North 24 Parganas News: প্রথম বিধবা বিবাহ করেছিলেন, তবুও বিস্মৃতির অতলে শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন
- Published by:kaustav bhowmick
- news18 bangla
- Reported by:RUDRA NARAYAN ROY
Last Updated:
প্রথম বিধবা বিবাহ করেছিলেন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন, এই সমাজ সংস্কারক শিক্ষককে মনে রাখেনি কেউ
উত্তর ২৪ পরগনা: ১৮৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর। সময় রাতের দ্বিতীয় প্রহর। কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটের রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে তখন নিমন্ত্রিতদের থিক থিকে ভিড়। প্রায় ৮০০ জনকে কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। রাস্তায় ব্রিটিশ পুলিশের পাহারা চলছে। এমন সময় পালকি চেপে বিয়ে করতে এলেন মুর্শিদাবাদের জজ সাহেব পন্ডিত শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। পাত্রী কালীমতি বর্ধমানের পলাশডাঙার প্রয়াত ব্রক্ষানন্দ মুখ্যোপাধ্যায়ের দশ বছরের বিধবা মেয়ে।
কালীমতির প্রথম বিয়ে হয়েছিল চার বছর বয়সে। আর বিধবা হন ছয় বছর বয়সে। কালীপ্রসন্ন সিংহ, রমাপ্রসাদ রায়, নীলকমল মুখ্যোপাধ্যায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামগোপাল ঘোষ সহ আরও অনেকের উপস্থিতিতে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিদ্যাসাগর কনের মা লক্ষ্মীদেবীকে দিয়ে কন্যা সম্প্রদান করালেন। সেই সঙ্গে এই দিনটি ঘিরে তৈরি হল এক ইতিহাস। বিধবা বিবাহ আইন পাশের পর বিদ্যাসাগর বিস্তর খরচ করে প্রথম বিধবা বিবাহের জমকালো এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। ভারতের ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা আছে সেই দিনটি। সেই বিধবা বিবাহ নিয়ে পরবর্তীতে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে।
advertisement
advertisement
পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার খাঁটুরার বাসিন্দা শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন প্রথম বিধবা বিবাহ করে চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন সমাজের। এমন কাজের পর এই সমাজ সংস্কারককে বিশেষ মর্যাদা দেয় ব্রিটিশ সরকার। বঁনগার ডেপুটি ম্যাজিস্টেট পদে উন্নিত হন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। পরবর্তীতে ১৮৭০ সালে গোবরডাঙা পুরসভা স্থাপিত হলে প্রথম পুরপিতা হন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। বিধবা বিবাহ করার পর শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল বলে জানালেন গোবরডাঙার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ পবিত্র মুখ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সমাজ সংস্কারক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নকে শুধুমাত্র বিধবা বিবাহ করার জন্য গোবরডাঙায় তাঁর পৈত্রিক ভিটেতে আসতে নিরুতসাহিত করেন তৎকালীন ব্রাক্ষণ সমাজের মাথারা।
advertisement
স্ত্রী কালীমতি দেবীর মৃত্যুর পর সমাজ ব্যবস্থার চাপে প্রায়শ্চিত্ব করে শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নকে আসতে হয় গোবরডাঙায় তাঁর পৈত্রিক ভিটেতে। প্রথম পুরপিতা হয়ে তিনি গোবরডাঙার উন্নয়নে এনেছিলেন আমূল পরিবর্তন। গোবরডাঙা পুরসভা স্থাপন, রেললাইন স্থাপন সহ পুর এলাকায় রাস্তাঘাট সংস্কার করে গোবরডাঙার ভোল পাল্টে দেন তিনি। শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ছিলেন গোবরডাঙা পুরসভার প্রথম নির্বাচিত পুরপ্রধান। ইতিহাসবিদ পবিত্র মুখ্যোপাধ্যায় আক্ষেপ করে জানালেন গোবরডাঙার গর্ব। অথচ শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের স্মৃতি সেভাবে দেখা যায় না। বলা ভাল সংরক্ষণ করা হয়নি। এমন একজন সমাজ সংস্কারক তথা শিক্ষাবিদের বসত ভিটে আজ নিশ্চিহ্ন। তবে ১৮৬৮ সালে তাঁর মায়ের নামে গোবরডাঙার কঙ্কনা বাওড়ের ধারে গড়ে তোলা জোড়া শিব মন্দিরের অস্তিত্বটুকু বর্তমান রয়েছে।শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন প্রথম নির্বাচিত পুরপ্রধান, সেটুকু স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরসভার পক্ষ থেকে খাঁটুরায় তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন সরনী। পুরসভায় খোদাই করা রয়েছে শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ভবন নামটি। গোবরডাঙার ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই মানুষটিকে স্মরণ করতে বা নতুন প্রজন্মের কাছে শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের কথা পৌঁছে দিতে প্রশাসনের ভূমিকা তেমন একটা উজ্জ্বল নয়। শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন আজ অবহেলায় থাকলেও তাঁর অবদানকে ভুলতে পারেননি গোবরডাঙার শিক্ষিত সমাজ।
advertisement
রুদ্রনারায়ণ রায়
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
September 05, 2023 6:01 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/উত্তর ২৪ পরগণা/
North 24 Parganas News: প্রথম বিধবা বিবাহ করেছিলেন, তবুও বিস্মৃতির অতলে শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন