Dakat Kali: কাউকে খালি হাতে ফেরান না মা! গ্রাম্য দেবী কীভাবে ডাকাত কালী হয়ে উঠলেন? জানুন হাড়হিম করা ইতিহাস
- Published by:Aishwarya Purkait
- hyperlocal
- Reported by:Bonoarilal Chowdhury
Last Updated:
Dakan Kali: আজও বহড়ানের ডাকাত কালী পুজোয় প্রচলিত রয়েছে প্রাচীন রীতি। পুজোর প্রথম নৈবেদ্য আসে পুরনো ডাকাত পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে। তাঁদের মাধ্যমেই 'চুরি করা চালকুমড়ো' মায়ের কাছে নিবেদন করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, 'মা ডাকাত কালী কাউকে খালি হাতে ফেরান না'।
কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান, বনোয়ারীলাল চৌধুরী: সেসময় চারিদিকে ছিল ঘন ঝোপঝাড়, অরণ্যের নিস্তব্ধতা। সেই জঙ্গলের মধ্যে ছিল এক প্রাচীন অশ্বত্থ গাছ। এখনও সেই গাছের নীচেই পূজিত হন মা ডাকাত কালী। পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম-২ ব্লকের গঙ্গাটিকুরি পঞ্চায়েতের বহড়ান গ্রাম এখন বিখ্যাত এই ভয়ঙ্করী দেবীর পুজোর জন্য। প্রায় সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি পুরনো এই বহড়ান ডাকাত কালী পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক হাড়হিম করা কাহিনী। গ্রামের গ্রাম্য দেবীই পরিণত হয়েছিলেন এক ডাকাত সর্দারের আরাধ্যা দেবীতে। যাঁকে আজও মানুষ ভক্তি আর ভয়ের মিশ্র অনুভূতিতে পূজা করেন।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিনশো বছর আগে গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে বসবাস করতেন এক দুর্ধর্ষ ডাকাত পরেশ হাজরা। তাঁর নাম শুনলেই আশেপাশের গ্রাম কেঁপে উঠত। মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান সীমান্তে বিস্তৃত এলাকায় ছিল তাঁর প্রভাব। পরেশ হাজরার ডাকাত দল লুঠ করে আনা ধনসম্পদ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিত। কিন্তু প্রতিটি অভিযানের আগে তিনি পুজো দিতেন গ্রামের অশ্বত্থ গাছতলায় পূজিত গ্রাম্য দেবী মা কালীর। পরে প্রতি বছর নিজের বাড়ির পাশাপাশি সেই অরণ্যের থানেও তিনি মা কালীর ধুমধাম সহকারে পুজো করতেন। ধীরে ধীরে সেই গ্রাম্য দেবীই প্রতিষ্ঠিত হন আজকের ‘ডাকাত কালী’ নামে।
advertisement
আরও পড়ুনঃ নিভিয়ে দেওয়া হয় গোটা গ্রামের আলো! ‘জয় মা কালী’ ধ্বনিতে মশালের আলোয়…! কাটোয়ার বোলতলা কালীর বিসর্জনে অলৌকিক অভিজ্ঞতা
গ্রামবাসী রণবীর সিনহা বলেন, ‘যেখানে মায়ের এখন পুজো হয় এই জায়গা পুরোটাই জঙ্গলে ভরা ছিল। এটাই আমাদের গ্রাম্য দেবী নামে পরিচিত ছিল। পরেশ হাজরা নামের এক ডাকাত ছিলেন তিনি এখানে পুজো দিয়ে সাধনা করে বেরিয়ে যেতেন কাজে। সেই থেকেই মায়ের নাম হয়ে গেল ডাকাতকালী’।
advertisement
advertisement
আজও বহড়ানের ডাকাত কালী পুজোয় প্রচলিত রয়েছে প্রাচীন রীতি। পুজোর প্রথম নৈবেদ্য আসে পুরনো ডাকাত পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে। তাঁদের মাধ্যমেই ‘চুরি করা চালকুমড়ো’ মায়ের কাছে নিবেদন করা হয়। এটি বহু প্রাচীন এবং অনন্য এক প্রথা। পুজো হয় তন্ত্রমতে, যেখানে মায়ের ভোগে থাকে সাত রকমের ভাজা, ঘি-ভাত, খিচুড়ি, পায়েস-সহ নানা উপাচার।
advertisement
আরও পড়ুনঃ বাতাসা-নকুলদানা-কদমার সুবাসে ম ম করছে কালনার অলিগলি, কালীপুজোর আগে এ কোন উৎসব লেগেছে জানেন!
এই পুজোর সময় লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হন বহড়ান গ্রামে। ফলে প্রতি বছর পুলিশ প্রশাসনকে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। আগে যেখানে ছিল ঘন জঙ্গল আর নিস্তব্ধতা, আজ সেখানে গড়ে উঠেছে কংক্রিটের পরিবেশ। অশ্বত্থ গাছটি আজও অটুট, তার তলাতেই নির্মিত হয়েছে পাকা বেদি। তবে এখনও কোনও মন্দির গড়ে ওঠেনি। খোলা আকাশের নিচে সেই একই জায়গাতেই হয় বহড়ানের ডাকাত কালী পুজো।
advertisement
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পুজো কমিটির সদস্য অমিতাভ সরকার বলেন, ‘কালীপুজোর দিনে এই মন্দির প্রাঙ্গণ পুরো ভর্তি হয়ে থাকে। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে বহু ভক্তবৃন্দরা আসেন পুজো দিতে’। আজিমগঞ্জ-কাটোয়া রেলপথের বহড়ান স্টেশন থেকে সামান্য দূরেই মায়ের আস্তানা। ভক্তরা সহজেই ট্রেনে বা সড়কপথে পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে। বহড়ানের মা ডাকাত কালীর মূর্তি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপে নির্মিত। তবে গ্রামের মানুষ মাকে পুজো করেন অপরিসীম ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে। তাঁদের কথায়, ‘মা ডাকাত কালী কাউকে খালি হাতে ফেরান না’। যিনি একদিন ডাকাতদের সাধনার শক্তি ছিলেন, আজ তিনি সবার মা। বহড়ানের এই ডাকাত কালী পুজো আজও বহন করে চলেছে ভয়, ভক্তি আর বিশ্বাসের মিশ্র ঐতিহ্য।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Barddhaman (Bardhaman),Barddhaman,West Bengal
First Published :
October 17, 2025 12:36 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
Dakat Kali: কাউকে খালি হাতে ফেরান না মা! গ্রাম্য দেবী কীভাবে ডাকাত কালী হয়ে উঠলেন? জানুন হাড়হিম করা ইতিহাস