হোম /খবর /পাঁচমিশালি /
কেন সন্তানবতী হিন্দু রমণীরাই নীল পুজো করেন? কী এর মাহাত্ম্য?

কেন সন্তানবতী হিন্দু রমণীরাই নীল পুজো করেন? কী এর মাহাত্ম্য?

সন্তানের মঙ্গল কামনায় পুজো করেন মায়েরা ।

সন্তানের মঙ্গল কামনায় পুজো করেন মায়েরা ।

‘নীল পুজো’ বা নীলষষ্ঠী হল বাংলার হিন্দুসমাজের এক লৌকিক উৎসব, যা মূলত শিব-দুর্গার বিবাহ বা শিবের বিয়ে নামে পরিচিত। সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় এই পুজো ৷

  • Last Updated :
  • Share this:

#কলকাতা: বাঙালির বারো তেরো পার্বণ । একটা পুজো শেষ হতে না হতেই আরও একটা পুজো চলে আসে । তবে বাঙালির এমন অনেক উ‍ৎসব রয়েছে, যেগুলির হয়তো নাম ডাক নেই তেমন ৷ তবে বাঙালির বারোমাস্যা এই সব পুজো কিংবা ব্রত ছাড়া কিন্তু অসম্পূর্ণ ৷ গ্রাম বাংলায় বহুল প্রচলনে থাকলেও কালের নিয়মে শহরের বুকে কৌলীন্য হারিয়েছে তারা ৷ এমনই এক উৎসব হল-‘নীল পুজো’ বা ‘নীল ষষ্ঠী’ ৷

‘নীল পুজো’ আসলে কী?

‘নীল পুজো’ বা নীলষষ্ঠী হল বাংলার হিন্দুসমাজের এক লৌকিক উৎসব, যা মূলত শিব-দুর্গার বিবাহ বা শিবের বিয়ে নামে পরিচিত। সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় এই পুজো ৷1113

নীল বা নীলকণ্ঠ মহাদেব শিবের অপর নাম। সেই নীল বা শিবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলক্ষ্যে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান সংঘটিত হয়। কাহিনি অনুসারে, দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর শিবজায়া সতী পুনরায় সুন্দরী কন্যারূপে নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে আবির্ভূত হন ৷ রাজা তাঁকে নিজ কন্যারূপে লালন-পালন করে শিবের সঙ্গে বিয়ে দেন ৷ বাসর ঘরে নীলাবতী শিবকে মোহিত করেন এবং পরে মক্ষিপারূপ ধরে ফুলের সঙ্গে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ৷ রাজা-রাণীও শোকে প্রাণবিসর্জন দেন ৷ নীলপূজা শিব ও নীলাবতীরই বিবাহ-অনুষ্ঠানের স্মারক ৷

নীল পুজোর রীতি

নীলসন্ন্যাসীরা ও শিব-দুর্গার সঙেরা পূজার সময়ে নীলকে সুসজ্জিত করে গীতিবাদ্য সহযোগে বাড়ি বাড়ি ঘোরান এবং ভিক্ষা সংগ্রহ করেন। এ সময় তাদেরে মুখে শোনা যায় এক বিশেষ ধরনের গান ৷ যা লোকমুখে ‘নীলের গান’ বলেই পরিচিত ৷ তবে এই গানের আসল নামটি হল-‘অষ্টক গান’ ৷

চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সারাদিন উপোস করে বিকেলে শিবের মাথায় জল ঢালেন সন্তানবতী হিন্দু রমণীরা ৷ ‘নীলের ব্রত’ শুনে ব্রত শুনে সন্তানের কল্যাণার্থে প্রদীপ জ্বালিয়ে শিবপুজো করে সারাদিনের উপবাস ভঙ্গ করেন ৷ নিম বা বেল কাঠ দিয়ে নীল বা শিবের মূর্তি তৈরি হয় ৷ চৈত্র সংক্রান্তির বেশ আগেই নীলকে মণ্ডপ থেকে নীচে নামানো হয়। নীলপূজার আগের দিন অধিবাস; অধিক রাত্রে হয় হাজরা পূজা অর্থাৎ বিয়ে উপলক্ষে সকল দেবতাকে আমন্ত্রণ করা। হাজরা পূজায় শিবের চেলা বা ভূত-প্রেতের দেবতাকে পোড়া শোল মাছের ভোগ দেওয়া হয় ৷ পরদিন নীলপূজার সময় নীলকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে নতুন লালশালু কাপড় পরিয়ে অন্ততপক্ষে সাতটি বাড়িতে নীলকে ঘোরানো হয়।

11

নীলসন্ন্যাসীরা একইরকম লাল কাপড় পরে পাগড়ি মাথায়, গলায় রুদ্রাক্ষমালা ও হাতে ত্রিশূল নিয়ে নীলকে সঙ্গে করে এই মিছিল করেন ৷ এদের দলপতিকে বলা হয় বালা ৷ সঙ্গে থাকে ঢাক-ঢোল, বাঁশী বাজনদারের দল এবং কাল্পনিক শিব-দুর্গার সাজে সঙেরা। গৃহস্থ মহিলারা উঠানে আল্পনা দিয়ে নীলকে আহ্বান করে বরাসনে বসিয়ে তাঁর মাথায় তেলসিঁদুর পরিয়ে দেন। এরপর নীলের গান শুরু হয়:

"শুন সবে মন দিয়ে হইবে শিবের বিয়ে

কৈলাসেতে হবে অধিবাস।

(ও) তাতে নারদ করে আনাগোনা কৈলাসে বিয়ার ঘটনা

বাজে কাঁসী বাঁশী, মোহন বাঁশরী।"

বিয়ের ঘটক ভাগিনেয় নারদ মুনির কাছে শিব আর্তি জানান,

"ভাইগনা যদি উপকারী হও

তবে বিয়া দিয়া আমার প্রাণ বাঁচাও"

বিয়ের পর নীলের গানে থাকে সংসারী হর-পার্বতীর কথা, শিবের কৃষিকাজ, গৌরীর শাঁখা পরা প্রভৃতি এবং ভিখারি শিবের সঙ্গে অন্নপূর্ণা শিবানীর দ্বান্দ্বিক সহাবস্থানের কাহিনি। গানের প্রথম অংশ দলপতি বালারা এবং পরবর্তী অংশ অন্য নীলসন্ন্যাসীরা গেয়ে থাকেন। গানের শেষে গৃহস্থরা সন্ন্যাসীদের চাল-পয়সা, ফল প্রভৃতি ভিক্ষাস্বরূপ দেন ৷

Published by:Simli Raha
First published:

Tags: Nil Sasthi, Poila Boisakh 2021