#পশ্চিম বর্ধমান: ঘুরতে যাওয়া আর পুজো (Durga Puja 2021) দেখার আনন্দ একসঙ্গে পেতে চান? তাহলে চলে আসতে পারেন কালিকাপুর রাজবাড়িতে। প্রায় ৪০০ বছর আগের এই রাজবাড়ির অবস্থা এখনও বেশ লক্ষণীয়। ঐতিহ্যের সঙ্গে মাথা তুলে এখনও দাড়িয়ে আছে এই রাজবাড়ি। বলিউড-টালিউডের বহু সিনেমায় দেখা পাওয়া গিয়েছে কালিকাপুর রাজবাড়ির। এখনও সেখানে নিয়ম মেনে চলে আসছে পুজো। পরিবারের সকলেই বাইরে থাকেন। তবে সবাই এসে জড়ো হন পুজোতে। রাজবাড়ির পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে আসেন বহু মানুষ। রাজবাড়িতে শুটিং থেকে যে আয় হয়, সেই টাকা দিয়েই আয়োজন করা হয় দুর্গাপুজোর। সারা বছর চলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।
৪০০ বছর আগে বর্ধমান রাজার দেওয়ান ছিলেন পরমানন্দ রায়। সেই সূত্রেই তাঁর হাতে আসে কাঁকসার বিরাট একটি অংশের জমিদারিত্ব। জঙ্গল অংশ কেটে তৈরি হয় বসতবাড়ি। তৈরি হয় পুকুর, বাগান। আর পরিবারের দুর্গাপুজো করার জন্য তৈরি হয় দুর্গা মন্দির। পরমানন্দের সাত পুত্রের জন্য তৈরি হয় সাতমহলা প্রাসাদ। এই প্রাসাদই কালিকাপুর রাজবাড়ি বলে খ্যাত। জানা যায়, পরমানন্দ ছিলেন কালিকাপুরের পাশের গ্রাম মৌখিরার বাসিন্দা। তবে সেখানে এই বিশাল রাজবাড়ি গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে, তিনি কালিকাপুরে চলে আসেন। সেখানেই তৈরি করেন এই বসতবাড়ি। তাছাড়াও অজয় নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় মৌখিরা গ্রামে ছিল বন্যার প্রকোপ। সেজন্যই কালিকাপুরের জঙ্গলের মাঝে এই রাজবাড়ি তৈরি করেন পরমানন্দ রায়। এখান থেকেই তিনি চালিয়ে যেতেন খাকসার আউসগ্রাম এর বিশাল অংশের জমিদারিত্ব।
সাতমহলা প্রাসাদে সাতটি বাড়ি আলাদা হলেও, পুজো মন্ডপ রয়েছে একটি। এখানে রয়েছে তিনদিক ঘেরা একটি আটচালা মণ্ডপ। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এখানে পুজো হয়ে আসছে। তবে পরমানন্দ রায়ের বর্তমান বংশধরেরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। কিন্তু বোধনের আগেই ফিরে আসেন বাড়িতে। পুজোর আয়োজন করা হয় পরম যত্নে। বাড়ির সকলে মিলে মেতে ওঠেন দুর্গা পুজোর (Durga Puja 2021) আনন্দে। কালিকাপুর রাজবাড়িতে একাধিক সিনেমার শুটিং হয়েছে। প্রায় নিত্যদিনই চলতে থাকে শুটিং। ঋতুপর্ণ ঘোষ থেকে আবির চট্টোপাধ্যায়, অনেকেই এই রাজবাড়িতে এসে নিজেদের ছবির শুটিং করেছেন। 'গয়নার বাক্স' সিনেমাও এই রাজবাড়ীতে শুট করা হয়েছে। অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত, 'গুপ্তধন রহস্য'-র শুটিং হয়েছিল এখানে। রাজবাড়ির পুজোও (Durga Puja 2021) দেখানো হয়েছে সিনেমায়।
আরও পড়ুন- ১৮ পুতুলের দুর্গা পূজা! একচালায় একাধিক মূর্তি, বীরভূমের এই পুজোর বিশেষত্ব কী
পশ্চিম বর্ধমান এবং পূর্ব বর্ধমান থেকে কম সময়ের মধ্যেই কালিকাপুর রাজবাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যায়। বর্ধমান মেন টাউন থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে কালিকাপুর রাজবাড়ি। দুর্গাপুর থেকে কালিকাপুর রাজবাড়ির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। আসানসোল থেকে ৭৭ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে কালিকাপুর রাজবাড়ি। দুর্গাপুরের মুচিপাড়া থেকে মলানদিঘি রোড ধরে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলেই, আপনি কালিকাপুর রাজবাড়ি পৌঁছে যাবেন। বর্ধমান থেকে কালিকাপুর রাজবাড়ি যেতে হলে, আপনাকে পানাগড় থেকে রাজবাড়ি যাওয়ার রাস্তা ধরতে হবে। কলকাতা থেকেও কালিকাপুর রাজবাড়ি এসে ঘুরে যেতে পারেন। দূরত্ব ১৭৫ কিলোমিটার।
তবে পুজোর সময় কালিকাপুর রাজবাড়িতে সেই অর্থে অতিথিদের রাত্রিবাসের অনুমতি দেওয়া হয় না। কারণ এই সময়ে রাজবাড়ির ঘরগুলি পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। কিন্তু রাত্রিবাস ছাড়া, রাজবাড়ি চত্বর ঘুরে দেখার পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। অন্য সময় গেলে কালিকাপুর রাজবাড়িতে রাত্রিবাসের অনুমতি পাওয়া যায়। তাই পুজোর সময় পুজোর ছুটির একটা দিন অন্য রকমভাবে কাটাতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।
নয়ন ঘোষ
আরও পড়ুন-কাশীপুর রাজ পরিবারের ১৬ দিনের দুর্গাপুজো! নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ গল্পকথা
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Durga Puja 2021, Durga Puja Travel