Blood Sucking Fly in North Bengal: দার্জিলিঙে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’! অন্ধ করে দিতে পারে রহস্যময় এই রক্তশোষক মাছি, কী উঠে এল গবেষণায়?
- Published by:Satabdi Adhikary
- news18 bangla
Last Updated:
এক কৃমির বাহক হল ব্ল্যাক ফ্লাই। ব্ল্যাক ফ্লাই মানুষকে কামড়ালে ওদের শরীর থেকে এই কৃমি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। প্রথমে গুটি বাঁধে আমাদের ত্বকের নীচে। তারপর কৃমি বড় হলে তা রক্ত মারফত বয়ে পৌঁছে যায় চোখে। যার সর্বশেষ পরিণতি অন্ধত্ব।
কলকাতা: দার্জিলিং হোক কী কালিম্পং, পর্যটন মানচিত্রে এই দুই জায়গাই বাঙালির প্রিয়৷ তেমন ভাবে দেখতে গেলে গোটা উত্তরবঙ্গের জন্যেই বিষয়টা খাটে৷ পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে তো বটেই ভারতীয় প্রেক্ষাপটেও উত্তরবঙ্গের গুরুত্ব অপরিসীম৷ আর্থ সামাজিক দিক থেকে তো বটেই। সারা বছর ধরেই এখানে মানুষ বেড়াতে গিয়ে থাকেন। কিন্তু, ধরুন এমন জায়গায় আনন্দ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই কামড় খেয়ে গেলেন রক্ত শোষক মাছির! অপ্রিয় শোনালেও কথাটা হতেই পারে সত্যি৷ কারণ, আমাদের অনেকেই হয়ত জানি না, উত্তরবঙ্গের বহু পাহাড়ি নদীই আঁতুড়ঘর এক বিশেষ ধরনের ‘ব্লাড সাকিং ফ্লাই’-এর৷ স্থানীয় ভাষায় যা পিপসা বা পটু মাছি নামে পরিচিত৷ সেই পিপসা বা পটু মাছি নিয়েই সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার, ZSI-এর গবেষকেরা৷ তাঁদের কাজ প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণাপত্র ‘ভেক্টর বোর্ন অ্যান্ড জুনটিক ডিসিসেস’-এ৷
রিভার ব্লাইন্ডনেস। বাংলা করলে কী দাঁড়ায়? নদীর অন্ধত্ব? নামটা বেশ কাব্যিক মনে হলেও রোগটা কিন্তু নয়। দার্জিলিং, কালিম্পং এর মতো উত্তরবঙ্গের বহু জায়গারই পাহাড়ি নদী আঁতুড়ঘর এমন এক মাছির, যে মাছি হয়ে উঠতে পারে মানুষের অন্ধত্বের কারণ। সেই রক্তশোষক মাছির নাম ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’। স্থানীয় পরিভাষায় পিপসা বা পটু মাছি। আর সেই মাছি নিয়েই এবার উল্লেখযোগ্য কাজ করলেন জুলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার, ডিপ্টেরা বিভাগের গবেষকেরা।
advertisement
advertisement
সংক্রমণের কারণে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ যে রোগে অন্ধ হন, সেটা হল ট্র্যাকোমা। আর আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এই ট্র্যাকোমার ঠিক পরেই রয়েছে অঙ্কোসেরসিরিয়াসিস বা রিভার ব্লাইন্ডনেসের নাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO এর তালিকা অনুযায়ী, ট্রপিক্যাল দেশগুলিতে সবচেয়ে অবহেলিত রোগের মধ্যে একটি হল এই রিভার ব্লাইন্ডনেস। এক বিশেষ ধরনের কৃমি, অঙ্কোসেরসা ভলভিউলাসের সংক্রমণের ফলে এই রিভার ব্লাইন্ডনেস বা অঙ্কোসেরসিরিয়াসিস হয়।
advertisement

ব্ল্যাক ফ্লাই৷ পিপসা বা পটু মাছি
এই কৃমিরই বাহক হল ব্ল্যাক ফ্লাই। ব্ল্যাক ফ্লাই মানুষকে কামড়ালে ওদের শরীর থেকে এই কৃমি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। প্রথমে গুটি বাঁধে আমাদের ত্বকের নীচে। তারপর কৃমি বড় হলে তা রক্ত মারফত বয়ে পৌঁছে যায় চোখে। যার সর্বশেষ পরিণতি অন্ধত্ব। মানুষকে এই রোগের হাত থেকে বাঁচানোর প্রথম উপায়ই হল এই রোগ সৃষ্টিকারী কৃমির বাহক বা ভেক্টর ব্ল্যাক ফ্লাইকে ভাল করে চেনা এবং তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা। তাই এই রোগের আরও উন্নত চিকিৎসা হওয়ার জন্য এই রোগের বাহককে ভাল ভাবে চিনতে পারা প্রয়োজন।
advertisement
এবিষয়ে জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিমুলিডি গোত্রের এই ব্ল্যাক ফ্লাই দেখতে অত্যন্ত ছোট। খালি চোখে তা মানুষ প্রায় খেয়ালই করেন না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তা রক্ত শুষে নিয়ে চলে যায়। এই গোত্রের বহু প্রজাতির মাছিকেই বাইরে থেকে প্রায় একই রকম দেখতে। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের পরিভাষায় দুটো ভিন্ন স্পিসিস বা প্রজাতির সিমুলিডি মাছিকে তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে আলাদা করা বেশ কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। অনেক সময় প্রজাতির নির্ভুল শনাক্তকরণ সম্ভবও হয় না।” সেই কারণে ডিপ্টেরা বিভাগ এর গবেষকেরা এই সিমুলিডি মাছি চেনার উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছেন সেই সব মাছির ডিএনএ কে। আর মাছি চিনতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম ডিএনএ বারকোডিং।
advertisement
জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিপ্টেরা বিভাগের অফিসার ইন চার্জ তথা বিজ্ঞানী ড. অতনু নস্কর জানাচ্ছেন, তাঁরা সেন্ট্রাল হিমালয়ান রিজিয়নের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার ৮টি জায়গায় তাঁদের এই গবেষণা চালিয়েছেন। সেই ৮টি জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ব্ল্যাক ফ্লাইয়ের নমুনা। তারপর সেই সমস্ত নমুনার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে প্রাথমিক ভাবে তাদের আলাদা করে নিয়ে, তারপর স্পিসিস বা প্রজাতি চেনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতির।
advertisement
ব্ল্যাক ফ্লাই নিয়ে গবেষণার কাজে যুক্ত গবেষকদের অন্যতম, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্ক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রথমে ব্ল্যাক ফ্লাইয়ের নমুনার পা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে, তারপর সেই ডিএনএর বারকোডিং করা হয়েছে”। অর্ক জানিয়েছেন, মাছির স্পিসিস জানার জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন মাইটোকন্ড্রিয়াল সাইটোক্রোম সি অক্সিডেস সাব ইউনিট C ওয়ান জিন সিকোয়েন্স। এই প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই আলাদা করা গেছে ব্ল্যাক ফ্লাই এর ৪টে স্পিসিস, সিমুলিয়াম ডেন্টেটাম, সিমুলিয়াম ডিজিটেটাম, সিমুলিয়াম প্রেলারজাম, সিমুলিয়াম সেনাইল।
advertisement
জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “দার্জিলিং হোক কী কালিম্পং, পর্যটন মানচিত্রে এই দুই জায়গাই বাঙালির প্রিয়। এমন জায়গায় আনন্দ করতে গিয়ে এমন রক্ত শোষক মাছির কামড় অজান্তেই খেয়ে ফেলতে পারেন কেউ। যদিও স্থানীয়রাই এই মাছির জন্য সমস্যায় পড়েন বেশি। সেক্ষেত্রে অন্ধত্বের আশঙ্কা তো থেকেই যায়।” যদিও কেন্দ্রীয় এই গবেষণা সংস্থার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক অতীতে এই মাছি থেকে মানুষের মধ্যে কোনও রোগ ছড়ানোর ঘটনা স্থানীয় ভাবেও ঘটেনি৷ এবিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন গবেষকেরা। তবে যেহেতু এই মাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগের অন্যতম বাহক, তাই আশঙ্কা তো থাকেই। তাই এই রোগের আরও উন্নত চিকিৎসা হওয়ার জন্য এই রোগের বাহককে ভাল ভাবে চিনতে পারা প্রয়োজন। সেই নির্ভুল চেনারই উপযুক্ত পদ্ধতি এই ডিএনএ বারকোডিং।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
West Bengal
First Published :
April 08, 2025 10:27 AM IST