#নয়াদিল্লি: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ১১ হাজার ফুট উপরে জোজিলাপাস। এখানেপ্রতি বছর শীতের মরশুমে তাপমাত্রা এতটাই নিচে নেমে যায় যে ১৫/২০ ফুট বরফের স্তর জমে যায়। যার জেরে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ মাস সড়কপথে লে লাদাখ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।এমনকী ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নেয়। এবার সেই সমস্যা মিটবে। সেই সঙ্গে সাড়ে ৩ ঘন্টার পাহাড়ি পথ পার হওয়া যাবে (Zozi la Tunnel ) মাত্র ১৫ মিনিটে।
আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভৌগোলিক কারণে দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এবং চীন-সংলগ্ন এই এলাকায় দীর্ঘ ৬ মাস সেনা জওয়ানদের কাছে ট্যাঙ্ক, অস্ত্রশস্ত্র,খাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব হয়। এই সময় ভরসা শুধু আকাশ পথ। যার সুযোগ নেয় শত্রু দেশ ও সীমান্তের ওপারের জঙ্গিরা।
শ্রীনগর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বালতাল থেকে লাদাখ পর্যন্ত কৌশলগতভাবে সুড়ঙ্গ তৈরির মাধ্যমে জম্মু কাশ্মীর লাদাখের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ আরও নিবিড় করছে ভারত সরকার। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং চীনের সীমান্তবর্তী এলাকায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ দ্বিমুখী সুড়ঙ্গ প্রায় তৈরির কাজ চলছে। শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালে। দুর্ভেদ্য দুর্গম হিমালয়ের বুক চিরে সারাবছর জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে লাদাখের সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে 'জেড-মোড়' এবং 'জোজিলা সুড়ঙ্গ' ((Zozi la Tunnel) নামে দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। মঙ্গলবার সুড়ঙ্গ দুটি পরিদর্শন করলেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি।
তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি এই টানেল অতিক্রম করলেন।জোজিলা টানেল (Zozi la Tunnel) নির্মাণকারী সংস্থার কাছে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির আর্জি, "এই টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হোক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই।" তাঁর যুক্তি, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ হলে রাজনৈতিক সুবিধা পাবে তার দল বিজেপি।
যদিও তা একেবারেই অসম্ভব বলে মনে করছেন নির্মাণকারী সংস্থা আধিকারিকরা। বিপুল টাকা ব্যয়ে এই সুড়ঙ্গ দুটি নির্মাণ করছে ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় কৌশলগত কারণে এই দুটি সুড়ঙ্গ নির্মাণের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ৬.৫ কিলোমিটার জেড মোড়এবং ১৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জোজিলা সুড়ঙ্গ দু'টি চালু হলে ভারতীয় সেনার যাতায়াতে অনেক সুবিধা হবে।
আরও পড়ুন-মোদির হাত ধরে দেশে ফিরেছে হাজার বছরের পুরনো ভারতীয় শিল্পসামগ্রী, কী আছে সেই তালিকায়!
তাছাড়াও বিশেষ সুবিধা হবে কাশ্মীর ও লাদাখের সাধারণ মানুষ, ভূ-স্বর্গে বেড়াতে আসা পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই সুরঙ্গ দুটির তৈরীর কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।জেড মোড় সুড়ঙ্গ তৈরীর জন্য খরচ হবে ২৩০০ কোটি টাকা। জোজিলা সুরঙ্গ তৈরির খরচ ৪৬০০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রীনগর থেকে লে লাদাখ সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে অতি অল্প সময়ে। তাও আবার বছরের সব দিন। গগনগীত এবং সোনমার্গের মধ্যে যোগাযোগকারী জেড-মোড় সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে গত বছর। ২০২৬ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। দ্বিমুখী এই সুড়ঙ্গের সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে সংযোগকারী ৫ কিলোমিটার সড়ক। জরুরি পরিস্থিতির জন্য সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বাইরে আসার বেশকিছু পথ তৈরি করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, মূল ১৪.১৫ কিলোমিটার জোজিলা সুড়ঙ্গে সংযোগকারী ১৮ কিলোমিটার সড়ক পথ তৈরি করা হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ নির্মাণে বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই সুড়ঙ্গের ভেতরে অতিরিক্ত ছোট দুটি সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছে যার একটি দু'কিলোমিটার এবং অপরটি ৫০০ মিটার।সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সুড়ঙ্গদু'টির নির্মাতা সংস্থা মেঘা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের কর্তা প্রশান্ত কুমার।
দু'টি সুড়ঙ্গ পথ এবং সংযোগকারী রাস্তা তৈরির কাজ দেখভাল করছে এনএইচ আইডিসিএল, ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন।জেড-মোড় সুড়ঙ্গ তৈরি করছে 'আপকো ইনফ্রা' এবং জোজিলা সুড়ঙ্গ তৈরি করছে এমইআইএল-নামক দুটি সংস্থা। এই দুটি প্রকল্প নির্মাণে ৬০-৭০ শতাংশ স্থানীয় কর্মীদের কাজে লাগানো হয়েছে।
-RAJIB CHAKRABORTY
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।