আগামী দু'বছরের মধ্যেই সিকিম পৌঁছনো যাবে ট্রেনে চেপে। পাহাড় কেটে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বানানো হচ্ছে টানেল। তার মধ্যে দিয়েই ট্রেন ছুটবে রংপো অবধি। ২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়ির সঙ্গে সিকিমকে রেলপথে জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। যদিও নানা বাধা বিপত্তি কাটিয়ে ১১ বছর পরে শুরু হয় কাজ।
কয়েক মাস কাজ হওয়ার পরেই করোনার জন্যে থমকে যায় কাজের গতি। আবারও দ্রুত গতিতে সেই কাজ শুরু হয়েছে। সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ বানানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেবক থেকে রংপো অবধি এই রেল পথের দুরত্ব হচ্ছে ৪৪.৯৮ কিমি। পশ্চিমবঙ্গে থাকছে ৪১.৫৭ কিমি। সিকিমে থাকছে ৩.৪১ কিমি। মোট ১৪টি টানেল, ১৯টি ব্রিজ থাকছে এই যাত্রা পথে। প্রায় ৪৫ কিমি যাত্রাপথে থাকছে ৫টি রেল স্টেশন। স্টেশন বানানো হচ্ছে সেবক, রেয়াং, তিস্তা বাজার, মেল্লি ও রংপোতে।
আশ্চর্যের বিষয় হল এই ৪৫ কিমি রেলপথের মধ্যে প্রায় ৩৯ কিমি-ই হল সুড়ঙ্গ। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে খবর, প্রকল্পের ৮৫% হচ্ছে সুড়ঙ্গ। ইতিমধ্যেই সেই সুড়ঙ্গ বানানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। যে পদ্ধতিতে কাজ হচ্ছে তা হল ড্রিল অ্যান্ড কংক্রিট প্রসেস। প্রথমে পাহাড় ড্রিল করা হচ্ছে। তার পর সেখানে ব্লাস্ট করে টানেল বানানো হচ্ছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ার অনুপম চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "সুইডেন থেকে আনা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে টানেল কাটার পরে আমরা কংক্রিট মিস্ট করছি। যা টানেলের ভেতরের দেওয়ালে কংক্রিটের একটা আস্তরণ বানিয়ে দিচ্ছে।"
সবচেয়ে লম্বা যে টানেল বানানো হচ্ছে তা হল ৫২৭০ মিটার। সবচেয়ে ছোট যে টানেল বানানো হচ্ছে সেটা ৫৩৮ মিটার। বেশ কতকগুলি জায়গায় পাহাড়ের বাঁকে ঝোড়া বা নদীর ওপরে বানানো হচ্ছে ১৯টি রেল সেতু। সেগুলোর কাজও শুরু হচ্ছে ধাপে ধাপে। গোটা প্রকল্প এলাকা একাধিক বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মোট ৫টি ডিভিশন আছে। মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি, কার্শিয়াং, দার্জিলিং ও কালিম্পং বনবিভাগ ও পূর্ব সিকিম ফরেস্ট ডিভিশন। টানেলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন যাবে। তাই বন্যপ্রাণের কোনও ক্ষতি হবে না।
জোর কদমে চলা এই প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে চায় রেল। কারণ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কপথ জাতীয় সড়ক ১০, যদিও ভৌগোলিক কারণে এই রাস্তা বছরের সব সময় যথাযথ থাকে না। কখনও ধস নেমে। কখনও আবার দৃশ্যমান্যতা কমে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে। যদিও সিকিমে চিনা সীমান্তে সেনা ও রসদ পাঠানোর জন্যে এই রাস্তা লাইফলাইন বলা চলে। তাই দ্রুত রেল চলাচল শুরু হয়ে গেলে সুবিধা হবে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে। এর পাশাপাশি নতুন দিক খুলে যাবে পর্যটনের। তাই কেন্দ্র চাইছে এই প্রকল্পের কাজ জলদি শেষ করতে।
ABIR GHOSAL
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sebak-Rongpo Railway