রাতে চক্ষুদান করায় অদৃশ্য হাত এসে ধরে চুলের মুঠি, মানকরের বড়মা কালীর নেপথ্য গল্প

Last Updated:

বর্ধমান জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম মানকর । এই গ্রামে আজ থেকে প্রায় সাতশো বছর আগে কালী পূজা শুরু করেন রামানন্দ গোস্বামী ।

#বর্ধমান: বর্ধমান জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম মানকর ।  এই গ্রামে আজ থেকে প্রায় সাতশো বছর আগে কালী পূজা শুরু করেন রামানন্দ গোস্বামী । তিনি ছোটবেলা থেকে কালী মায়ের একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন । কাব্যতীর্থ পাশ করার পর বেশীর ভাগ সময়ে শ্মশানে পড়ে থাকতেন । তাঁর বাবা দেবভক্ত হলেও কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার জন্য পুত্রের কালী-মা ভক্তি মোটেই পছন্দ করতেন না ।
কথিত আছে, কঠোর সাধনা করে মায়ের দর্শন পেয়ে ছিলেন রামানন্দ গোস্বামী । মায়ের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন ঠাকুর রামানন্দ । তাঁর সাধনার স্থান ছিল কাশ আর বেতবনে ঘেরা শ্মশান । বর্তমানে যা মানকর ভট্টাচার্য পাড়া  নামে খ্যাত।
বলা হয়, বড় মা কালী নাকি তিন বোন । মেজ বোন মানকর ডাঙাপাড়ায় ক্ষ্যাপা কালী, আর এক বোন পাল পাড়ায় পঞ্চানন কালী । একবার এক ঘটনা ঘটেছিল সাধক রামানন্দ শ্মশানে ধ্যানে মগ্ন । পাড়ার কেউ তাঁর বাবাকে এই  খবর দিয়েছেন । তাঁর কৃষ্ণভক্ত বাবা শ্মশানে এসে শুধু কৃষ্ণ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি । ওই শ্মশানের মধ্যে পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠা করে মায়ের মন্দির তৈরী করেছিল ।
advertisement
advertisement
পরবর্তীকালে মায়ের সেবার দায়িত্ব সঁপেছিলেন ঠাকুর বাণীকণ্ঠ ভট্টাচার্যের হাতে । তিনি ছিলেন মানকরের তৎকালীন জমিদার সদাশিব ভট্টাচার্যের বংশধর । প্রচলিত গল্পানুযায়ী, সাধক রামানন্দ তপস্যার দ্বারা সাতঘড়া জল এনেছিলেন এবং ওই জলেই বড় মা কালির মন্দিরে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়েছিল তাকে ।
পরবর্তীকালে সাধক রামানন্দের রীতি অনুযায়ী ঠাকুর বাণীকণ্ঠ পূজা অর্চনা করতেন । পুজোর জন্য আট রকমের ডাল যা আটটি উনুনে সেদ্ধ হত । কুড়ি সের এক পোয়া চালের অন্নভোগ ইচ্ছাপুরনের জন্য । শাক থেকে শুক্তো, মায়ের নতুন পুকুরের মাছ, গোবিন্দ ভোগ চালের পায়েস, ন'শলি চালের নৈবিদ্য, পাঁচ সের করে দশ সের ওজনের দুটি কদমা ।  এছাড়াও পাঁঠাবলি দেওয়া হত ।
advertisement
শ্যামাপদবাবু জানান, " একদিন এক শাঁখারী মায়ের পুকুর পাড় দিয়ে যাচ্ছেন । এমন সময় একটি কালো বরণ বাচ্চা মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা পরতে চায় । শাঁখারী দু-হাতে শাঁখা পরাতেই আরও দুটি হাত বাড়িয়ে দেয় ওই মেয়েটি । শাঁখারী হতবাক হলেও আবারও দুটি শাঁখা পরিয়ে টাকা চায় । মেয়েটি তখন উত্তরে জানায়,' মন্দিরের কুলুঙ্গিতে বেলপাতা ঢাকা দু-টাকা রাখা আছে ছেলেকে দিতে বলবি ।'
advertisement
শাঁখারী তাঁর কথা মতো বাণীকণ্ঠ ঠাকুরের কাছে সমস্ত কথা বলেন । ঠাকুর অবাক হলেও দু-টাকা সেখান থেকে দিয়ে শাঁখারীকে বলেন, আমার কোন মেয়ে নেই । যে মেয়েটি তোমার শাঁখা পরেছে তাঁর কাছে নিয়ে চল । শাঁখারী বাণীকণ্ঠকে নিয়ে গেলেও মেয়েটিকে আর দেখতে পায়নি । তখন ঠাকুর বুঝতে পেরে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়েই মাকে শাঁখা দেখানোর অনুরোধ করেন । সন্তানের অনুরোধে মা কালী স্বয়ং পুকুরের মাঝে চার হাত তুলে শাঁখা দেখায় । সেই থেকে ওই শাঁখারীর বংশধরেরা এখনও মায়ের পুজোয় শাঁখা দিয়ে যায় । এছাড়াও রাত্রে মায়ের প্রতিমা তৈরীর কাজ নিষিদ্ধ ।
advertisement
দুর্গাপুজোর পর ত্রয়োদশীর দিন মায়ের কাঠামোয় মাটি পড়ে । কথিত আছে  বহু বছর আগে একবার এক প্রতিমাশিল্পী  রাত্রে মায়ের চক্ষুদান করছেন ।  ওই সময় এক অদৃশ্য হাত তার চুলের মুঠি ধরে বাইরে বের করে দিয়েছিল । পরে মন্দিরের পাশে তাল গাছে তার মুখ ঘষে ফেলে দিয়েছিল । পরের দিন সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ।
advertisement
অন্যদিকে, মায়ের মুর্তিতে ছিন্নভিন্ন রক্তের দাগ দেখতে পায় । তখন থেকে আজও মায়ের প্রতিমা দিনেই তৈরী করা হয় । বাণীকণ্ঠ ঠাকুরের বর্তমান বংশধর মুক্তিপদ ভট্টাচার্য ও সুশান্ত ভট্টাচার্য জানান, " অতীতের রীতি মেনে এখনও পুজো হয় । পুজোর দিন রাতভর এখনও নরনারায়ন সেবা চলে" ।  তবে চলতি বছর ঠাকুরের বংশধর সুদীপ ভট্টাচার্য্য ও সুশান্ত ভট্টাচার্য্যের উদ্যোগে নতুন মন্দির তৈরী করা হয়েছে ।
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
রাতে চক্ষুদান করায় অদৃশ্য হাত এসে ধরে চুলের মুঠি, মানকরের বড়মা কালীর নেপথ্য গল্প
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement