেশ জটিল হয়ে পড়েছে। তার উপর নিয়ম পরিবর্তন যেন গোদের উপর বিষ ফোঁড়া, কেউই জানে না কখন কোন নিয়ম বদলে যায়! হাই-প্রোফাইল সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করার (পরে অবশ্য ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে) ট্যুইটারে মাস্ক-যুগের প্রবর্তন আসলে কর্তার খামখেয়ালিপনার উপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন - ব্রাইটনেস ভলিউম ফুল রেখে স্মার্টফোন দেখেন? অজান্তেই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা ডেকে আনছেন
মাস্ক নিজেকে বাকস্বাধীনতার যুগনায়ক হিসেবে দেখাতে সচেষ্ট। কিন্তু সেই তিনিই তাঁর নীতির সমালোচনাকারী কর্মীদের নিজের সংস্থা থেকে ছাঁটাই করে ফেলেছেন মুহূর্তের মধ্যে। অবশ্যম্ভাবী ভাবে তার প্রভার পড়েছে ট্যুইটারের বিশ্বাসযোগ্যতায়। আপাতত বছর শেষে বেশ খানিকটা অনিশ্চিত তার ভবিষ্যত। ২০২৩ সালে পদার্পণের আগে একটা কথা প্রমাণিত, যদি ট্যুইটার ব্যর্থ হয়, তবে আজকের ‘সোশ্যাল মিডিয়া’-র যে ধারণা তারও পতন শুরু হতে চলেছে। আর যদি ঠিক উল্টোটা হয়, অর্থাৎ মাস্ক যদি কোনও ভাবে এই প্লাটফর্মকে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন, তা হলে সবটা আমূল বদলে যাবে, হয়তো সূচনা হবে নতুন যুগের।
advertisement
জুকারবার্গের মেটাভার্স—
এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির দুনিয়ায় আর একটি নাম মার্ক জুকারবার্গ, তিনি মেটা-র সিইও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিয়ন্ত্রক এবং আইন প্রণেতাদের সুদীর্ঘ হাত ছাড়িয়ে নিজের সংস্থাকে বের করে আনার চেষ্টা করেছেন এই বিলিয়নেয়ার। সে চেষ্টার খেসারত দিতে হয়েছে বহু মানুষকে চাকরি খুইয়ে। এখনও জুকারবার্গ তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প মেটাভার্স নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন, বলা ভাল সে স্বপ্নে নিমগ্ন তিনে। কিন্তু এখনও অবধি, মেটাভার্সের ফাটকা ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হয়। জুকারবার্গ এমন একটি প্লাটফর্ম স্বপ্ন দেখছেন, যা ভার্চুয়াল বিশ্ব হিসাবে সংজ্ঞায়িত হবে, যেখানে মানুষ বাস করবে, কাজ করে এবং খেলবে। কিন্তু এখনও বোধকরি সে সময় আসেনি।
advertisement
আরও পড়ুন: টাকা লেনদেনে ইউপিআই ব্যবহার করেন? এই ভুলগুলি করছেন না তো? জেনে নিন, নয়তো লোকসান!
মেটা ইতিমধ্যে এই বিকল্প বাস্তবতা-র দুনিয়ায় অনেক টাকা লোকসান করে ফেলেছে। সমস্যাটি যে পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে এমন নাও হতে পারে। আসলে এক বৃহদ অংশের মানুষ এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেই চান না। এখনও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
advertisement
অথচ, মেটাভার্স নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন জুকারবার্গ যে গত বছর নিজের সংস্থার নামটাই বদলে দিয়েছিলেন তিনি।
অ্যালেক্সার ব্যর্থতা—
এ বছর প্রায় ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার কথা ঘোষণা করেছিল অ্যামাজন। আসলে সংস্থার কাছে একটি বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ‘আলেক্সা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্স ইউনিট’। গত কয়েক বছরে অ্যালেক্সা মোটেও লাভজনক হিসেবে প্রতিভাত হয়নি সংস্থার কাছে। অ্যামাজন চেয়েছিল প্রথম কম খরচে হার্ডওয়্যার বিক্রি করে স্মার্ট স্পিকারের মাধ্যমে অ্যালেক্সা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট-কে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। কিন্তু এই পরিকল্পনা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
advertisement
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়েছিল অ্যালেক্সা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্সের মাধ্যমে অ্যামাজনে মানুষ আরও বেশি কেনাকাটা করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে আলেক্সা ব্যবহার করে বেশির ভাগ মানুষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনেছেন। আর তারপর সব থেকে বেশি অনুরোধ ছিল পছন্দের কোনও গান বাজানোর। ফলে অ্যামাজনের ব্যবসা বাড়েনি। কিন্তু ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হার্ডওয়্যার ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
advertisement
অ্যাপলের ভুল—
অ্যাপলও যে তার এন্ট্রি-লেভেল আইপ্যাড-এর ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর ভুল করে বসবে তা কেউ আশা করেনি। অ্যাপলের দশম প্রজন্ম আইপ্যাড-এর অত্যাধুনিক ডিজাইন, দ্রুততর A14 বায়োনিক চিপসেট একেবার ঝা চকচকে। কিন্তু এর কিছু ত্রুটি একে মোটেও জনপ্রিয় হতে দেয়নি। যেমন, এতে শুধুমাত্র প্রথম প্রজন্মের অ্যাপল পেন্সিল দিয়ে কাজ করা যায়। লাইটনিংয়ের পরিবর্তে USB-C পোর্ট থাকায় আলাদা অ্যাডাপ্টারের প্রয়োজন হয়৷ ম্যাজিক কি-বোর্ডও ব্যবহার করা যায় না।
এফটিএক্সের পতন
ক্রিপ্টো জায়ান্ট এফটিএক্সের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া এবং প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ব্যাঙ্কম্যান-ফ্রায়ডের গ্রেফতারি সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। কম ট্রেডিং ফি, উচ্চ-প্রোফাইল অধিগ্রহণ এবং আক্রমণাত্মক বিপণন কৌশল গত কয়েক বছরে এফটিএক্স-কে গত কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি এনে দিয়েছে। মাত্র ৩০ বছর বয়সী ব্যাঙ্কম্যানের সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় যখন তার কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকের আমানত ব্যবহার করে বাজি ধরার অভিযোগ আনা হয়।
view commentsLocation :
Kolkata,West Bengal
First Published :
December 20, 2022 12:57 PM IST

