#সিউড়ি: বীরভূমের লালমাটির ছোট্ট গ্রামের সাদামাটা কৃষক সন্তান মিনহাজুল নাম তুললেন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। ছোট থেকে স্বপ্ন ছিল কিছু একটা করে নিজের নাম বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার। অনেকদিন ধরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বীরভূমের দুবরাজপুরের ছোটো সালুঞ্চি প্রত্যন্ত এলাকার কৃষক সন্তান মিনহাজুল মন্ডল। এই স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে তাঁকে অনেকের কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলেও নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি তিনি। ধীরে ধীরে তৈরী হয় গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নিজের নাম তোলার প্রক্রিয়া।
নিজের নাম গিনেস বুকে তোলার জন্য মিনহাজুল মন্ডল একটি ২১৭০ ফুট ১০ ইঞ্চির Staple Pin দিয়ে চেন তৈরি করেছেন। টানা ৮২ দিন অর্থাৎ প্রায় তিন মাস এই চেন তৈরি করার কাজ চালিয়েছেন বীরভূমের যশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই যুবক। অবশেষে সফলতা আসে গত বছর শেষে। গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষে ৩০ তারিখ গিনেস কর্তৃপক্ষ দুবরাজপুরে এসে স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে সেই দীর্ঘ চেনের মাপ নিয়ে যায়। মাপ করার সময় দেখা যায় এই Staple Pin দিয়ে তৈরি করা চেনের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ২১৭০ ফুট ১০ ইঞ্চি। গতকাল তাঁকে গিনেস কর্তৃপক্ষ তাঁর বিশ্ব রেকর্ডের নথি পাঠিয়েছে, সঙ্গে একটি পুরস্কার।
মিনহাজুল মন্ডল বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের বাসিন্দা। তার বাবা হজরুল হক একজন কৃষক, আর মা সাধারণ গৃহবধু। মিনহাজুল পশ্চিম বর্ধমানের ইছাপুর এম.সি. হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। আর বর্তমানে তিনি রানীগঞ্জের টিডিবিতে ভূগোল অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মিনহাজুল মন্ডলের নতুন কিছু করার অদম্য ইচ্ছা অনেকদিনের। যা সম্পর্কে জানা যায় তার স্কুলের শিক্ষকদের থেকে।
মিনহাজুল মন্ডল Staple Pin দিয়ে চেন তৈরির অন্যদের রেকর্ড ভেঙে নিজের ঝুলিতে নিয়ে এসেছেন পুরস্কার। প্রথম এই রেকর্ড তৈরি করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেকেঞ্জি মার্টিন ২০০৮ সালে। তখন তার তৈরি চেনের দৈর্ঘ্য ছিল ৮৫০ ফুট। পরে তিনি আবার নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙেন ২০১১ সালে। যে সময় চেনের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১১৫৭ ফুট। সেই রেকর্ড বজায় ছিল দীর্ঘ ৭ বছর। তবে এই রেকর্ডকে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ভেঙে দেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা অনুপম সরকার। তিনি তৈরি করে ফেলেন ১৮৫৭ ফুটের Staple Pin–এর চেন। আর অনুপম সরকারের এই রেকর্ড ২০২০ সালের জুন মাসে ভাঙলেন বীরভূমের মিনহাজুল মন্ডল। বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বড় Staple Pin চেনের দৈর্ঘ্য হলো ২১৭০ ফুট ১০ ইঞ্চি। আর এই রেকর্ডের অধিকারী মিনহাজুল।
খুশি মিনহাজুল জানালেন, ‘এই চেন কি কাজে লাগবে জানি না, তবে আমার উদ্দেশ্য ভারত ঐক্য ও সম্প্রীতির দেশ। সব জাতি-ধর্ম-বর্ণ কে এক চেনের মধ্যে বাঁধার চেষ্টা করেছি।’ সোমবার দুবরাজপুরের বিডিও অনিরুদ্ধ রায় ও দুবরাজপুর থানার ইন্সপেক্টর মাধবচন্দ্র মন্ডল মিনহাজুলকে সংবর্ধনা জানান। সব সময়ের জন্য পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন দুবরাজপুরের বিডিও ও দুবরাজপুর থানার ইন্সপেক্টর।
Supratim Das