দীর্ঘদিনের এই কৃষক আন্দোলনে সফল হলে আদতে কী কী হারাবেন চাষিরা, পাবেনই বা কী?

Last Updated:

কৃষি আইন ফেরানোর দাবিতে চলা বিক্ষোভে চাষিদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা প্রতিফলিত হচ্ছে না। এই সুযোগে বিরোধীরা রাজনীতি শুরু করেছে। কিন্তু চাষিরা কী পাচ্ছেন ? আর হারাবেনই কী ?

#নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে এখন গুরুতর চিন্তার বিষয় কৃষকদের আন্দোলন। দিল্লিতে পাঞ্জাব-হরিয়ানার অগণিত চাষিদের এই প্রতিবাদ-আন্দোলন সভাকে ঘিরে দেশের নানা মহলে জল্পনাও ক্রমবর্ধমান। দেশজুড়ে বনধও ডাকা হয়েছে। সোনিয়া গান্ধি (Sonia Gandhi) থেকে শুরু করে DMK নেতা এম. কে স্তালিন (M.K. Stalin), NCP নেতা শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar) সকলে বনধকে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু এর মাঝে যেন একাধিক রাজনৈতিক অভিসন্ধি দানা বাঁধছে । আদতে চাষিরা কতটা উপকৃত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের কথায়, কৃষি আইন ফেরানোর দাবিতে চলা বিক্ষোভে চাষিদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা প্রতিফলিত হচ্ছে না। এই সুযোগে বিরোধীরা রাজনীতি শুরু করেছে। কিন্তু চাষিরা কী পাচ্ছেন ? আর হারাবেনই কী ?
একটু গভীরে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। কৃষি সংক্রান্ত আইনের মূল কথা হল (১) কৃষিপণ্যের কারবারে সরকারের ভূমিকা হবে অতি সামান্য, অন্যান্য পণ্যের মতোই তার বাজার প্রায় অবাধ করে দেওয়া হল (২) চুক্তিভিত্তিক চাষের দরজা পুরোপুরি খুলে দেওয়া হল (৩) কৃষকের পণ্য যে কোনও জায়গায় যে কাউকে বিক্রি করার দরজা খুলে গেল, নির্দিষ্ট এলাকার মান্ডিতে বিক্রির বাধ্যবাধকতা রইল না। সরকারের দাবি অনুযায়ী, এই নতুন কৃষি আইন চাষি ও বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা ফড়েদের সরাতে পারবে, নাকি বড় বড় সংস্থাগুলিকে এই ব্যবসায় ঢোকার জায়গা করে দেবে তা নিয়ে নানা মহলে তর্ক-বিতর্ক লেগেই আছে।
advertisement
তবে এই আইনের সুদূরপ্রসারী কিছু ফল রয়েছে। এগুলি হল কৃষক নিজের উৎপন্ন দ্রব্যের দাম নিজে ঠিক করতে পারবে। ফড়েদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। দেশের এক প্রান্তের কৃষক তার নিজের সুবিধে মত দেশের আরেক প্রান্তে বা যে কোনও জায়গায় নিজের কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবে। পণ্যের বিক্রয় মূল্যের দাম চাষ শুরু করার আগে থেকেই ঠিক হয়ে থাকবে। ফলে বাজারদরের ঝামেলা পোহাতে হবে না চাষিদের। বিরোধীদের দাবি, সাধারণ চাষি কীভাবে কোনও বড় কর্পোরেশনের সঙ্গে দরাদরি করে লাভদায়ক চুক্তি করতে পারবে? পরে যদি চাষিকে চাপ দিয়ে কম দামে বেচতে বাধ্য করে, তাহলে তার ফল কী হবে ?
advertisement
advertisement
চাষীদের হারানোর জায়গাও রয়েছে। মান্ডির বাইরে কোনও নিয়ন্ত্রণ, কোনও নিয়ম নেই। কোনও গ্রিভান্স রিড্রেসাল সিস্টেম নেই। তাই তাঁদের আন্দোলন আরও জোরালো হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, কোথাও যেন মাথার উপরে সুরক্ষার ছাতাটি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই সব মিলিয়ে গভীর সমস্যায় চাষিরা।
এর আগেও নানা আইনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে দেশের নানা ক্ষেত্রের মানুষজন। এই বনধ বা প্রতিবাদের সাক্ষী হয়েছেন দেশবাসী। কৃষি অর্থনীতি নিয়ে বিস্তর জল্পনা হয়েছে। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারিকরণ, ১৯৯৪ সালের ইলেকট্রনিক ট্রেডিং, FDI সহ একাধিক ইস্যুতে বিস্তর জলঘোা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে APMC ও এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট ও তা নিয়ে বিরোধিতার প্রসঙ্গ উঠে আসে। উল্লেখ করা যেতে ২০১৯ সালের কংগ্রেসের ইস্তেহারের সাত নম্বর অধ্যায়ের ২১ নম্বর পয়েন্টে। যেখানে এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী শরদ পাওয়ার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিতকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। যেখানে APMC অ্যাক্টে সংশোধনের প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল।
advertisement
গণতন্ত্রে বাক স্বাধীনতা রয়েছে। তাই প্রত্যেকের কথা বলার ও প্রতিবাদ করার বিষয়টিও যুক্তিসংগত। এ ক্ষেত্রে যদি কোনও কৃষি আইন নিয়ে দেশের কৃষকরা সরব হয়, তাহলে পারস্পরিক আলোচনা ও বোঝাপড়া, সর্বোপরি আইনে সংশোধন আনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু এই ধর্না, প্রতিবাদ যদি কোনও তুচ্ছ রাজনৈতিক স্বার্থের শিকার হয়, তাহলে ভাবার দরকার আছে। সরকারেরও বিবেচনা করার দরকার আছে। সেক্ষেত্রে সরকারের মাথা নামানোটাও একটি বড় বিষয়।
advertisement
কৃষি আইনের বিরোধিতার পাশাপাশি কৃষকদের জীবনের আর্থ-সামাজিক বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেখতে হবে এই ধরনের সংস্কার বা পরিবর্তনের মাধ্যমে যাতে চাষিদের মূল স্বার্থের বিষয়টি সুরক্ষিত থাকে। রাজনীতির প্যাঁচে চাপা না পড়ে যায়। যদি পুরো বিষয়টি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রচার বা সুবিধা নেওয়ার অভিযান হয়ে থেকে যায়, তাহলে কোথাও যেন গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনার জায়গা থেকে যাবে।
বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
দীর্ঘদিনের এই কৃষক আন্দোলনে সফল হলে আদতে কী কী হারাবেন চাষিরা, পাবেনই বা কী?
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement