প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের বা কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি শাস্ত্রে প্রদোষ ব্রত উদযাপনের পক্ষে প্রশস্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। সপ্তাহের যে বারে এই তিথি পড়ে, সেই বারের নাম অনুসারে প্রদোষ ব্রত চিহ্নিত হয়। আজ প্রদোষ ব্রত পড়েছে সোমবারে, তাই একে আখ্যা দেওয়া হয়েছে সোম প্রদোষ ব্রত নামে।
সোমবারে যদি প্রদোষ ব্রত পড়ে, তবে তাকে একটু বিশেষ মর্যাদা সহকারে গণ্য করতে হয়। কেন না, এই ব্রতের আরাধ্য সপরিবার হরগৌরী; আবার সোমবার শিবের বিশেষ প্রিয়। যাঁর নাম অনুসারে এই বারটি চিহ্নিত হয়েছে, সেই সোম বা চন্দ্রদেব আবার এই প্রদোষ ব্রত উদযাপন করেই মুক্তি পেয়েছিলেন ক্ষয়রোগ থেকে।
বলা হয়, যিনি নিষ্ঠাপূর্বক, সংযম অবলম্বন করে এই সোম প্রদোষ ব্রত উদযাপন করেন, হরগৌরীর কৃপায় তাঁর পূর্বজন্মের এবং ইহজন্মের সব পাপ ধ্বংস হয়। একই সঙ্গে, চন্দ্রদেবও প্রসন্ন হন, গ্রহস্থানে চন্দ্রের রুষ্ট দৃষ্টি অন্তর্হিত হয়ে জীবন সুখে পূর্ণ হয়।
পুরাণকথা মতে, দক্ষ প্রজাপতি তাঁর ২১ জন মেয়ের সঙ্গে চন্দ্রের বিবাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু চন্দ্র তাঁর সব স্ত্রীকে সমান গুরুত্ব দিতেন না। তিনি শুধু আকৃষ্ট ছিলেন রোহিণীর ভুবনমোহিনী রূপে। কন্যারা এই নিয়ে অভিযোগ জানালে দক্ষ শাপ দেন যে চন্দ্র ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হবেন! এর পর প্রদোষ ব্রত উদযাপন করে, শিবকে প্রসন্ন করে এই শাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। সৌরাষ্ট্রপ্রদেশে যে স্থানে চন্দ্রদেব শিবের উপাসনা করেছিলেন, আজও সেখানে তিনি বিরাজ করছেন সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের রূপে। শুধু তা-ই নয়, শাপগ্রস্ত চন্দ্রকে মর্যাদা প্রদানের জন্য নিজের মস্তকেও ধারণ করেছিলেন আশুতোষ।
তাই এই সোম প্রদোষ ব্রতের মাহাত্ম্য অপরিসীম। অন্য প্রদোষ ব্রতে সকালে উপাসনার পাট না থাকলেও এক্ষেত্রে আছে। সকালে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে শিবলিঙ্গের জলাভিষেক করতে হয়। এর পর মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র (ওঁ ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্/উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যৌর্মুক্ষীয় মামৃতাত্) পাঠ করে বেলপাতা, ধুতুরা ফুল, চাল, ধূপ, দীপ, পান, সুপারি অর্ঘ্য হিসাবে অর্পণ করতে হয় দেবাদিদেবকে। সায়াহ্নে হয় তাঁর সপরিবার পূজা। প্রদোষ কাল অর্থে সন্ধ্যাকালকে বোঝানো হয়। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে সূর্যাস্তের সময় থেকে পরবর্তী ৯০ মিনিট পর্যন্ত প্রদোষকাল বলে গণ্য করা উচিৎ। আজ যদিও সন্ধ্যাপূজার পুণ্য লগ্ন পড়েছে সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিট থেকে রাত ৯টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত।
এই সময়ের মধ্যে ওম উমা সহিত শিবায় নমঃ মন্ত্র ১০৮ বার জপ করতে হবে।
যথাবিহিত অভিষেকের সঙ্গে শিবের পূজা করতে হবে।
পূজা সমাপনান্তে দীপ এবং ধূপ সহযোগে আরতি করতে হবে।
যদি যজ্ঞের আয়োজন করা হয়, সেক্ষেত্রে অগ্নিতে ক্ষীর আহূতি দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
যজ্ঞ সমাপনান্তে সাধ্যমতো ব্রাহ্মণভোজন শাস্ত্রীয় বিধান।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Lord Shiva, Som Pradosh