North 24 Parganas: সংকটের মুখে চারঘাটের মাদুর শিল্প
- Published by:Soumabrata Ghosh
Last Updated:
সংকটের মুখে চারঘাটের মাদুর শিল্প, পেশা ছেড়ে বিকল্প পথের সন্ধানে অনেকেই
রুদ্র নারায়ন রায়, উত্তর ২৪ পরগনা: বাড়িতে অতিথি এলে ঘরে দাওয়ায় মাদুর (Mat) পেতে বসিয়ে সেবা-যত্নের রেওয়াজ দেখা যেত গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে। অতিথিকে মাদুরে (Mat) বসিয়ে জল বাতাসা দিয়ে আপ্যায়নের রীতি দীর্ঘদিনের। আজও গ্রামবাংলায় সেই রীতি দেখা গেলেও, হাতে বোনা মাদুরের (Mat) জায়গা নিয়েছে প্লাষ্টিকের মাদুর। আর এই প্লাষ্টিকের মাদুরের দাপটে গ্রামবাংলার প্রাচীন এই কুটির শিল্প (Industry) আজ প্রায় অবলুপ্তির পথে। বর্তমানে বাজারে হাতে বোনা মাদুরের চাহিদা ক্রমশ কমে যাওয়ায় মাদুর শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়েছে, শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাধিক পরিবার। মাদুর শিল্পের করুন পরিস্থিতির বর্তমান ছবিটা দেখা গেল উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) স্বরুপনগর থানার চারঘাট এলাকায়।
এই এলাকার চারঘাট বাজারের একসময় হাতে বোনা মাদুরের জন্যই সুনাম ছিল সারা রাজ্যে। বেশ কয়েক বছর আগেও চারঘাট মাদুর বাজার গমগম করত মাদুর শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনায়। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও ২৫-৩০ জন ব্যবসায়ী এই বাজারে মাদুরের ব্যবসা করলেও, আজ মাদুর শিল্পের দৈন্যদশায় চারঘাট মাদুর বাজারে ব্যবসায়ীর সংখ্যাটা মাত্র এক জনে এসে দাঁড়িয়েছে। মাদুর শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আদৌ পরবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন এই বাজারের একমাত্র মাদুর ব্যবসায়ী সুভাষ সরকার। সুভাষবাবু জানালেন, 'এক সময় মছলন্দপুর অঞ্চলে যমুনা নদীর ধারে চাষ হতো মাদুর কাঠীর। চারঘাট এলাকার কয়েক হাজার পরিবার মাদুর কাঠির চাষ এবং মাদুর বোনার সঙ্গে যুক্ত থাকত।'
advertisement
যদিও এখন সেইসব অতীত। বর্তমানে হাতে বোনা মাদুরের জায়গায় প্লাস্টিক মাদুর বাজার দখল করায় অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে এইসব এলাকার হাতে বোনা মাদুর শিল্প। আর যার কারণে বর্তমানে বাজারে হাতে বোনা মাদুরের চাহিদা কমায় মাদুর শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়েছে একাধিক পরিবার। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকায় শতকষ্টেও তিনি মাদুর ব্যবসা ছেড়ে বেরতে পারছেন না। আগে নিজে মাদুর বুনলেও এখন বাদুরিয়ার আড়বেড়িয়া, পুটিমারী, কেদোগোপালপুর থেকে মাদুর কিনে এনে কোনমতে মাদুরের ব্যবসাটা টিকিয়ে রেখেছেন। মাদুর কাঠীর চাষ কমেছে। কারিগররা বলছেন, আগে হাতে বোনা মাদুরের চাহিদা ছিল। তাই মাদুর বিক্রি করে লাভ হতো। বর্তমানে চাহিদা কমায় লাভ কমেছে। হাতে বোনা মাদুর শিল্পে এখন দেখা দিয়েছে সঙ্কট। এলাকায় আর মাদুর তৈরি না হওয়ায় বেশি দাম দিয়ে আনতে হচ্ছে হাতে বোনা মাদুর। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা জোড়া হিসেবে এই মাদুর আনা হচ্ছে। যাতায়াতের খরচ মিলিয়ে লাভ তেমন থাকছে না বললেই চলে।
advertisement
advertisement
হাতে-বোনা এই মাদুর অনেকটাই ইকো ফ্রেন্ডলি। তাছাড়া, এই মাদুর অনেক বেশি টেঁকসই ও ঠান্ডা। দামে অনেকটাই সস্তা হাওয়ায় বাজারগুলিতে হাতে বোনা মাদুরে তুলনায় প্লাস্টিক মাদুরেরই সেল বেশি। তাই ক্রেতারা কম দামের প্লাস্টিক মাদুরের দিকেই ঝুঁকছে। তবে এই ধরনের প্লাস্টিক মাদুর থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে অনেকটাই। ফলে গভীর সঙ্কটে চলে যাচ্ছে গ্রামবাংলার এই প্রাচীন কুটির শিল্প। মাদুর শিল্পের সঙ্গে একসময় ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত থাকা মাদুর শিল্পী শঙ্কর দাস জানালেন, 'তাদের গ্রামে একসময় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই মাদুর বোনা হতো। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের রুটিরুজি ছিল মাদুর তৈরির উপর। বর্তমানে কম দামে বাজারে প্লাষ্টিক মাদুর চলে আসায় আর চাহিদা নেই মাদুর কাঠী দিয়ে তৈরি হাতে বোনা মাদুরের। ফলে নতুন প্রজন্ম তো বটেই পুরোনো অনেকেই বেছে নিয়েছেন বিকল্প পেশা।' চারঘাটের মাদুর শিল্পীদের একটাই আর্জি, বাংলার এই মাদুর শিল্পকে বাঁচাতে যদি সরকার কোন উদ্যোগ নেয়, তাহলে আবার অনেকেই এই পুরনো পেশায় ফিরে আসবে। আবারও স্বমহিমায় ফিরবে বাংলার হাতে বোনা মাদুর শিল্প।
view commentsLocation :
First Published :
January 25, 2022 1:43 PM IST