দক্ষিণবঙ্গ: উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। ওজন ১৩ টনেরও বেশি। গোটাটাই একটিই কালো পাথর নিপুণভাবে কেটে তৈরি। এমন সুবিশাল শিবলিঙ্গ এই রাজ্যে তো নেই-ই, দেশের মধ্যেও বিরল। মহা শিবরাত্রির পুণ্যতিথিতে বর্ধমানেশ্বর মন্দিরে একবার পুজো দিলে শান্তিতে ভরে উঠবে আপনার মন।
শৈব ও শাক্ত ধর্মের পীঠস্থান বলা হয় বর্ধমানকে। এই শহরে রয়েছে বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলার মন্দির। রয়েছে নানান প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরও। আবার এই শহরেরই উপকণ্ঠে রয়েছে রাজ আমলে প্রতিষ্ঠিত একশো আট শিবমন্দির। তেমনই রয়েছে রাজ্যের সবচেয়ে বড় কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। সেই শিবলিঙ্গ আবার ১৬০০ থেকে ১৭০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। কথিত আছে, একসময় স্বয়ং কণিষ্ক নিয়মিত এই শিবলিঙ্গের পুজো করতেন।
আরও পড়ুন: শিবরাত্রিতে ঘুরে আসুন মহাদেবের এই মন্দিরে, শিল্পাঞ্চলে বসেও পাবেন অপার শান্তি
শিবরাত্রি উপলক্ষে এখন সেজে উঠছে এই মন্দির চত্বর। মেলা বসছে। তৈরি হচ্ছে দোকান পাট। মহাশিবরাত্রির পুণ্যতিথিতে অগণিত ভক্ত সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় করবেন এখানে। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসনও। তৈরি ব্যারিকেড।
রাজ্যের প্রসিদ্ধ শিব মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের আলমগঞ্জের বর্ধমানেশ্বর শিব মন্দির। বিশাল আকারের কারণে এই শিব ‘মোটা শিব’ বা ‘বুড়ো শিব’ নামেও পরিচিত। ১৯৭২ সালে এলাকায় পুকুর খোঁড়ার জন্য মাটি কাটার কাজ চলছিল। সেইসময় হঠাৎই পাথরের গায়ে আঘাত লাগে গাঁইতির। কৌতুহল বাড়ে শ্রমিকদের। ধীরে ধীরে খোঁড়া হয় আশপাশ। তখনই মাটির নীচ থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে বিশালাকার গৌরিপট্ট-সহ এই শিবলিঙ্গ। পরে ক্রেনে করে তুলে পাশে স্থাপন করা হয় শিবলিঙ্গটিকে।
আরও পড়ুন: স্বপ্নে দেখে বর্ধমানের একশো আট শিবমন্দির তৈরি করেছিলেন বর্ধমানের মহারানি
মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে দুধপুকুর। সেই পুকুরে স্নান সেরে পুজো দেন ভক্তেরা। শ্রাবণ মাসে পাওয়া গিয়েছিল শিবলিঙ্গটিকে, তাই সেই মাসেই এই শিবের আবির্ভাব দিবস পালন করা হয়। ওইদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী গঙ্গা থেকে বাঁকে করে জল এনে শিবের মাথায় ঢালেন। শিবরাত্রিতে অগণিত ভক্তের ভিড় হয় মন্দিরে। মেলা বসে। কয়েকদিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর বসে।
এই শিবলিঙ্গের প্রাচীনত্ব নিয়ে ইতিহাসবিদদের মনে কোনও দ্বিমত নেই। তবে ঠিক কত বছরের প্রাচীন তা নিয়ে প্রামাণ্য কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। অনেকের মতে, এই শিবলিঙ্গ কণিষ্কের সময়ে। অর্থাৎ প্রায় ১৬০০ -১৭০০ বছর আগের। কণিষ্ক নিজে এই কালো শিবলিঙ্গে নিয়মিত পুজো করতেন বলেও মনে করেন অনেকে। পরবর্তী সময়ে বন্যায় তা দামোদরে ভেসে আসে। তবে এত ভারী শিবলিঙ্গের পক্ষে নদীতে ভেসে আসার সম্ভাবনা নিয়েও ইতিহাসবিদদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। সে যাই হোক সাধের বর্ধমানেশ্বরকে নিয়ে গর্বিত বর্ধমানবাসী।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bardhaman, Lord Shiva, Maha Shivaratri, Shivaratri