India Bangladesh: বাংলাদেশের পালাবদলে কি ভারতকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিল চিন? কে কোথায় দাঁড়িয়ে!
- Published by:Suman Biswas
- news18 bangla
Last Updated:
India Bangladesh: ভারত-বাংলাদেশ-চিন ত্রিপাক্ষিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক ভাবে কে কোথায় দাঁড়িয়ে?
ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার ইস্তফা, ভারতের পক্ষে খুব একটা আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকাকালীন হাসিনা সরকার ভারতের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অনেকের মতে, বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পালাবদল ভারতের ক্ষেত্রে যতটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ততটাই চিনের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। বর্তমানে চিন চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। তবে তা সম্ভব হওয়ার আশা খুবই কম।
বাংলাদেশের এই বিপর্যয়ে ভারতকে চাপে রাখতে চিনের ক্ষেত্রে খুবই সুবিধাজনক উপায় হয়ে উঠেছে বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু যতটা মনে করা হচ্ছে আদতে ভারত বিদ্বেষী কার্যকলাপ এবং ভারতের উপর চাপ তৈরি করার কৌশল চিন ততটাও কার্যকরী করে তুলতে পারবে না বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রতিবাদ আর তার ফলে শেখ হাসিনার গদিচ্যুত হওয়ার ঘটনা ভারতের পক্ষে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল, এই কথা অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই। হাসিনার শাসনকালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সুসম্পর্ক তৈরী হয়েছিল, তার ফলে সে দেশের নাগরিকদের মনে ভারতের প্রতি ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরী হয়। কিন্তু সরকার বিরোধী এই ছাত্র আন্দোলন, যাতে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি এবং কট্টরপন্থী ইসলামিদের মদত ছিল, ধীরে ধীরে বাংলাদেশীদের মনে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব তৈরী করে তুলেছে।
advertisement
advertisement
ভারতের কাছে হাসিনা সরকারের শাসনকাল কূটনৈতিক দিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক, ভারতকে অনেকাংশে সুবিধাও দিয়েছিল। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক সোনালিতম অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের এই বন্ধুত্ব দুই দেশের মধ্যে একের পর এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির জন্ম দিয়েছে। হাসিনা সরকারের ১৫ বছর দীর্ঘ শাসনকালে, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের থেকে অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। যেই অসুবিধাগুলির জন্য ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্কে ফাটল ধরে, তাও অনেকাংশে প্রলেপ পায়।
advertisement
হাসিনা দায়িত্বে থাকাকালীন সীমান্ত সন্ত্রাস, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের রক্ষা এবং পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তি যা নিয়ে নয়াদিল্লি বরাবরই চিন্তিত থেকেছে সেই ক্ষেত্রগুলিতেও গুরুত্ব দেন। ভারতের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে মেলবন্ধন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক একীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। দিল্লি-ঢাকার একসাথে এগিয়ে যাওয়ার নিদর্শন হিসাবে দুই দেশের মধ্যেকার রেল ব্যবস্থা সূচনা, যা দুই দেশের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক আরও বাড়িয়ে তোলে। হাসিনা সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পতনের পরপরই ভারতের এইসব সুবিধাজনক জায়গাগুলিতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে।
advertisement
হাসিনা সরকার বরাবরই ভারত ও চিন, দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেছে। অবশ্যই চিনের সঙ্গে সেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভারতের অনুকূলেই সবসময় ছিল। বাংলাদেশে চিনের অনেক সফল প্রজেক্ট থাকার পরেও, ভারতের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে ঢাকা চিন সমর্থিত এবং রাজনৈতিক ভাবে উল্লেখযোগ্য সোনাদিয়া ডিপ-সি বন্দরের প্রজেক্ট বাতিল করে।
advertisement
চরম বিপর্যস্ত হাসিনা সরকার, ২০২৪ সালে ভারতের সাহায্যের জন্য পুরোপুরি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ তিস্তা ওয়াটার প্রজেক্টের জন্য চিনকে পাশ কাটিয়ে ভারতকে বেছে নেয়। নিরাপত্তার খাতিরে ভারতের বিরোধিতা সত্ত্বেও চিন যেই প্রজেক্টে টাকা ঢালতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। চলতি বছরে হাসিনার চিন সফরের পরপরই বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের ঠান্ডা সম্পর্কের সূত্রপাত। চিনের কাছে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হলে, চিন মাত্র ১ বিলিয়ন রেনমিনবি (১৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাংলাদেশকে দেয়। ফলে ক্ষুব্ধ হাসিনা তার চিন সফর সম্পূর্ণ না করেই ফিরে আসেন।
advertisement
বাংলাদেশে হওয়া এই গণঅভ্যুত্থান, ভারতের উপর চিনের আগ্রাসন অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরী করেছে। চিন বরাবরই আর্থিকভাবে শক্তিশালী একটি দেশ। বর্তমানে চিন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরী হয়েছে তা নিয়ে বেশ সজাগ। আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশের বিপুল আর্থিক সংকট এবং ভারত বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হওয়ার কারণে চিনের বেশ সুবিধা হয়েছে। বাংলাদেশে নতুন সরকারের কুর্শি দখল, চিনকে আরও আগ্রাসী বানানোর জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ভারতের পূর্বপ্রান্তেই নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকার ফলে দেশের পশ্চিম প্রান্তেও চিনের আগ্রাসন তৈরী হতে পারে। এরই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরেও তাদের আধিপত্য বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
advertisement
তেমনই গুরুত্বপূর্ণভাবে, চিনের সঙ্গে মলদ্বীপ হাত মেলানোর ফলে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত আরও কোণঠাসা হয়ে উঠবে সঙ্গে বৃহত্তর ভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতিতে চিনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলার জন্য ভারতের পক্ষে চাপেরও হবে। কিন্তু চিনের পক্ষেও পুরো সুবিধা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থা, বিকল্প রাজনৈতিক দলের অভাব, আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্ষমতা হ্রাস সঙ্গে গোটা দেশের দখল ছাত্রদের হাতে চলে যাওয়ায় চিনের পক্ষে গোটা বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার অত্যন্ত কঠিন হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে চিন ব্যবসা করার জন্য বেজিং সে দেশে এক স্থিতিশীল সরকার চায়, যারা তাঁদের দাবি দাওয়া রাখবে। প্রসঙ্গত আওয়ামী লীগের সরকারের সঙ্গে চিন সরকারের সম্পর্ক মোটের উপর ভালই ছিল। যার ফলে বাংলাদেশে চিন নিজেদের বিভিন্ন প্রজেক্ট শুরু করায় কোনও বাধার সম্মুখীন হয়নি। বাংলাদেশে ক্রমশ ইসলামিক আন্দোলনের পরিধি বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে সরকার গঠনে বড় ভূমিকা নেবে, যা চিনের পক্ষে অসুবিধার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বেজিংয়ের মন্ত্রণালয়ের পক্ষেও যা আশাজনক নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট আরও এক প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিনের কাছে। এর ফলে, বাংলাদেশকে চিনের থেকে বড় অঙ্কের লোন নিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক অভাব মেটালেও, সেই দেশের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ এক কাজ। সত্যি বলতে গেলে, বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা চিনকে সেই দেশে তাদের প্রজেক্টগুলি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে, যার ফলে চিনের ব্যবসাগুলিরও ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।
আমেরিকা বরাবর হাসিনা সরকারের অগণতান্ত্রিকতাকে বিরোধিতা করে ভারতের রোষের মুখে পড়েছে, যা চিনের প্রভাব বিস্তারে আরও এক বড় বাধা। ওয়াশিংটন বাংলাদেশের এই প্রতিবাদকে সমর্থন করেছিল এবং তারা বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার ফলে, বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। ঢাকাও আমেরিকার সাহায্য আশা করছে কারণ তাদের ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বিশ্ব ব্যাংকের থেকে বড় অঙ্কের ঋণ প্রয়োজন।
সমান্তরালভাবে ভারতও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে সেই দেশের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে আছে, ঢাকার সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক কতটা মজবুত হবে। আথির্ক ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের সাথে ভারতের কিছুটা বৈরিতার সম্পর্ক তৈরি হলেও, নয়াদিল্লি যদি ঢাকার সঙ্গে আগের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফিরে যায় তবে বাংলাদেশের উপর কব্জা তৈরী করতে বেজিংকে বেশ বেগে পড়তে হতে পারে।
বাংলাদেশের এখনকার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে আমেরিকার প্রভাব এবং ঢাকার জন্য ভারতের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, দুই দেশের পারস্পরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক পালাবদল সাধারণ চোখে দেখলে বেজিংয়ের অবস্থান কিছুটা ভাল জায়গায় নিয়ে যাবে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যারা ভাবছেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিন রাজনৈতিক ভাবে পুরোপুরি জিতে গেল, তাঁরা সর্বৈব ভুল! চিনের পুরোপুরিভাবে সফল হওয়া কখনই সম্ভব হবে না।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
September 13, 2024 12:37 PM IST