কলকাতা: প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিকের বাড়ির সামনে সভা করল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, ভোট ঘোষণা হতেই, বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সুবল ভৌমিক। বিধানসভা ভোটের প্রচারে নেমে, বনমালিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সভা করা হয়। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বনমালিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভগবান ঠাকুর চৌমুহনীর নিকট এক সভার আয়োজন করা হয়। এদিন এখানে উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভার সাংসদ সুস্মিতা দেব, বনমালিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সান্তনু সাহা-সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
সকাল থেকেই প্রচার সারছেন রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব। তিনি জানান, বিগত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচার চলছে। এবং বিভিন্ন জায়গায় যেমন সোনামুড়া, চণ্ডীপুর, বনমালীপুর, তেলিয়ামুড়া ইত্যাদি জায়গায় প্রচারে বাধা, অফিস ভাঙচুর, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও সভাস্থল বদলে দেওয়ার ঘটনার ঘোর নিন্দা জানান তিনি। গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে স্বৈরতন্ত্রের নিদর্শন পেশ করা হচ্ছে , তার উপর তিনি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, “নির্বাচনের প্রচারপর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং ত্রিপুরা প্রস্তুত হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের জনপ্রতিনিধিদের চয়ন করার জন্য। এমন অবস্থায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেভাবে বারবার ত্রিপুরাতে আসছেন তা দেখে ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তাদের বারংবার আসা যাওয়া এবং তারপর হেরে যাওয়ার কথা মনে পড়ে পড়ছে। ৯ বছর ধরে কেন্দ্রে ও বিগত ৫ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার পরও তাদের এরকম অবস্থার কারণ তারা উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত ও ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া। ত্রিপুরার সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চাইছে।’’
আরও পড়ুন- বাম-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় আসলে কে হবেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী?
তিনি আরও জানান, “কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনের অপব্যবহার করে, অন্যায় সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোকে যথাযথ প্রচারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন বিজেপির ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যে রাজ্যে বিজেপি ছাড়া অন্য সরকার আছে, সেখানে নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ি আর যেখানে তাদের নিজেদের সরকার সেখানে বিজেপি সরকারকে মদতপুষ্ট করার জন্য তাদের শিথিলতা সাধারণ মানুষের চোখ এড়িয়ে যায় না। বিজেপি, বাম-কংগ্রেস জোট এদের লড়াই মেকি ও নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট করেছিলো, তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাবার জন্য। বিজেপির দ্বারা এরা মদতপুষ্ট।’’
সিপিআইএম, কংগ্রেস বাংলায় বিজেপির জমি শক্ত করছে বলেও জানান তিনি। কুণাল ঘোষের মতে, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাবার জন্য তারা এই প্রচেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা তো কমেনি, উল্টে তা ক্রমবর্ধমান। ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী বদল করা হয়েছে, বিপ্লব দেব কাজ করেনি বলেই তার অপসারণ হয়েছে। আবার বিরোধী দল সিপিআইএম এর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তিনি প্রার্থী নন, কারণ তিনি বুঝেছেন এই বাম-কংগ্রেস জোট দিয়ে রাজনৈতিক লড়াই সম্ভব নয়। মানিক সরকার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। কিন্তু যেখানে নেতা নিজেই ময়দান থেকে সরে গেলেন সেই দলকে মানুষ ভোট দেবে কেন?’’
কুণাল ঘোষ আরও বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতায় কোনও সারবত্তা নেই, কেবল আছে অসহায় আর্তনাদ। বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যতই কুৎসা রটাক তারা স্বীকার করতে বাধ্য, বিভিন্ন সময় কেন্দ্র থেকে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থানে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিটি প্রকল্প বিশেষ উল্লেখ্য। ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে দেশের সেরা প্রকল্প হিসেবে দুয়ারে সরকারকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। গুজরাত এই প্রকল্প থেকে অনুপ্রাণীত হয়েছে। ওখানে নির্বাচনের আগে দুয়ারে রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। অথচ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বাংলাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করছে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প দেশের মধ্যে সেরা সম্মান পাওয়ার ৪ মাস পরে টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি নিজে উন্নয়ন করতে পারে না, অন্যকেও কাজ করতে দেয়না। ত্রিপুরার ছাত্রীদেরও কন্যাশ্রী, গৃহকর্ত্রীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য সাথীর সুযোগ সকল সাধারণ মানুষের পাওয়ার অধিকার আছে।বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর মূল্যবৃদ্ধি দিন দিন বাড়ছে। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম, জমির সার, জীবনদায়ী ঔষধ সবকিছুর দাম বেড়ে চলছে। বিজেপির কাজ শুধু ধর্মের নামে রাজনীতি করে, সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া। ধর্ম দিয়ে পেট ভরে না। চারদিকে ছাঁটাই, কর্মহীনতা। করোনার পরে শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সারা দেশে মাথাপিছু আয় কমেছে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম কারণ সরকার মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত রেখেছে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ স্থাপন করা হয়েছে, কর্মসংস্থান হয়েছে। তার মাঝে যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে তার সংশোধন ও হবে। তৃণমূল কংগ্রেস দায়িত্ব পালন করতে জানে। ১০,৩২৩ জন শিক্ষক ত্রিপুরায় যে অবস্থায় আছে তাদের অধিকার সুরক্ষিত করবে তৃণমূল কংগ্রেস। ৩ মাসের মধ্যে পুরভোটে ২৬% ভোট তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিলো মানুষের ভালোবাসায়। উপনির্বাচনের চিত্র ছিল আলাদা। ভয়ানক সন্ত্রাস, থানায় ঢুকে গুন্ডামি এসব সহ্য করার পরও তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করে যাচ্ছে। বিজেপি সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের মধ্যে, কলকাতা মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে এবং ত্রিপুরার ভূমিপুত্র দ্বারা চালিত সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান হবে। প্রতি মাসে অন্তত একদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের জন্য দরবার করবেন। তাঁদের কীভাবে আরও সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায়, এবং তাঁদের সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি সদা প্রস্তুত। বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল যারা ১৪ ফেব্রুয়ারি গরুকে আলিঙ্গন করতে বলে, সিপিআইএম এক ব্যর্থ দল যারা ইংরেজি শিক্ষা, কম্পিউটার আটকে সমাজকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছিল, এদের ভোট দেওয়া মানে মধ্যযুগীয় সন্ত্রাস ও বর্বরতাকে মদত দেওয়া। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা একই ভাষাভাষী মানুষের জায়গা, খাদ্যাভ্যাস এক, সংস্কৃতির এত মিল, সেখানে কেন দিল্লির ডবল ইঞ্জিন সরকারকে ভরসা করতে হবে? যমজ ভাইবোনের মতো একই সঙ্গে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলবে তাঁরা ৷’’
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Kunal Ghosh, Trinamool Congress, Tripura assembly elections 2023