হোম /খবর /দেশ /
নাগাল্যান্ড কাণ্ডের পর ফের বিতর্কে আফস্পা, কেন বার বার সমালোচিত এই আইন?

AFSPA: নাগাল্যান্ড কাণ্ডের পর ফের বিতর্কে আফস্পা, কেন বার বার সমালোচিত এই আইন?

উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেয় আফস্পা৷ Photo-AP

উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেয় আফস্পা৷ Photo-AP

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তর পূর্ব ভারতের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ১৯৫৮ সালে এই আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় (AFSPA)৷

  • Last Updated :
  • Share this:

#দিল্লি: নাগাল্যান্ডের মন জেলার ওটিং গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১৪ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যুর পরই ফের চর্চায় আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ারস অ্যাক্ট বা আফস্পা (AFSPA)৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের একটা অংশ উত্তর- পূর্ব ভারত থেকে এই বিশেষ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হয়েছে৷ উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে আফস্পা ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করা হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কারণ দেখিয়ে এখনও বহু জায়গাতেই এই আইন কার্যকর রয়েছে৷ আর বিতর্কিত এই আইনই উত্তর পূর্ব ভারতে সক্রিয় বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধের অন্যতম মূল কারণ৷ দু' পক্ষের শান্তি আলোচনাতেও বার বার আফস্পা (Armed Forces Special Powers Act, 1958) প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে৷

কেন আফস্পা আইন কার্যকর করা হয়?কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তর পূর্ব ভারতের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ১৯৫৮ সালে এই আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে আরও দাবি করা হয়েছে, সেই সময় উত্তর পূর্ব ভারতের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন অক্ষম হওয়ার কারণেই আফস্পা কার্যকর করা হয়৷

১৯৫৮ সালের মে মাসে প্রথমে অর্ডিন্যান্স হিসেবে এই আইন সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়৷ এর পর ১৯৫৮ সালে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর আফস্পা আইনের স্বীকৃতি পায়৷ প্রাথমিক ভাবে, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরার কথা মাথায় রেখে এই আইন কার্যকর করা হয়৷ যদিও এর পর এই আইনে একাধিক সংশোধন করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি রাজ্য এবং এলাকাকে আফস্পা-র পরিধি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷

আরও পড়ুন: নাগাল্যান্ড নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের রিপোর্ট তলব জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর মতে, ১৯৪২ সালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে ব্রিটিশদের জারি করা একটি অর্ডিন্যান্সের অনুকরণেই আফস্পা প্রণয়ন করা হয়৷ প্রাথমিক ভাবে নাগা জঙ্গিদের সশস্ত্র আন্দোলনকে দমন করতেই আফস্পা-কে কার্যকর করা হয়৷ ১৯৭২ সালে একটি সংশোধনী নিয়ে এসে আফস্পাকে উত্তর পূর্বের সাতটি রাজ্যেই কার্যকর করা হয়৷ একই ভাবে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে পঞ্জাবের নাশকতামূলক কার্যকলাপ দমন করতে আফস্পা-র মতো কয়েকটি আইন কার্যকর করা হয়৷ ১৯৯০ সালে কাশ্মীরের জন্যও একই ধরনের আইন নিয়ে আসে কেন্দ্র৷

সশস্ত্র বাহিনীকে কী ক্ষমতা দেয় আফস্পা?আফস্পা-র ব্যাখ্যা অনুযায়ী বায়ু সেনা থেকে শুরু করে স্থলভূমিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা যে কোনও সামরিক বাহিনীকেই সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আবার এই আইন অনুযায়ী, কোনও রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের রাজ্যপাল যদি মনে করেন যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার প্রয়োজন, তাহলেই সেই এলাকাকে উপদ্রুত হিসেবে চিহ্নিত করা হবে৷ আফস্পা-র তিন নম্বর সেকশনে বলা হয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর যে কোনও কমিশনড অফিসার, ওয়ারেন্ট অফিসার, নন- কমিশনড অফিসার অথবা সমপদমর্যাদার যে কোনও ব্যক্তি আইনভঙ্গকারী কারও বিরুদ্ধে অন্যান্য পন্থার সঙ্গে গুলি চালানো বা বলপ্রয়োগ করতে পারেন যাতে কারও প্রাণহানিও হতে পারে৷

একই ভাবে আফস্পা-র ক্ষমতাবলে সশস্ত্র বাহিনীর যে কোনও অফিসার ওয়ারেন্ট ছাড়াই এমন কাউকে গ্রেফতার পারেন, যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ধর্তব্যযোগ্য কোনও অপরাধ করে থাকেন অথবা করতে পারেন বলে সন্দেহ করা হয়৷

আরও পড়ুন: খনি থেকে ঘরে ফেলা হল না ১৬ গ্রামবাসীর, নাগাল্যান্ডের ঘটনায় 'সুবিচার' চাইতে আসরে তৃণমূল!

শুধু তাই নয়, যদি সূত্রের মারফত কোনও খবরের ভিত্তিতে প্রয়োজন মনে হয় যে কোনও বাড়ি বা আস্তানা থেকে সশস্ত্র আক্রমণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে সেই নির্মাণ বা আস্তানা ধ্বংস করার অধিকার সামরিক বাহিনীর অফিসারদের দেওয়া রয়েছে আফস্পা আইনে৷

পাশাপাশি, উপদ্রুত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী কোনও পদক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে যাতে কোনও আইনি পদক্ষেপ না করা হয়, আফস্পা আইনে সেই রক্ষাকবচও দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে৷ আইনে বলা রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠলে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষেই নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যাবে৷

কোথায় কোথায় লাগু রয়েছে আফস্পা? 

উত্তর পূর্ব ভারতে কোথায় কোথায় কার্যকর রয়েছে আফস্পা আইন?২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানায়, অসম এবং নাগাল্যান্ড জুড়েই আফস্পা আইন লাগু করা রয়েছে৷ তাছাড়াও রাজধানী ইম্ফলের পুরসভা এলাকা বাদে মণিপুরেও বলবৎ রয়েছে এই আইন৷এ বাদে অরুণাচল প্রদেশের তিনটি জেলা- তিরাপ, ছাংলাং এবং লোঙডিং-এও এই আইন কার্যকর করা রয়েছে৷ অসম এবং অরুণাচল সীমান্তের আটটি থানা এলাকাতেও বলবৎ রয়েছে আফস্পা৷

কেন্দ্রীয় সরকার আরও জানিয়েছিল, মণিপুর এবং অসমের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুই রাজ্যের সরকারই উপদ্রুত এলাকাগুলি চিহ্নিত করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল৷ কিন্তু রাজ্যের যে এলাকাগুলিকে উপদ্রুত হিসেবে চিহ্নিত করে আফস্পা বলবতের বিজ্ঞপ্তি জারি করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি নাগাল্যান্ড সরকার৷

কেন সমালোচিত আফস্পা?উত্তর পূর্বের অধিকাংশ রাজ্য বর্তমানে বিজেপি অথবা তাদের শরিক দলগুলির দ্বারা শাসিত৷ নাগরিক সমাজ এবং উত্তর পূর্ব ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, আফস্পা-র মতো অত্যাচারী আইন বলবৎ থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে৷

নাগাল্যান্ডে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পর মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাও সোমবার ট্যুইট করে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন৷ একই দাবি তুলেছে নাগাল্যান্ডে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা নাগা মাদার্স অ্যাসোসিয়েশন৷

আরও পড়ুন: 'গাড়ি থামানোর চেষ্টা হয়েছিল', ভুল বোঝাবুঝিতেই নাগাল্যান্ডে গুলি, বিবৃতিতে জানালেন অমিত শাহ...

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর অভিযোগ, আফস্পা-র দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অত্যাচার, ধর্ষণ, সাধারণ মানুষকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটায় সশস্ত্র বাহিনী৷ আইনি পদক্ষেপের ভয় না থাকাতেই এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলে ওই মানবাধিকার সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে৷

কী বলছে কেন্দ্রীয় সরকার?নাগাল্যান্ডের ওটিং-এর ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ট্যুইটারে দাবি করেছেন, ঘটনার তদন্তে রাজ্য সরকার উচ্চ পর্যায়ের সিট গঠন করেছে৷ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে নিহতদের পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও৷

জানা গিয়েছে, ওটিং-এর ঘটনায় অভিযুক্ত ভারতীয় সেনার একুশ নম্বর প্যারা স্পেশ্যাল ফোর্সের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে নাগাল্যান্ড পুলিশ৷

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অবশ্য ২০১৯ সালেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নাগাল্যান্ড থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের কোনও প্রস্তাবই নেই৷ পাশাপাশি, সংসদে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল, আফস্পা-র অপব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগকে ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, মানবাধিকার রক্ষা করার বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত ব্যবধানে সচেতন করা হয়৷

Kenneth Mohanty

Published by:Debamoy Ghosh
First published: