মরুভূমির মাঝে বিশ্বনেতাদের নিয়ে হয়েছিল এক এলাহি পার্টি ! সেটাই ছিল ২৫০০ বছরের পুরনো এক সাম্রাজ্যের সর্বনাশের কারণ

Last Updated:

Most Biggest and Expensive Party: আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর আগেকার কথা। ইরানি মরুভূমির ঠিক মধ্যভাগে আধুনিক ইতিহাসের রাজা এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের সবথেকে বড় সভা হয়েছিল।

মরুভূমির মাঝে বিশ্বনেতাদের নিয়ে হয়েছিল এক এলাহি পার্টি ! সেটাই ছিল ২৫০০ বছরের পুরনো এক সাম্রাজ্যের সর্বনাশের কারণ (Image from Stylecaster)
মরুভূমির মাঝে বিশ্বনেতাদের নিয়ে হয়েছিল এক এলাহি পার্টি ! সেটাই ছিল ২৫০০ বছরের পুরনো এক সাম্রাজ্যের সর্বনাশের কারণ (Image from Stylecaster)
তেহরান: আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর আগেকার কথা। ইরানি মরুভূমির ঠিক মধ্যভাগে আধুনিক ইতিহাসের রাজা এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের সবথেকে বড় সভা হয়েছিল। তবে সভা না বলে সেটাকে এক জাঁকজমকপূর্ণ পার্টি বলাই ভাল! মূলত পারস্য সাম্রাজ্যের পত্তনের ২৫০০-তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্যই এই পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। আর আমন্ত্রিত অতিথিদের সন্তুষ্ট করার জন্য পার্টির আয়োজক ইরানের শাহ মহম্মদ রেজা পালাভি খরচ করেছিলেন লক্ষ লক্ষ ডলার। মরুভূমির মাঝে কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছিল এক অপরূপ মরূদ্যান। সেখানেই ছিল এলাহি আয়োজন। তালিকায় রাখা হয়েছিল অতিথিদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু। এমনকী ছুটেছিল শ্যাম্পেনের ফোয়ারাও। বলাই বাহুল্য যে, তিন দিনের এই উদযাপনের জন্য শাহ কোনও রকম কার্পণ্য করেননি। কিন্তু এই পার্টিই যেন নিঃস্ব করে দিয়েছিল তাঁকে। শেষ হয়ে গিয়েছিল কয়েক হাজার বছরের পুরনো এক সাম্রাজ্য!
সেই সময় ২৫০০ বছরের পুরনো সাম্রাজ্যের শাহেনশাহ ছিলেন শাহ মহম্মদ রেজা পালাভি। ১৯৬৩ সাল নাগাদ ইরানের আধুনিকীকরণের জন্য শ্বেত বিপ্লব চালু করেন তিনি। তবে এর আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক কঠোর বাস্তব। শাহের সংস্কার মেনে নিতে পারেননি রক্ষণশীল মুসলিম ধর্মগুরুরা। তবে শাহ এটাও নিশ্চিত করেছিলেন যে, তাঁদের কণ্ঠস্বর যেন প্রকাশ্যে না আসে। ১৯৭১ সালের মধ্যে ইরানে রাজনৈতিক বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এমনকী বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি বন্দি ছিলেন ইরানে। এখানেই শেষ নয়, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫১ শতাংশ দারিদ্রসীমার নীচে ছিল। শহরে কোনও রকম পরিকাঠামোর ছিল না। এমনকী জল, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলির প্রাথমিক চাহিদার ক্ষেত্রেও ব্যাপক ঘাটতি ছিল।
advertisement
advertisement
Photo Courtesy: Reddit Photo Courtesy: Reddit
কিন্তু এসব দিকে গুরুত্ব না দিয়ে শাহ নিজের ধারণাগুলি নিয়েই বেশ ব্যস্ত ছিলেন। আবার ১৯৭১ সালে ছিল সাইরাসের দ্বারা প্রথম পারস্য সাম্রাজ্যের পত্তনের ২৫০০ বর্ষপূর্তি। আর সেটাকেই সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন শাহ। গোটা বিশ্বের সামনে আধুনিক ইরানকে তুলে ধরতে চান তিনি। এমনকী, নিজেকে নতুন সাইরাস হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। ফলে ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই তিন দিন ব্যাপী উদযাপনের ঘোষণা করেছিলেন শাহ।
advertisement
আর এর জন্য মরুভূমির ঠিক মাঝেই একটি নতুন মরূদ্যান তৈরি করান তিনি। মরূদ্যানকে সাজিয়ে তুলতে ইউরোপ থেকে আনানো হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার গাছ এবং ফুল। সুগন্ধি গোলাপের এক বিশেষ বাগানও ছিল। যেখানে গোটা ইরান তীব্র খরার সঙ্গে লড়াই করছিল, সেখানে এই মরূদ্যান তৈরির জন্য গ্যালন গ্যালন জল ব্যবহার করা হয়েছিল। অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য অনুষ্ঠানস্থলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী দূরত্বে বিছে এবং সাপ মেরে ফেলতে ব্যবহার করা হয়েছিল কীটনাশক। এমনকী ইউরোপ থেকে আনানো হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার গান গাওয়া পাখি। তবে ইরানের মরুভূমিতে তীব্র গরমে বেশির ভাগ পাখিই মারা গিয়েছিল। সব মিলিয়ে অতিথি সৎকারের জন্য ছিল এলাহি আয়োজন।
advertisement
খানাপিনার আয়োজনও ছিল এলাহি। এর জন্য শাহ বেছে নিয়েছিলেন বিশ্বের সেরা প্যারিসের ম্যাক্সিমস রেস্তোরাঁকে। ইরানের এই পার্টির জন্য প্রায় দিন পনেরো বন্ধ ছিল ওই রেস্তোরাঁ। খাবারদাবার, উপকরণ এবং রান্নাবান্নার যন্ত্রপাতি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে দেওয়ার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছিলেন শাহ। পারস্য সাম্রাজ্যের বর্ষপূর্তির ওই জাঁকজমকপূর্ণ পার্টি শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১২ অক্টোবর থেকে। তার পরের ২ দিন ধরে চলেছিল এই অনুষ্ঠান।
advertisement
এই পার্টির মাধ্যমে শাহের ইচ্ছাপূরণ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যেখানে ইরানের জনসাধারণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, সেটাই করা হয়নি। ওই পার্টিতে গুটিকয়েক ইরানের নাগরিকের দেখা মিলেছিল। এমনকী নিজের মন্ত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানাননি শাহ। শুধুমাত্র যাঁরা পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁরাই যোগ দিয়েছিলেন পার্টিতে। এই সমস্ত কিছুর মূল্য অবশ্য চোকাতে হয়েছিল শাহকে। এমনকী এর জন্য নিজের রাজমুকুটও খুইয়েছিলেন তিনি। আসলে সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একজোট হয়েছিলেন বিরোধীরা। ফলে শাহ নিজের ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেন।
advertisement
অবশ্য এর জন্য ১৯৭৪ সালে নিজের ভুলও স্বীকার করেছেন শাহ। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খোমেইনি-পন্থীরা সরকারকে উৎখাত করে এবং প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসলামিক রিপাবলিকের। যার মূল নেতা ছিলেন খোমেইনি। এরপর ওই বছরেই শাহকে মিশরে নির্বাসনে পাঠানো হয়। আর তার ঠিক পরের বছরেই মৃত্যু হয় তাঁর। এভাবেই শেষ হয়ে যায় কয়েক হাজারের বছরের পুরনো ইরানি সাম্রাজ্য।
বাংলা খবর/ খবর/পাঁচমিশালি/
মরুভূমির মাঝে বিশ্বনেতাদের নিয়ে হয়েছিল এক এলাহি পার্টি ! সেটাই ছিল ২৫০০ বছরের পুরনো এক সাম্রাজ্যের সর্বনাশের কারণ
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement